বিদায় বেলায় আক্ষেপ নেই ইমরুলের, তার চোঁখে সেরা সাকিব-হাথুরু
পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
মাঠ থেকে বিদায়। একজন পেশাদার খেলোয়াড়ের কাছে পরম আরাধ্য একটি বিষয়। সোমবার (১৮ নভেম্বর) ইমরুল কায়েস লাল বলের ক্রিকেটে নিজের শেষ ম্যাচ খেলে মাঠ ছাড়েন। দেড় দশকের ক্যারিয়ারে জন্মস্থান মেহেরপুর থেকে ঢাকা, মাঝখানে রাজশাহী। তবে কলকাতা কিংবা সেন্ট ভিনসেন্টও ইমরুলকে দেখেছে। কারণ লাল-সবুজের প্রতিনিধি হয়ে ৩৯টি টেস্টও খেলেছেন তিনি।
শের-ই-বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে নিজের অটোবায়োগ্রাফিতে লেখা যায় এমন অনেক কিছুই জানালেন। চারদিনের ম্যাচকে বিদায় বললেও লিস্ট-এ ও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট চালিয়ে যাবেন বলেও জানান তিনি। এক্ষেত্রে অকপটে ইমরুলের সহজ স্বীকারোক্তি। তিনি বলেন, আমার ফিটনেস এখন যে পর্যায়ে আছে, তাতে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির জন্য নিজেকে টিকিয়ে রাখতে এবং আরও কয়েক বছর খেলা চালিয়ে যেতে পারব। চার দিনের ম্যাচ খেলার জন্য যে পরিমাণ শক্তি ও দৃঢ় মনোবল থাকতে হয়, তা এখন আর নেই। আমার মনে হয়েছে, আমি যদি নিজেকে তরুণদের সঙ্গে তুলনা করি এবং ওদের মতো ছন্দে (গতিশীল) খেলতে না পারি, তাহলে নিজেকে ছোট মনে হয় এবং লজ্জা লাগে। কিন্তু সংক্ষিপ্ত সংস্করণের ক্রিকেটে একদিনেই খেলা শেষ হয়ে যায়। এখানে ফুল এনার্জি দেয়া সম্ভব।
ইমরুল কায়েস আরও বলেন, আমি যখন বিসিবিকে আমার সিদ্ধান্তের কথা জানাই, তারা ব্যাপারটিকে ইতিবাচকভাবে নিয়েছে। আমাকে অনেকেই বলেছে, ভাই আপনি আরও ২ বছর খেলতে পারবেন। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে, আরও ২ বছর খেললে তারাই প্রশ্ন করতো, ভাই আপনি কবে খেলা ছাড়বেন? এই কথাগুলো শোনার চেয়ে নিজ থেকেই চলে যাওয়াটা ভালো মনে হয়েছে। সম্মান থাকা অবস্থাতেই সরে দাঁড়ানোর বোধশক্তি থাকাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। মূলত, কোথায় থামতে হয়, সেটি ভালো করেই জানেন ইমরুল।
ক্যারিয়ারটা আরেকটু বড় হতে পারত কিনা। এসব নিয়ে আক্ষেপ আছে কিনা ইমরুলের এমন প্রশ্নের জবাবে ইমরুল বলেন, ২০০৬ সালে যখন আমার প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক হয়, আমি চিন্তা করিনি যে বাংলাদেশ দলের হয়ে এতগুলো টেস্ট খেলতে পারব। আর সব শেষে এখন যেভাবে বিদায় নিলাম, আমি খুব খুশি যে বাংলাদেশের হয়ে ৩৯টি টেস্ট ম্যাচ খেলতে পেরেছি। এটা আমার জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি।
এছাড়া সংখ্যার চেয়ে দেশের প্রতিনিধিত্ব করাই ইমরুলের কাছে বড় জানিয়ে তিনি বলেন, এক টেস্ট হোক পঞ্চাশ টেস্ট বা একশ টেস্ট খেলেন, বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করাই বড়। প্রায় ১০-১২ বছর দলের সঙ্গে থেকেছি, খেলেছি বিভিন্ন জায়গায়, বিভিন্ন দেশে। এটা আমার জন্য অনেক গর্বের ছিল। আমি চেষ্টা করেছি ব্যাটিং করে হোক বা কিপিং করে হোক, দলের প্রয়োজনে অবদান রাখতে।
দেশের হয়ে তিন সংস্করণ মিলিয়ে ১৩১ ম্যাচ খেলা ইমরুলের চোখে সাকিব আল হাসান সেরা অধিনায়ক। সেরা উদ্বোধনী সঙ্গী তামিম ইকবাল। চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে কোচ হিসেবে পেয়েছিলেন ইমরুল। সে সময় হাথুরুসিংহের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছেন বলে জানান তিনি। এমনকি তাকে টেকনিক্যালি স্মার্ট কোচ বলেও মনে করেন জাতীয় দলের সাবেক এ ওপেনার।
২০১১ বিশ্বকাপে চট্টগ্রামে ইংল্যান্ডকে হারানোটা ক্যারিয়ারের স্মৃতিচারণে অন্যতম আনন্দের মুহূর্ত হিসেবে বর্ণনা করলেন ইমরুল। তার পরিবার এখন অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন। তিনিও বছরের বেশির ভাগ সময় অস্ট্রেলিয়ায় পরিবারের সঙ্গে থাকতে চান। সেখানে একটি ক্রিকেট একাডেমি গড়ে তোলারও ইচ্ছে আছে তার। ক্রিকেট-জ্ঞান বাড়াতে কাজ করতে চান অস্ট্রেলিয়ার কোচদের সঙ্গেও। এই সুযোগে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ দলের হয়ে কাজ করার ইচ্ছের কথাও জানিয়ে রাখলেন তিনি।
ক্যারিয়ারে আন্তর্জাতিক একটি ট্রফির আক্ষেপের কথাও জানিয়েছেন ইমরুল কায়েস। একটি এশিয়া কাপ কিংবা আইসিসির মেজর ট্রফি হয়ত দিনশেষে দারুণ একটি পূর্ণতা দিতো তাকে, সেটিও স্বীকার করলেন অবলীলায়।