জাজেস কোয়ার্টারে ব্যাপক ভাংচুর : ট্রেন চলাচল বন্ধ

বগুড়ায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে  পুলিশের দিনভর সংঘর্ষ: আহত ৮০

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ১৮ জুলাই ২০২৪ ১৯:৩৩ ।
দেশের খবর
পঠিত হয়েছে ৬০ বার।

 ‘কমপ্লিট শার্টডাউন’-এর সমর্থনে সমবেত হওয়া নিয়ে বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) কোটা বিরোধী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। সরকারি আজিজুল হক কলেজ (নতুন ভবন), শহরের ১নং রেলগেট, ২নং রেলগেট, ইয়াকুবিয়া স্কুল মোড়, প্রেসক্লাবের সামনেসহ বিভিন্ন স্থানে দিনভর চলা সংঘর্ষে পুলিশসহ অন্তত ৮০ জন আহত হয়েছে। 

 


আন্দোলনকারীরা বগুড়া শহরের সুত্রাপুরে জাজেস কোয়ার্টারে ঢুকে বিচারকদের বাসভবনে ব্যাপক ভাংচুর চালিয়েছে। সেখানে পুলিশের দুটি মোটর সাইকেলসহ মোট ৩টি মোটর সাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীর অবরোধের কারণে দূর পাল্লার যান চলাচল বন্ধ ছিল। আন্দোলনকারীদের অবরোধের কারণে দুপুর ১২টার পর থেকে বগুড়া রেলওয়ে স্টেশন কোন ট্রেন ছাড়তে কিংবা প্রবেশ করতে পারেনি। সন্ধ্যা ৭টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সান্তাহার থেকে ছেড়ে আসা পঞ্চগড়গামী আন্ত:নগর দোলনচাঁপা এক্সপ্রেস ট্রেন বগুড়া স্টেশনে আটকে ছিল। এছাড়া শহরের ভেতরে রোগী পরিবহনের অ্যাম্বুলেন্স, সাংবাদিক ও জরুরী প্রয়োজন ছাড়া কোন মোটর সাইকেলকেও চলাচল করতে দেওয়া হয়নি।

 


প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ‘কমপ্লিট শার্টডাউন’-এর সমর্থনে সকাল সাড়ে ১০টার পর থেকে বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরা শহরের জিরো পয়েন্ট সাতমাথার দিকে এগুতে থাকে। তাদের অধিকাংশের হাতে লাঠি ও ছিল ছিল। অপর একদল শিক্ষার্থী শহরের আজিজুল হক কলেজ নতুন ভবনে সমবেত হয়। খবর পেয়ে পুলিশ আজিজুল হক কলেজে অবস্থান নেওয়া শিক্ষার্থীদের ছত্রছঙ্গ করতে গেলে সংঘর্ষ বাধে। এ সময় পুলিশের পক্ষ থেকে শতাধিক টিয়ার শেল নিক্ষেপ করা হয়। পরে পুলিশ সেখান থেকে পিছু হটে জিরো পয়েন্ট সাতমাথার দিকে গেলে শিক্ষার্থীরাও তাদের পিছু পিছু অগ্রসর হতে থাকে। 

 


এদিকে শহরের ১নং রেলগেট, ২নং রেল গেট, ইয়াকুবিয়া স্কুলসহ বিভিন্ন দিক থেকে শত শত শিক্ষার্থী সাতমাথার দিকে যেতে থাকলে পুলিশ টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছুঁড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে শুরু করে। এ সময় শিক্ষার্থীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে বৃষ্টির মত ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। বেলা যত বাড়ে পুলিশের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের আক্রমণও তত বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে পুলিশ জিরো পয়েন্ট সাতমথার চারদিকে রীতিমত প্রতিরোধ ব্যুহ গড়ে তোলে। আর শিক্ষার্থীরা সেই ব্যুহ ভাঙার চেষ্টা চালাতে শুরু করে। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে দিনভর টিয়ার শেল আর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ চলে। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন প্রান্তে টিয়ার শেলের শব্দ পাওয়া যাচ্ছিল।

 


জাজেস কোয়ার্টারে হামলা
বগুড়ায় আদালতের ওমেদার হিসেবে কর্মরত হামিদুর রাজ্জাক হিরু জানান,  দুপুর ১২টার দিকে আন্দোলনকারীরা শহরের সুত্রাপুরে ইয়াকুবিয়া স্কুলের মোড়ের অবস্থান নেয়। এক পর্যায়ে তারা পাশের জাজেস কোয়ার্টারে প্রহরার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের দেখে তাদের ধাওয়া দেয়। ধাওয়া খেয়ে পুলিশ সদস্যরা জাজেস কোয়ার্টারের ভেতরে গেলে আন্দোলনকারীরাও পিছু নেয় এবং বিচারকদের ৬টি বাসভবনে ভাংচুর চালায়। ওই কোয়ার্টারে একজন জেলা জজ পদ মর্যাদার বিচারক এবং অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজসহ অন্তত ৬জন পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করেন।

 


 আন্দোলনকারীদের হামলার মুখে কোয়ার্টারের বাসাগুলোতে অবস্থানকারী বিচারাকদের স্ত্রী ও সন্তানরা প্রাণভয়ে বাথরুমে ও রান্নাঘরে আশ্রয় নেয়। আন্দোলনকারীরা জাজেস কোয়ার্টারে রাখা পুলিশের দুটি মোটর সাইকেলসহ ৩টি মোটর সাইকেল ভাংচুর করে। ভাংচুরের পর একজন সাংবাদিক কোয়ার্টারের ভেতরের পরিস্থিতি দেখতে গেলে একজন বিচারকের স্ত্রী বলেন, হামলাকারীরা তার বাসার কোন কিছুই বাদ রাখেনি। সবকিছুই ভাংচুর করেছে। তিনি বলেন, তার একমাত্র ছেলে খুব ভয় পেয়েছে। কোথাও একটু শব্দ হলেই সে ভয় পাচ্ছে। তিনি হামলাকারীদের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘আমার স্বামীসহ অন্য বিচারকরাক তো বিচার করেন। তাদের বাসায় কেন হামলা করা হলো? আর যারা হামলা করেছে তারা কি ছাত্র? তিনি ছাত্রদের দাবি দ্রæত মেনে নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানিয়ে করজোড়ো বলেন, ‘ছাত্রদের আন্দোলনে ধীরে ধীরে অনেকেই ঢুকে পড়ছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করবো আপনি বিষয়টি দ্রæত সমাধানের উদ্যোগ নিন।’

 


বগুড়া রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার সাজেদুর রহমান সাজু জানান, বগুড়ার ওপর দিয়ে ২৪ ঘন্টায় মোট ১৬টি ট্রেন যাতায়াত করে। তবে বৃহস্পতিবার স্টেশনের পূর্ব দিকে ১নং ও ২নং লেভেল ক্রসিংয়ে অবরোধ সৃষ্টির কারণে দুপুর ১২টার পর কোন ট্রেন বগুড়া স্টেশনে ঢুকতে কিংবা ছেড়ে যেতে পারেনি। তবে দুপুরে আগে লোকালসহ মোট ৪টি ট্রেন চলাচল করতে পেরেছে।

 


বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আব্দুল ওয়াদুদ জানান, ইট-পাটকেল,  রাবার বুলেট ও টিয়ার শেলের আঘাত নিয়ে ওই হাসপাতালে বৃহস্পতিার মোট ৫০ ভর্তি হয়েছেন। অন্যদিকে শহরের ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট মোহাম্মদ আলী হাসপাতালেও বেশ কয়েকজন ভর্তি হয়েছেন। বগুড়ার পুলিশ সুপার জাকির হাসান জানান, হামলায় পুলিশের ৯/১০জন সদস্য আহত হয়েছেন।