নওগাঁয় পৌরসভার রাস্তা সংস্কার করে দিলেন ইউপি চেয়ারম্যান

নওগাঁ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ২০:১৩ ।
প্রতিবেশী জেলা
পঠিত হয়েছে ১১৮ বার।

ডিগ্রি মোড় থেকে শিবপুর নামক মোড় পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার রাস্তাটি নওগাঁ পৌরসভার। ছোট যুমনা নদী সংলগ্ন বাঁধের রাস্তাটির দুই পাশের বিভিন্ন জায়গায় ভাঙাচোরা। মাটি সরে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্তের। রাস্তার কার্পেটিং উঠে ইট-খোয়া বেরিয়ে এসেছে। এসব গর্তে গাড়ির চাকা পড়ে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। শুষ্ক মৌসুমে ধুলা ওড়ে আর সামান্য বৃষ্টি হলেই জলকাদায় পুরো সড়ক একাকার হয়ে যায়। সামনে আবার বর্ষাকাল। তাই দু:শ্চিন্তার মাত্রাটা এখন থেকেই বেশি।

নওগাঁ পৌরসভার বেহাল এই সড়ক দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে দুর্ভোগে পড়তে হয় সদর উপজেলার কয়েকটি গ্রামের মানুষকে। দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময় ধরে রাস্তাটি সংস্কার না করায় সমস্যা সমাধানে এগিয়ে এলেন বক্তারপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সরওয়ার কামাল চঞ্চল। ইউনিয়ন পরিষদের জন্য দেওয়া দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মসৃজন কর্মসূচি (৪০ দিনের) প্রকল্পের বরাদ্দের টাকা দিয়ে জনগুরুত্বপূর্ণ ওই রাস্তাটি সংস্কারে উদ্যোগ নিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান।  

মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় বক্তারপুর-ডিগ্রি কলেজ মোড় সড়কের বরুনকান্দি এলাকায় সড়কের পাশের জমি থেকে মাটি কেটে রাস্তার গর্ত ও খানাখন্দ ভরাট করেছে ৫০ জন শ্রমিক। বক্তারপুর ইউপি চেয়ারম্যান সরওয়ার কামাল চঞ্চল এবং ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম ও হারুন অর রশিদ প্রখর সূর্যতাপ উপেক্ষা করে সড়ক সংস্কারকাজ তদারকি করছেন।

এর আগে পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের এই রাস্তাটি বক্তারপুর ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে নওগাঁ পৌরসভার শিবপুর এলাকার আমতলীর মোড় থেকে কোমাইগাড়ী মলফেলার মোড় পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার রাস্তাটি গত সোমবার থেকে সংস্কারকাজ শুরু করা হয়েছে।

ইউনিয়ন পরিষদের জন্য দেওয়ার বরাদ্দের টাকা দিয়ে পৌরসভার রাস্তা সংস্কার করার বিষয়ে জানতে চাইলে বক্তারপুর ইউপি চেয়ারম্যান সরওয়ার কামাল চঞ্চল বলেন, ‘রাস্তাটি পৌরসভার মধ্য হলেও এই রাস্তা দিয়ে আমার ইউনিয়নের অন্তত ১৫টি গ্রামের মানুষ চলাচল করে। এছাড়া পাশ^বর্তী বদলগাছী উপজেলার বালুভরা, বিলাশবাড়ী ও কোলা ইউনিয়নের মানুষেরাও নওগাঁ শহরে আসা-যাওয়ার জন্য এই রাস্তা ব্যবহার করতে হয়। রাস্তাটি বেশ পুরনো। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। রাস্তার দুই পাশের মাটি সরে গিয়ে বিপদজনক পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে। প্রায়ই খাদে পড়ে গাড়ী রাস্তার পাশে খাদে ও নদীতে পড়ে যায়। পৌরসভা কর্তৃপক্ষ দীর্ঘ দিনেও রাস্তাটি সংস্কারে উদ্যোগ না নেওয়ায় ইউপি সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তাটি সংস্কারে আমি উদ্যোগ নিয়েছে। যেহেতু রাস্তাটি সংস্কার হলে সকল পথচারীদের সুবিধা হবে, তাই কেউ এই কাজের বিরোধীতা করেননি।’

মুরাদপুরের শ্রমিক নুরুল ইসলাম হেলাল, তিনি বেশ রসিকতা নিয়ে মনোযোগ সহকারে কাজ করছেন। একদিকে রাস্তা সংস্কার হচ্ছে, অন্যদিকে মজুরি পাচ্ছে। শ্রমিক ছানাউল্লাহ ক্ষোভ নিয়ে বলেন, আমিও নিজে এখানে এক্সিডেন্ট করেছি। এই কথা গিয়ে চেয়ারম্যান বলার পর, চেয়ারম্যান আমাদের নিয়ে এসে কাজ করে নিচ্ছে। এতে আমরা টাকাও পাচ্ছি। তাদের মতো শ্রমিক ইউসুফ মোল্লা, ফিরোজ, হেলেনাসহ অনেকেই জানালেন, তারা গতকাল থেকে কাজ করছে। আরও দু একদিন চলতে পারে। আমরা প্রতিদিন ৪শত টাকা মজুরি পাচ্ছি।

পৌরসভার বাসিন্দা মনোয়ারা ক্ষোভের সহিত বলেন, আমার বাড়ির সামনের এই রাস্তায় অনেক দূর্ঘটনা ঘটেছে। পৌরসভার কোনো মেম্বার নেই, চেয়ারম্যান নেই। তাই ইউনিয়ন পরিষদের লোকজন এসে কাজ করে দিচ্ছে।

 

একাধিক পথচারী বলেন, এই রাস্তাটি অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষ করে নদীর কোল ঘেঁষাতে হওয়ায় ঝুঁকির মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। আবার এই ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তা দিয়েই প্রতিনিয় আমাদের চলাচল করতে হচ্ছে। কিন্তু পৌরকর্তৃপক্ষের নেই কোনো ভ্রক্ষেপ। পৌরসভার রাস্তা হওয়া সত্তে¡ও ইউনিয়ন পরিষদ ঠিক করে দিলো। এটা একটা ভালো কাজ। পাশাপাশি পৌর কর্তৃপক্ষের শিক্ষা নেওয়া উচিত।

 

এ ব্যাপারে নওগাঁ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘নওগাঁ ডিগ্রি কলেজ মোড় থেকে আমতলী মোড় পর্যন্ত বাঁধের রাস্তা সংস্কারের জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। শিঘ্রই টেন্ডার আহবান করা হবে। ঠিকাদার নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষে চলতি বছরেই রাস্তা সংস্কারকাজ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’