বগুড়ায় কপির দাম বাড়তে শুরু করেছে: আলুতে উৎপাদন খরচ ও লাভ দুটোই বেড়েছে
স্টাফ রিপোর্টার
বগুড়ার সবচেয়ে বড় সবজির বাজার হিসেবে পরিচিত ‘মহাস্থান হাট’। বছর জুড়েই এখানে প্রতিদিন ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত শত শত মণ সবজির কেনা-বেচা চলে। এক সপ্তাহ আগ পর্যন্ত সেই মহাস্থান হাটের বড় একটি অংশের দখল নিয়েছিল শীতকালীন সবজি ‘ফুলকপি’। শত শত রিকশা-ভ্যানে তুলে আনা কৃষকদের ফুল কপিগুলো পাইকারি ক্রেতারা কেনার পর সেগুলো পুরো হাটজুড়ে বিছিয়ে রাখতেন। যা দেখে মহাস্থান হাটকে ফুলকপির বাগান বলেই মনে হতো।
তবে রবিবার সকালে ওই হাটে গিয়ে আগের মত ফুলকপির সেই উপস্থিতি চোখে পড়েনি। ফুলকপির জায়গা নিয়েছে মিষ্টি লাউ। হাটের পূর্ব দিকের একটি বড় অংশ জুড়ে পাইকারি ক্রেতারা মিষ্টি লাউ বিছিয়ে রেখে কেনা-বেচা করছেন। সবজি উৎপাদনকারী কৃষক, বিক্রেতা এবং আড়ৎদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একমাত্র ফুলকপি ছাড়া শীতকালীন অন্যান্য প্রতিটি সবজিতেই কৃষক মোটামুটি লাভবান হচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দু’দিন আগে থেকে মহাস্থান হাটে ফুলকপির আমদানি কমতে শুরু করেছে। কৃষকরা বলছেন, মৌসুম শেষ হওয়ায় ফুল কপির উৎপাদনও কমতে শুরু করেছে। ফলে বাজারে ফুলকপির সরবরাহও কমেছে। খুচরা এবং পাইকারি ক্রেতা- বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে সরবরাহ কমে যাওয়ায় বগুড়ায় এই মৌসুমে দামে ‘সবচেয়ে সস্তা’ হয়ে যাওয়া ফুলকপির দাম কিছুটা বাড়তে শুরু করেছে। মহাস্থান হাটে দুই দিন আগেও যে ফুলকপি ৮০ থেকে ১০০ টাকা মণ দরে কৃষক বিক্রি করেছেন সেই একই সবজি শুক্রবার সকালে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা মণ দরে (প্রতি কেজি ৬ টাকা ২৫ পয়সা থেকে ৭টাকা ৫০ পয়সা) বিক্রি হয়েছে। অথচ কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিটি ফুলকপি উৎপাদনে খরচ পড়েছে গড়ে ৮টাকা।
একই কারণে বাড়তে শুরু করেছে মূলার দামও। দু’দিন আগেও প্রতি মণ মূলা ২০০ থেকে ২৫০ টাকা দরে (প্রতি কেজি ৫টাকা থেকে ৬টাকা ২৫ পয়সা) বিক্রি হলেও শুক্রবার তার দাম ছিল ৩০০ টাকার ওপরে (প্রতি কেজি সাড়ে ৭টাকার বেশি)। মূলার উৎপাদন খরচ কিছুটা কম পড়েছে। প্রতি কেজি মূলা উৎপাদনে খরচ হয়েছে গড়ে ২টাকা করে। তবে আলুর দাম কিছুটা নিম্মমুখী। কিন্তু শিম ও বেগুনসহ অন্যান্য সবজির দাম অপরিবর্তি রয়েছে। আড়ৎ মালিকরা বলছেন, আগামীতে আলুর আমদানি বাড়বে। সে কারণে দাম হয়তো কিছুটা কমতে পারে। তবে অন্যান্য সবজির দাম ক্রমেই বাড়তে থাকবে।
শনিবার সকালে মহাস্থান হাটে কৃষক পাকরি জাতের আলু প্রতি মণ ১ হাজার ৫০০ টাকা (প্রতি কেজি ৩৭ টাকা ৫০ পয়সা) দরে বিক্রি হয়েছে। সাদা জাতের আলু বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৩০০ টাকা মণ (প্রতি কেজি ৩২ টাকা ৫০ পয়সা) দরে। ওই দুই জাতের আলুর মধ্যে আড়তে শুক্রবার পাকরি আলু কেনা- বেচা হয়েছে ১ হাজার ৬০০ টাকা আর সাদা জাতের আলুর দাম ছিল ১ হাজার ৪০০ টাকা মণ। সাদা জাতের আলু উৎপাদনে খরচ হয়েছে প্রতি কেজিতে ১৪ টাকা। আর প্রতি কেজি পাকরি জাতের আলু উৎপাদনে খরচ হয়েছে গড়ে ১৬ টাকা করে।
এদিন মহাস্থান হাটে কৃষক প্রতি পিস বাঁধা কপি (ছোট থেকে বড়) ৫ থেকে ৭ টাকায় বিক্রি করেছেন। প্রতি পিস বাঁধা কপিতে গড়ে খরচ হয়েছে ৪ টাকা। সেই একই সবজি আড়ৎ মালিকরা ঢাকাসহ অন্যান্য জেলার ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করেছেন ৮ থেকে ১২ টাকায়। কৃষকরা হাটে বিচিযুক্ত শিম বিক্রি করেছেন ১ হাজার ৩০০ টাকা মণ (প্রতি কেজি দরে ৩২ টাকা ৫০ পয়সা)। প্রতি কেজি বিচিযুক্ত শিম উৎপাদনে কৃষকদের খরচ হয়েছে ১০ টাকা। ওই একই শিম আড়তে কেনা- বেচা হয়েছে ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা দরে (প্রতি কেজি ৩৭ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ৪০ টাকা)। বিচি ছাড়া শিম কৃষক বিক্রি করেছেন ৯০০ থেকে এক হাজার টাকা মণ (প্রতি কেজি ২২টাকা ৫০ পয়সা) দরে। বিচি ছাড়া এক কেজি শিম উৎপাদনে কৃষকের খরচ হয়েছে ৬টাকা। আর আড়তে তা বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় (প্রতি কেজি ২৭ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ৩০ টাকা)।
একই দিন কৃষক বেগুন বিক্রি করেছেন জাত ভেদে ১০ থেকে ১৫ টাকা কেজিতে। যা আড়তগুলোতে কেনা-বেচা হয়েছে ৫০০ থেকে সাড়ে ৬০০ টাকা দরে। মহাস্থান হাটে কৃষক তাদের উৎপাদিত টমেটো (ছোট ও বড়) বিক্রি করেছেন ১২ টাকা থেকে ২০ টাকা কেজি দরে। আড়ৎ মালিকরা বড় সাইজের বাছাই করা টমোটো কেনা-বেচা করেছেন ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়।
বগুড়ার মহাস্থান এলাকার কৃষক আব্দুল হামিদ জানান, এবার অসময়ে বৃষ্টির কারণে ফুল কপি ও আলুসহ সব ধরনের সবজির উৎপাদন খরচ বেশি হয়েছে। কিন্তু সেই অনুযায়ী তারা দাম পাচ্ছেন না। বগুড়ার মহাস্থান হাটের পাইকারি আড়ৎদার সফুরা ভাণ্ডারের স্বত্বাধিকারী শফিকুল ইসলাম জানান, গত শীত মৌসুমের তুলনায় এবার ফুলকপিসহ সব ধরনের সবজির আবাদ বেশি হয়েছে। এমনকি যেসব জেলায় আগে আলু আবাদ হতো না সেই জেলাগুলোতেও সবজির আবাদ করা হচ্ছে। এতে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ বড় বড় জেলাগুলোতে অন্যান্য জেলা থেকে সবজির সরবরাহও আগের চেয়ে বেড়েছে। ফলে বগুড়ার সবজির চাহিদা কিছুটা কমেছে। আগে শীত মৌসুমে প্রতিদিন ৮/১০ ট্রাক সবজি পাঠানো হলেও এখন তা ৬/৭টিতে কমে এসেছে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ার কারণে কৃষক যেমন ক্ষতিগ্রস্ত তেমনি বড় বড় জেলায় বগুড়ার সবজির সরবরাহ কমে আসায় আমরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।