বগুড়ায় বিএনপির কর্মী সভায় খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা আব্দুস সালাম
জাতীয় ঐক্য এবং নির্বাচন দুটোই জরুরী : নির্বাচন পেছালে হাসিনার ফিরে আসার পথ প্রশস্থ হবে
স্টাফ রিপোর্টার
যারা নির্বাচন পেছাতে চান তারা শেখ হাসিনার ফিরে আসার পথ প্রশস্থ করতে চান কি’না এমন প্রশ্ন তুলেছন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম। সোমবার (৬ জানুয়ারি) বগুড়া জেলা বিএনপির কর্মী সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে স্বাগত বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘এখনও আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, নির্বাচন দীর্ঘায়িত করা যায় কি’না তার চেষ্টা হচ্ছে। কারণ অনেকে ভয় পায়। নির্বাচন তাড়াতাড়ি দিলেই বুঝি বিএনপি ক্ষমতায় চলে আসবে। আমি তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, ৩ মাস পরে দেন, ৬ মাস পরে দেন আর ৯ মাস পরেই দেন। সতের বছর ধরে আমরা আন্দোলন সংগ্রাম করছি। বিএনপিকে জনগণের কাছ থেকে কেউ হঠাতে পারেনি। কাজেই নির্বাচন যখনই আসবে বিএনপিই ক্ষমতায় আসবে। কেউ রোধ করতে পারবে না। ষড়যন্ত্র করে আর লাভ নেই। যারা নির্বাচন পেছাতে চান তারা শেখ হাসিনার ফিরে আসার পথ প্রশস্থ করতে চান।’
আব্দুস সালাম বলেন, যারা বিএনপিকে ভয় পায় তারা দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। বিএনপিকে তারাই ভয় পায় যারা এই দেশটাকে আধিপত্যবাদী শক্তির কাছে আবার ফিরায়ে দিতে চায়। অনেকে মনে করে বিএনপির বিরুদ্ধে বলে খুব বুঝি লাভ করছেন। তাদের মনে রাখা দরকার ৭৫-এর পরে এই দেশের মানুষ আওয়ামী লীগকে ভোট দেয় নি। আওয়ামী লীগকে তারা ক্ষমতায় আনে নি। বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ এসেছিল এবং ওই সমস্ত ষড়যন্ত্রের মধ্যে কিছু কিছু বিরোধী দলও জড়িত ছিল। এখনও গণতন্ত্র আমরা ফিরে পাইনি। এখনও আধিপত্যবাদী শক্তির প্রধান (শেখ হাসিনা) ওই ভারতে বসে বার বার হুমকি দিচ্ছে।
বগুড়া জেলা বিএনপির সভাতি রেজাউল করিম বাদশার সভাপতিত্বে শহরের নওয়বাড়ি সড়কে টিএমএসএস মহিলা মার্কেটের একটি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত কর্মী সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তৃতা করেন, দলটির রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন শওকত। অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ওবায়দুর রহমান চন্দন, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাবেক সংসদ সদস্য কাজী রফিকুল ইসলাম, আলী আজগর তালুকদার হেনা, বগুড়া জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সাবেক সংসদ সদস্য মোশারফ হোসেন। কর্মীসভা সঞ্চালনা করেন বগুড়া জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদুন্নবী সালাম। কর্মী সভায় দলের ২৪টি সাংগঠনিক ইউনিটের নেতৃবৃন্দের বক্তব্য শোনা হবে।
কর্মী সভায় আব্দুস সালাম বলেন, বিএনপি জাতীয় ঐক্যে বিশ^াসী। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ এই দেশটাকে শ্মশান বানিয়ে ফেলেছে। ঐক্য ছাড়া এই দেশকে কোনভাবেই গড়ে তোলা যাবে না। সে কারণে আমরা ঐক্যের কথা বলছি। কিন্তু অনেকে মনে করেন যে, বিএনপি দুর্বল বলেই ঐক্যের কথা বলছে। না বিএনপি দুর্বল নয়। যদি ঐক্য যদি ফাটল ধরানো হয় তাহলে এই আধিপত্যবাদী শক্তির পক্ষে যারা আছেন তারা লাভবান হবে। দেশ লাভবান হবে না, ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
মুকিযুদ্ধে জিয়াউর রহমানের অবদানের কথা উল্লেখ করে আব্দুস সালাম বলেন, একাত্তরের ২৫ মার্চ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা পালিয়েছিল। স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার কেউ ছিল না। তখন এই জিয়াউর রহমানের আবির্ভাব হয়েছিল। তিনিই ঘোষণা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। যুদ্ধের পর আবার ব্যারাকে ফিরে গিয়েছিলেন। কিন্তু দেশের প্রয়োজনে, যখন দেশ চলছিল না। সেনাবাহিনীর মধ্যে ক্যু পাল্টা ক্যু হচ্ছিল। পুলিশের কোন অবস্থাই ছিল না। কোন শিক্ষাঙ্গণে পড়াশোনা ছিল না, কোন ব্যবসা-বাণিজ্য ছিল না সব জায়গায় দুর্নীতি, ব্যাংক লুট রিলিফ লুট, কম্বল চুরি এবং মানুষ না খেয়ে মারা যাচ্ছিল। ঠিক সেই সময় আবার সিপাহী জনতা ঐক্যবদ্ধভাবে জিয়াউর রহমানকে রাষ্ট্রের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। জিয়াউর রহমান জোর করে আসেন নাই, ক্যু করে আসেন নাই মার্শাল ল’ দিয়েও আসেন নাই।
বিএনপি নামক রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্দেশ্য বর্ণনা করতে গিয়ে দলটির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম বলেন, জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার আগে সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ছিল। আওয়ামী লীগও নিষিদ্ধ ছিল। পত্র-পত্রিকা বন্ধ ছিল। সেগুলো তিনি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি তো আওয়ামী লীগকে রাজনীতি করার অধিকার দিয়েছেন। কিন্তু তার পরেও তিনি জানতেন আওয়ামী লীগ যতদিন থাকবে ততদিন ঐ আধিপত্যবাদী শক্তির পক্ষে তারা সব সময় কাজ করে যাবে। তাই তার বিপরীতে একটি রাজনৈতিক দল দরকার। তাই তিনি বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন দেশকে রক্ষা করার জন্য। যে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিয়েছিলেন যে স্বাধীনতা রক্ষা করেছিলেন সেটিকে ধরে রাখতেই বিএনপি গঠন করেছিলেন। তার পর থেকে যখনই বাংলাদেশে দুর্যোাগ এসেছে, গণতন্ত্র হুমকির সম্মুখীন হয়েছে তখনই কিন্তু বিএনপি বার বার দাঁড়িয়েছে জনগণের পাশে।
বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতি দুই ভাগে বিভক্ত। একটি হলো আধিপত্যবাদী শক্তির পক্ষে। যার পক্ষে আওয়ামীলীগসহ তার মিত্ররা। আর একটি হলো জাতীয়তাবাদী শক্তি যার সঙ্গে বিএনপির পক্ষে যারা আছে। এর মাঝামাঝি কিছু নাই। এর মাঝামাঝি যদি কিছু করতে চান তাহলে আধিপত্যবাদী শক্তিকেই লাভবান করা হবে। একবার চিন্তা করে দেখেন সেদিকে যাবেন কি’না? নাকি জাতীয়তাবাদী শক্তির পক্ষে থাকবেন। পরিষ্কার কথা। দেশকে যদি বাঁচাতে হয়, দেশের মানুষকে যদি বাঁচাতে হয়, আমার শিল্প কলকারখানাকে যদি বাঁচাতে হয় তাহলে বিএনপি ছাড়া কোন বিকল্প নাই। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ছাড়া কোন বিকল্প নাই। আর খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান জাতীয় ঐক্যে বিশ^াস করেন।