নওগাঁয় সবকটি নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত;নিম্ন অঞ্চল প্লাবিতঃ প্রায় ৩ হাজার বিঘা আমন ধান নিমজ্জিত

নওগাঁ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৩ অগাস্ট ২০২৫ ১৮:৩৫ ।
প্রতিবেশী জেলা
পঠিত হয়েছে বার।

দেশের শষ্য ভান্ডার হিসাবে খ্যাত নওগাঁর সবকটি নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বিপদ সীমার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হলেও টানা বর্ষণে ও ভারত থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে ইতিমধ্যেই নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে করে জেলার বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। বিশেষ করে নওগাঁর আত্রাই ও রানীনগর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমির রোপণকৃত আমন ধানসহ বিভিন্ন ফসল পানির নিচে ডুবে গেছে, এতে ক্ষতির আশংকা করছেন কৃষকরা। 

এদিকে স্থানীয় কৃষকদের মতে, বৃষ্টিপাত থেমে গিয়ে দ্রুত পানি নেমে গেলে কিছুটা ক্ষতি এড়ানো যেত। তবে বর্তমানে পানি কমে যাওয়ার কোনো লক্ষণ নেই, বরং বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে তারা আশংকা প্রকাশ করেছেন। 

তবে স্থানীয় কৃষি বিভাগের দাবী বিলের তলার জমি গুলো কিছুটা ডুবেছে। সেটা হিসাবের মত নয়। কারন আমন ধান রোপনে এখনো এক মাস সময় আছে।

নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে জেলার নদ-নদীর পানি সকল পয়েন্টের পানি সমতল থেকে বিপদসীমার নীচে রয়েছে। তবে টানা বর্ষণ ও ঢলের পানিতে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। আজ বুধবার বিকেল ৩ টার পানি বৃদ্ধির রেকর্ড অনযায়ী গত ২৪ ঘন্টায় নওগাঁ শহরের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত ছোট যমুনা নদীর লিটন ব্রীজ পয়েন্টে বৃদ্ধি পেয়েছে  ০৯ সেন্টিমিটার, আত্রাই নদীর শিমুলতলী পয়েন্টে বৃদ্ধি পেয়েছে ৪৬ সেন্টিমিটার। একই নদী মহাদেবপুর পয়েন্টে  বৃদ্ধি পেয়েছে ১২ সেন্টিমিটার ও আত্রাই নদীর রেলওয়ে ব্রিজ পয়েন্টে পানি সমতল থেকে কমেছে ০৫ সেন্টিমিটার।

এদিকে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্রে জানা গেছে জেলায় চলতি রোপা- আমন মৌসুমে ১ লাখ ৯৬ হাজার ১৯৫ হেক্টর জমিতে ধান রোপনের লক্ষমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রায় ৮০ ভাগ ধান চাষ সম্পন্ন হয়েছে।

টানা বর্ষণ ও উত্তরের ঢলের পানিতে নদ নদীর পানি বৃদ্ধির পাশাপাশি বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠও প্লাবিত হয়েছে। বিশেষ করে জেলার আত্রাই উপজেলা বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ এখন পানির নিচে। 

ওই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রসেনজিৎ তালুকদার জানান, এ মৌসুমে আত্রাইয়ে ৬ হাজার ৪৯৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে মনিয়ারী, বিশা, সাহাগোলা, ভোঁপাড়া ও কালিকাপুর ইউনিয়নের অনেক মাঠই প্লাবিত হয়েছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত প্রায় ৩ হাজার বিঘা জমির আমন ধানসহ বিভিন্ন ফসল পানিতে নিমজ্জিত।

ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতির বর্ণনা দিয়ে মনিয়ারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সম্রাট হোসেন বলেন, তিনি নিজে প্রায় ৯০ বিঘা জমিতে আমন চাষ করেছিলেন, যার সবগুলোই পানিতে ডুবে গেছে। এতে তার প্রায় ৬ লাখ টাকার ক্ষতির আশঙ্কা করছেন। 

মনিয়ারী গ্রামের কৃষক আব্দুল আলিম বলেন, “বর্গা নিয়ে চাষ করেছি। এবার ১০ বিঘা জমিতে ধান রোপণ করেছিলাম। এখন সব পানির নিচে। প্রায় ৬০ হাজার টাকার লোকসান হয়েছে। সরকারের কাছে আমরা পুনর্বাসনের দাবি জানাই।

সাহেবগঞ্জের কৃষক মুজাম অভিযোগ করেন, “কিছু জায়গায় কালভার্ট বন্ধ থাকায় পানি নামতে পারছে না। ফলে অনেক কৃষক সমস্যায় পড়েছেন, অথচ এ নিয়ে কেউ কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না।”

মির্জাপুর গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম জানান, “৫ বিঘা জমিতে ধান রোপণ করেছিলাম। যত্ন করে সার-ওষুধ দিয়েছি, ধানও ভালো হয়েছিল। কিন্তু নদীর পানি বেড়ে সব ডুবে গেছে।

এদিকে নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার পাল বলেন, একটানা ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে উত্তরের উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে নদ-নদীতে বৃদ্ধি পাচ্ছে।  যদি আর বৃষ্টিপাত না হয় তাহলে ২/১ দিনের মধ্যে পানি কমা শুরু হবে। আর যদি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকে তাহলে নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। 

নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর উপপরিচালক কৃষিবিদ আবুল কালাম আজাদ জানান, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হলেও ধানের তেমন ক্ষতি হবে না। আমন চাষাবাদে এখনো একমাস সময় হাতে রয়েছে। এর আগেই নদ নদীর পানি কমে যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।