বগুড়ায় শিক্ষার্থীর মাকে পা ধরে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করার ঘটনায় তদন্ত শুরু

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ২৭ মার্চ ২০২৩ ২০:০০ ।
প্রধান খবর
পঠিত হয়েছে ৪৪ বার।

বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর মাকে পা ধরে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করার ঘটনায় তদন্ত শুরু হয়েছে। সোমবার সকাল থেকে তদন্তের কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(শিক্ষা ও আইসিটি) নিলুফা ইয়াসমিন। 

এদিকে, তদন্ত কমিটির কার্যদিবস শুরুর দিনে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা আবারও প্রতিষ্ঠানের সামনে জড়ো হওয়ার চেষ্টা করে। এসময় তারা প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খাতুনের অপসারণের দাবি জানান। জড়ো হওয়ার খবর পেয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নিলুফা ইয়াসমিন ঘটনাস্থলে যান। 

শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা বলেন, 'এক শিক্ষার্থীর মাকে পা ধরে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করার ঘটনায় সেই বিচারকের শাস্তিমূলক বদলি হয়েছে। কিন্তু সেদিনের সেই ঘটনায় প্রধানশিক্ষিকা রাবেয়া খাতুনও সমানভাবে দোষী। তিনি এখানে প্রায় ১৬ বছর ধরে  আছেন। তিনি এখানে একক আধিপত্য ও প্রভাব বিস্তার করেছেন। আমরা তার দ্রুত অপসারণ চাই।'

প্রধান শিক্ষিকা রাবেয়া খাতুন বলেন, 'ওই ঘটনায় তদন্ত চলছে। আমিও তদন্তের অধীনে। তাই কোন কথা বলতে চাই না।'

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নিলুফা ইয়াসমিন বলেন, 'সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর মাকে পা ধরে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করার ঘটনায় আমাকে প্রধান করে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে অন্য দুই সদস্য হলেন, বগুড়া সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফিরোজা পারভিন এবং জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারক হযরত আলী। আমরা আজ থেকেই তদন্তের কাজ শুরু করেছি। ১৫ কার্যাদিবসের মধ্যে আমরা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিব।' 

তিনি আরও বলেন, 'শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা আজকেও জড়ো হওয়ার চেষ্টা করেছিল। আমি পৌঁছে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেছি। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীরা শাস্তি পাবে এমন আশ্বাসে তারা বাড়ি ফিরে যায়।'

জেলা প্রশাসক মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, 'তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করে দিয়েছে। তদন্ত সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে বলে কঠোর নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।'

এর আগে সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর মাকে পা ধরে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করার অভিযোগে গত ২১ মার্চ বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায় শিক্ষার্থীরা।

তখন শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলে,  বিচারক রুবাইয়া ইয়াসমিনের মেয়ে বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে।  স্কুলের নিয়ম অনুযায়ী, সব শিক্ষার্থীর পালাক্রমে শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দেওয়ার কথা থাকলেও বিচারকের মেয়ে কখনোই ঝাড়ু দেয় না। বিষয়টি নিয়ে সহপাঠীদের সঙ্গে কথাকাটাকাটি হয় তার। গত সোমবার(২০ মার্চ) রাতে স্কুলের একটি ফেসবুক গ্রুপে সহপাঠীদের কটাক্ষ করে একটি পোস্ট লেখে বিচারকের মেয়ে। এতে কয়েকজন সহপাঠী প্রতিবাদ জানায়।

পরদিন সকালে স্কুলের অভিভাবক সমাবেশে এসে বিচারক তিন শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবককে শিক্ষকের মাধ্যমে ডেকে আনেন। ফেসবুকে তাকে ও তার মেয়েকে নিয়ে 'অপমানজনক কথা' বলা হয়েছে এমন দাবি করে সাইবার অপরাধের অভিযোগে মামলা করার হুমকি দেন তিনি। একপর্যায়ে এক শিক্ষার্থীর মাকে পা ধরে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করেন ওই বিচারক। সে সময় স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোছা. রাবেয়া খাতুন বিচারকের পক্ষ নিয়ে শিক্ষার্থীদের শাসান। এদিকে বিষয়টি জানাজানি হলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান অনেকে।

পা ধরে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করার অভিযোগ তুলে এর প্রতিবাদে স্কুলের সামনের রাস্তায় ঘটনার সম্মানজনক বিচার চেয়ে পরদিন বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায় শিক্ষার্থীরা। খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের আশ্বাস দেন। 

 এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ রুবাইয়া ইয়াসমিনকে প্রত্যাহার করে আইন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করা হয়।