কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আদালতকে যে আকুতি জানালেন সাংবাদিক ফারজানা রুপা

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ২৭ জানুয়ারী ২০২৫ ১৯:২১ ।
দেশের খবর
পঠিত হয়েছে ১৯ বার।

স্বামীসহ পাঁচমাস ধরে কারাগারে বন্দি সাংবাদিক ফারজানা রূপা আদালতে দাঁড়িয়ে তার শিশুকন্যার কথা বিচারককে বললেন, সন্তানের জন্য হলেও স্বাভাবিক জীবনে ফেরার প্রত্যাশা নিয়ে চাইলেন জামিন।

অবশ্য তার সেই আর্জিতে সাড়া দেননি ঢাকার মহানগর হাকিম সাইফুজ্জামান। রূপা ও তার স্বামী শাকিল আহমেদকে মিরপুর থানার এক হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেফতার দেখানোর আদেশ দিয়েছেন তিনি।

ফারজানা রূপা একাত্তর টেলিভিশনের (বেসরকারি টেলিভিশন) সাবেক প্রিন্সিপাল করেসপনডেন্ট। আর শাকিল একই টেলিভিশনের সাবেক হেড অব নিউজ। 

ক্ষমতার পালাবদলের পর দেশ ছাড়ার চেষ্টার সময় ২১ আগস্ট ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। পরে আদাবর থানার এক হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে দুই দফা রিমান্ডে নিয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। 

নতুন মামলায় গ্রেফতার দেখানোর জন্য সোমবার সকালে কাশিমপুর কারাগার থেকে ঢাকার হাকিম আদালতের গারদখানায় এনে রাখা হয় ফারজানা রূপাকে। আর শাকিল আহমেদকে আনা হয় কেরানিগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে।

কিছুক্ষণ পর মহানগর হাকিম সাইফুজ্জামানের আদালতে হাজির করতে প্রস্তুত করা হয় রূপাকে। হাতে হাত কড়া, গায়ে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ও মাথায় হেলমেট পরানো হয় তাকে।

এরপর রূপাকে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, দেশ টিভির ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আরিফ হাসানের সঙ্গে এজলাসে তোলা হয়।

এজলাসে উঠে কাঠগড়ায় ঢোকার পর স্বামী শাকিল আহমেদকে খুঁজতে থাকেন রূপা। মিনিট পনের পর সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও রাশেদ খান মেননের সঙ্গে হাজতখানা থেকে সাংবাদিক শাকিলকেও এজলাসে তোলা হয়।

শাকিল কাঠগড়ায় উঠতেই আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন রূপা। এই দম্পতি নিজেদের মধ্যে আলাপ করতে থাকেন। কখনো কানে কানে, কখনো হাসি মুখে তাদের গল্প করতে দেখা যায়। কাঠগড়ায় যতক্ষণ ছিলেন, নিজেদের মধ্যে তারা কথা বলছিলেন।

কিছুক্ষণ পর মিরপুর থানার এ মামলায় শাকিল ও রূপাকে গ্রেফতার দেখানোর আবেদনের শুনানি শুরু হয়। এ সময় রূপা আদালতের কাছে কথা বলার অনুমতি চান।

বিচারক তাকে ‘আইনের ভেতরে থেকে’ কথা বলতে অনুমতি দেন। অনুমতি পেয়ে রূপা কাঠগড়ার সামনের দিকে এসে বলেন, ‘আমার ছোট্ট শিশু সন্তান আছে। আমি আর আমার স্বামী দুইজনই কারাগারে। ৬ মাস হয়ে গেছে। আমাকে জামিন দিন। আমরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাই।’

শুনানি শেষে আদালত রূপা ও শাকিলের আবেদন নামঞ্জুর করে তাদের মিরপুরের মামলায় গ্রেফতার দেখানোর আদেশ দেন। এ সময় রূপা ও শাকিল দুজনকেই বিমর্ষ দেখাচ্ছিল। সাংবাদিকরা কথা বলার চেষ্টা করলে শাকিল বলেন, ‘কথা বলতে মানা। মুখ বন্ধ আমাদের।’

এরপর অন্য মন্ত্রী-এমপি আসামিদের মতো রূপা ও শাকিলকেও কড়া পুলিশি নিরাপত্তায় হাজতখানায় নিয়ে যাওয়া হয়।

প্রবল গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার পতনের পর গত ১০ আগস্ট জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদককে একটি চিঠি পাঠায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

তাতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সদস্য ৫০ জন সাংবাদিকের একটি তালিকা দিয়ে বলা হয়, এসব সাংবাদিক প্রতিনিয়ত পুলিশ ও আওয়ামী লীগকে মদদ এবং উসকানি দিয়েছেন। এভাবে তারা ছাত্রদের বিরুদ্ধে ‘মানবতাবিরোধী’ অপরাধে জড়িত ছিলেন। ওই তালিকায় শাকিল ও রূপার নামও ছিল। ওই তালিকা প্রকাশের আগেই গত ৮ আগস্ট শাকিল ও রূপাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয় একাত্তর টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ।