এলজিইডির কার্য-সহকারী আব্দুর রশিদ আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ

নওগাঁ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৯:৪৩ ।
প্রতিবেশী জেলা
পঠিত হয়েছে ১০ বার।

নওগাঁর মান্দায় এলজিইডি’র কার্য-সহকারী আব্দুর রশিদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বুনে গেছেন। নওগাঁয় ২০০১ সালে হতে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ১১২ টাকা দিন হাজিরায় চুক্তিভিত্তিক এলজিডি’র ল্যাব সহকারী ও পরবর্তীতে রাজস্ব খাতে স্থায়ীকরণের মাধ্যমে কার্য -সহকারী পদে ৯ হাজার ৩ শত টাকা বেতন স্কেলে চাকরি করে কিভাবে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছে তিনি। এযেন কাল্পনিক গল্পকথার আলাদিনের চেরাগ পেয়ে আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হওয়ার মত অবস্থা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, নওগাঁ শহরে (এলজিইডি অফিসের পাশে) প্লট কিনে তাতে গড়ে তুলেছেন প্রায় কোটি টাকা মূল্যের বহুতল বিশিষ্ট আলিশান ফ্ল্যাট, সদর ইউনিয়নের বুনিয়াপাড়ায় রয়েছে আরও একটি সীমানা প্রাচীর বেষ্টিত জমির প্লট, নিজ এলাকায় রয়েছে জমিসহ মার্কেট, চলাচলের জন্য একাধিক বিলাশবহুল গাড়ি, এছাড়াও নওগাঁর নিয়ামতপুরে কর্মরত থাকাবস্থায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা এক স্বামী পরিত্যক্ত নারীকে দ্বিতীয় বিয়ে করার পর সেই স্ত্রীর নামে-বেনামে করেছেন বহু সম্পদ। এছাড়াও উপজেলার ঠাকুর মান্দা বাজারে সবুজ বাংলা কৃষি উন্নয়ন সমবায় সমিতির শেয়ার পার্টনার বলে জানিয়েছেন তার ঘনিষ্ঠজনরা। এছাড়াও ওই এনজিও এক কর্মকর্তার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিনি জানিয়েছেন রশিদ স্যার এই এনজিওতে শেয়ার পাটনার হিসেবে যুক্ত আছেন। এছাড়াও সুরমা মাল্টিপারপাস নামে একটি এনজিওতে প্রায় পৌনে ১ কোটি টাকা জামানত রেখেছিলেন বর্তমানে সেই এনজিও লাপাত্তা হয়ে গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনজিও এর এক কর্মী জানান, এখানে আব্দুর রশিদ স্যার টাকা জমা রেখেছিলেন কিন্তু এনজিওটি পালিয়ে যাওয়ার কারণে ধরা খেয়েছেন তিনি। আব্দুর রশিদ কার্যসহকারী পদে ১৬তম গ্রেডে চাকরি করলেও তার এলাকায় তিনি পরিচয় দেন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে। অফিসে বসেন উপজেলা সহকারী প্রকৌশলীর ডেস্কের চেয়ারে। স্থানীয় এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক জানান, নওগাঁ জেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডির) এর ল্যাব সহকারী পদে চাকুরী করার সুবাদে সখ্যতা গড়ে ওঠে বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে। আওয়ামী দুঃশাসনের আমলে প্রভাব প্রতিপত্তি খাঁটিয়ে পছন্দের ঠিকাদার কে কাজ পাইয়ে দেওয়া, নিম্নমানের কাজ মোটা অংকের টাকা ঘুষ নিয়ে ল্যাব টেস্ট পার করে দেওয়া, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে শেয়ারে কাজ করা, বদলি- তদবির ও ঘুষ বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

আব্দুর রশিদ উপজেলার কশব ইউপি’র  কসব- ভোলাগাড়ি গ্রামের খোয়াজ মাঝির ছেলে। জমাজমি বলতে তেমন কিছু নেই তার বাবার। বসত ভিটে ছাড়া কোন কৃষি জমি নেই বললেই চলে। তার অন্য ৩ ভাইয়ের মধ্যে ২ জন ঢাকায় রিক্সা চালিয়ে সংসার পরিচালনা করেন। আর আরেকজন বিদেশ থেকে এসে বর্তমানে নিজ বাড়িতে অবস্থান করছেন। গত ২০১৩ সালে রাজস্ব খাতে ১৬ তম গ্রেডে তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী হিসেবে  এলজিইডিতে যোগদান করেন তিনি। এর পূর্বে নিয়ামতপুরে কর্মরত ছিলেন সেখানে রয়েছে তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ।

কথা হলে এলজিইডি’র কার্য-সহকারী আব্দুর রশিদ বলেন, ছোট পদে চাকুরী করার পরেও আমি একটু ভালো খাবার খাই, ভালো পোশাক-আশাক পড়ি এবং ভালো বাড়িতে বসবাস করি এটা কারো সহ্য হয়না। চাকুরীর সুবাদে অনেক আগে ২০১৪ সালে নওগাঁ শহরে জমি কিনে বাড়িটি নির্মাণ করা। প্লটটিও অনেক কম দামে কেনা। আর গাড়িটি নিজের ছিলো না, এক অফিসারের গাড়ি তিনি ব্যবহার করতেন। সেটি বিক্রি করে দিয়েছেন। নিজ এলাকায় মার্কেট নির্মাণ করার বিষয়টি স্বীকার করেন তিনি। তবে, এনজিওর শেয়ার পার্টনার এবং পৌনে এক কোটি টাকা আমানত রাখার বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি। তার দাবি যে,একটি কু-চক্রী মহল তার প্রতি ঈর্শ্বান্বীত হয়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে এসব প্রপাগান্ডা ছড়াচ্ছে।

এ ব্যাপারে সিপিবি কেন্দ্রীয় কমিটি’র কোষাধ্যক্ষ কমরেড ডাঃ এসএম ফজলুর রহমান বলেন, শুধু আব্দুর রশিদ না; যারা অবৈধভাবে এসব অর্থ উপার্জন করেছেন তাদের সকল সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার পর তা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সেই সাথে তাদের  বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার আহব্বান জানান তিনি।