সাহসী এবং প্রেরণাদায়ক বললেন বিশিষ্টজনরা

বগুড়া চেম্বার সভাপতি মিলনের অভিনব ঘোষণাঃ নিজের জন্য নয় আর কোন অর্জন, কাজ হবে মানুষের কল্যাণে

বিশেষ প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারী ২০২৪ ১০:২৬ ।
দেশের খবর
পঠিত হয়েছে ১১৩ বার।


বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’র সভাপতি মাসুদুর রহমান মিলন মানুষের কল্যাণে আরও বেশি করে কাজ করতে চান। চলতি বছর তিনি ২০০টি মানবকল্যাণমূলক কাজে অংশ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। এমনকি তিনি নিজের জন্য আর কোন কিছু অর্জন করতে চান না বলেও ঘোষণা দিয়েছেন। গত ১৪ জানুয়ারি নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লেখা পোস্টে নিজের এই আকাক্সক্ষার কথা জানিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘২০২৪ ইংরেজি বর্ষে যেন ২০০টি মানবকল্যাণমূলক কাজে অংশগ্রহণ করতে পারি। সৃষ্টিকর্তার কাছে এটিই প্রত্যাশা। সবাইকে ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা। আর নয় নিজের জন্য অর্জন..’

 


তরুণ ব্যবসায়ী মাসুদুর রহমান মিলনের অভিনব ওই ঘোষণা নিয়ে শহর জুড়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ তাঁর এই ঘোষণাকে ‘অত্যন্ত সাহসী’ এবং ‘প্রেরণাদায়ক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। বিশেষ করে নিজের জন্য আর কোন অর্জন না করার ঘোষণার মাধ্যমে তিনি সম্পদ সৃষ্টির প্রতিযোগিতায় শামিল না হওয়ার যে আকাক্সক্ষার কথা বলেছেন সেটিকেও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা খুবই ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে উল্লেখ করেছেন। তাদের আশা মাসুদুর রহমান মিলন যদি সত্যিকারভাবেই তাঁর ঘোষিত নীতি বাস্তবায়ন করতে পারেন তাহলে সেটি বগুড়ার সামাজিক উন্নয়নে যেমন ইতিবাচক ভূমিকা রাখাবে তেমনি অন্যদের জন্যও তা অনুসরণযোগ্য হয়ে উঠবে।

 


১৯৭৫ সালের ১২ মে জন্মগ্রহণকারী মাসুদুর রহমান মিলন স্কুলে পড়ালেখার সময় থেকেই ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। মাত্র ২১ বছর বয়সে তিনি আয়কর দেওয়া শুরু করেন এবং ২০০৩ সালে বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সদস্য হন। প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার মিলন ২০১০-২০১১ অর্থ বছরে জেলার সর্বোচ্চ করদাতার স্বীকৃতি অর্জন করেন। ঠিক তার পরের বছর ২০১২ সালে তিনি বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি নির্বাচিত হন। বর্তমানেও তিনি ওই দায়িত্বে রয়েছেন।

 


দীর্ঘদিন ধরে বগুড়া চেম্বারের নেতৃত্বদানকারী মাসুদুর রহমান মিলন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ‘ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’-এফবিসিসিআই-এর পরিচালক নিযুক্ত হয়েছেন। ঠিকাদারী ব্যবসার পাশাপাশি তথ্য প্রযুক্তি এবং আবাসন ব্যবসায় যুক্ত মিলনকে সরকার ২০১৯ সালে কমার্শিয়ালি ইমপর্টেন্ট পার্সন বা সিআইপি ঘোষণা করেন। ক্রীড়ানুরাগী মিলন বগুড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থায় দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বগুড়ায় তাঁর প্রয়াত পিতা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মমতাজ উদ্দিনের নামে একটি ফুটবল স্টেডিয়াম নির্মাণ করেছেন। এছাড়া বাবার নামে তিনি বগুড়া শহরের নিশিন্দারা উপ-শহর এলাকায় অবস্থিত বিয়াম ল্যাবটেরী স্কুলের জন্য পাঁচতলা বিশিষ্ট একটি একাডেমিক ভবনও নির্মাণ করে দিয়েছেন। মাসুদুর রহমান মিলন তার বাবার মৃত্যুর পর নিজেও রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের বগুড়া জেলা কমিটির কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন।

 


তরুণ ব্যবসায়ী মিলন দীর্ঘ ১৩ বছর জেলার শীর্ষ করদাতার অবস্থান ধরে রেখেছেন। সর্বশেষ ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে তিনি সাড়ে ৪ কোটি টাকারও বেশি আয়কর পরিশোধ করেছেন। তিনি বর্তমানে ৮৪ কোটি টাকার সম্পদের মালিক।

 


নতুন বছরে মানবকল্যাণমূলক ২০০টি কাজ করার পাশাপাশি নিজের জন্য আর কোন অর্জন না করার যে ঘোষণা মাসুদুর রহমান মিলন দিয়েছেন সে সম্পর্কে মতামত জানতে ৪ বিশিষ্টজনের সঙ্গে কথা বলেছে ‘পুণ্ড্রকথা’। তাদের মধ্যে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ বজলুল করিম বাহার তরুণ ব্যবসায়ী মিলনের ঘোষণাকে অভিনব উল্লেখ করে বলেছেন, ‘আমি শুনেছি মিলন নানাভাবে মানুষকে সহায়তা করে থাকেন। এবার তিনি মানব কল্যাণে কাজ করে যাওয়ার কথা প্রকাশ্যে বলার পাশাপাশি নিজে আর কিছু অর্জন করতে চান না বলেও ঘোষণা দিয়েছেন। তার দু’টি ঘোষণাই খুব অভিনব। তবে দ্বিতীয়টি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা কিছু অর্জন না করার ঘোষণার মাধ্যমে পক্ষান্তরে তিনি লোভ সংবরণ করার কথাই যেন বলেছেন। অর্থাৎ আরও চাই আরও চাই ধরণের যে মানসিকতা আমাদের মধ্যে তৈরি হয়েছে সেটি তিনি বর্জন করতে চান। যা খুবই ইতিবাচক। আমি মনে করি ব্যবসায়ী মিলন যদি তার ঘোষিত নীতির বাস্তবায়ন করতে পারেন তাহলে সেটি সামাজিক অবক্ষয় রোধে যেমন ভূমিকা রাখবে তেমনি সবার বিশেষত ব্যবসায়ীদের কাছে অনুসরণযোগ্যও হয়ে উঠবে।’ একই ধরনের মন্তব্য করেছেন বগুড়া প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি রেজাউল হাসান রানুও। তিনি বলেন, ‘মিলন দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে শীর্ষ করদাতা হিসেবে অনেক আগেই জেলাবাসীর দৃষ্টি কেড়েছেন। ব্যবসার মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ থেকে তিনি খেলাধুলা এবং শিক্ষার উন্নয়নে অনেক কাজ করেছেন। এবার তিনি নিজে থেকেই মানবকল্যাণে কাজ করে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এটি নিঃসন্দেহে একটি সাহসী উদ্যোগ। আমরা তাঁর এই উদ্যোগের সফলতা কামনা করছি।’

 


বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’র সভাপতি মাসুদুর রহমান মিলনের দেওয়া ঘোষণাকে সাহসী এবং অনুপ্রেরণাদায়ক হিসেবে মন্তব্য করেছেন বিআরটিসি শপিং কমপ্লেক্স ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি আসাদুল হক কাজল। তিনি বলেন, মাসুদুর রহমান মিলন চলতি বছর মানবকল্যাণ মূলক ২০০টি কাজ করার ঘোষণা দিয়েছেন। এটি খুবই সাহসী একটি উদ্যোগ। কারণ ওই ঘোষণার পর অনেকেই নানা প্রয়োজনে তাঁর সাহায্য প্রার্থী হবেন এবং বাস্তবতা হলো সবাইকে ফিরিয়ে দেওয়াও তার পক্ষে কঠিন হবে। যে কারণে আমরা ধারণা করছি তাকে ঘোষণার চেয়ে অনেক বেশি মানুষের পাশে দাঁড়াতে হতে পারে। অন্যদিকে তিনি আর নয় নিজের জন্য অর্জন বলে যে, ঘোষণা দিয়েছেন সেটিও খুব প্রেরণাদায়ক। কারণ আমরা এমন এক সমাজ তৈরি করেছি যেখানে একটি বাড়ি থাকলে আরেকটি চাই, দেশে থাকলে বিদেশে করতে চাই। সেই দিক থেকে মাসুদুর রহমান মিলন সাহেবের ওই ঘোষণা আমাদের জন্য সত্যিই প্রেরণাদায়ক। আমি মনে করি তিনি যদি এক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারেন তাহলে সেটি অনেকেই অনুসরণের চেষ্টা করবেন। আর তা হলে সেটি সামাজিক অস্থিরতা হ্রাস করতেও সাহায্য করবে।

 


ওই প্রসঙ্গে ব্যবসায়ী মিলনের সহপাঠী রয়্যাল সুইটস্-এর কর্ণধার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী বায়েজিদ শেখ পুণ্ড্রকথাকে বলেন, ‘আমাদের বন্ধু মিলন বরাবরই অন্যরকম। তিনি অনেক আগে থেকেই দরিদ্র এবং সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের উন্নয়নে কাজ করে আসছেন। করোনাকালে তিনি ১০ হাজার মানুষকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছেন। কর্মহীন হয়ে পড়া শতাধিক শিক্ষককে আর্থিকভাবে সহায়তা করেছেন। তিনি এবার আরও বড় আকারে মানবকল্যাণে কাজ করে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

 


ব্যবসায়ী বায়েজিদ শেখ বলেন, মিলন ইতিপূর্বে অনেক চ্যালেঞ্জ নিয়ে সফল হয়েছেন। তার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল, বগুড়ার কলকারখানায় উৎপাদিত পণ্যগুলো বিদেশে রপ্তানী বৃদ্ধি করা। সেখানে তিনি সফল হয়েছেন। তার উদ্যোগের কারণে বগুড়া থেকে এখন বছরে প্রায় ৬০০ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানী হচ্ছে। বগুড়ায় একটি ফুটবল স্টেডিয়ামের প্রয়োজনীয়তা ছিল সেটিও মিলন করে দেখিয়েছেন। এবার তিনি মানবকল্যাণে আরও বড় আকারে কাজ করে যাওয়ার যে ঘোষণা দিয়েছেন আমরা বিশ্বাস করি সেটিতেও তিনি সফল হবেন ইনশাআল্লাহ। আমরা মনে করি মিলন বগুড়ার ব্যবসাজগতে নতুন একটি ইতিহাস রচনা করবেন। তবে নিজের দেওয়া ঘোষণার বিষয়ে কোন কিছু বলতে রাজি হননি মাসুদুর রহমান মিলন। মন্তব্য জানতে চেয়ে ক্ষুদে বার্তা দিলে তিনি কোন উত্তরও দেননি।