বগুড়ায় ‘ব্যাটার বউ’ খালেদা জিয়াকে হারিয়ে স্তব্ধ জেলা, কাঁদলেন নেতাকর্মীরা
স্টাফ রিপোর্টার
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বগুড়াজুড়ে নেমে এসেছে গভীর শোক। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত গাবতলী উপজেলার বাগবাড়ি ও বাঘবাড়ি এলাকাসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে শোকাহত মানুষের ভিড় দেখা গেছে। তাঁর আত্মার মাগফেরাত কামনায় গাবতলীর বাগবাড়িতে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
বগুড়ার পুত্রবধূ হিসেবে খালেদা জিয়ার সঙ্গে জেলার মানুষের সম্পর্ক ছিল ঘরোয়া ও আত্মিক। দিনাজপুরের মেয়ে খালেদা খানম ১৯৬০ সালে বগুড়ার গাবতলীর বাঘবাড়ি গ্রামে পুত্রবধূ হিসেবে আসেন। তখন তাঁর স্বামী জিয়াউর রহমান পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন ক্যাপ্টেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় ও পরবর্তী রাজনৈতিক জীবনে তিনি সংসার ও সন্তানদের দায়িত্ব সামলানো একজন গৃহবধূ হিসেবেই ছিলেন দীর্ঘদিন।
১৯৮১ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর দেশের রাজনৈতিক সংকটময় সময়ে বিএনপির নেতৃত্বের দায়িত্ব নেন খালেদা জিয়া। দল সংগঠিত করা এবং স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে আশির দশকেই তিনি জাতীয় রাজনীতিতে নিজের অবস্থান দৃঢ় করেন।
১৯৯১ সালে বগুড়া থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন তিনি। পরবর্তীতে আরও দুই মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ১৯৯১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত বগুড়ার বিভিন্ন আসন থেকে যতবার নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন, প্রতিবারই বিপুল ভোটে জয়ী হন। স্থানীয়দের কাছে তিনি পরিচিত ছিলেন আদরের নাম ‘ব্যাটার বউ’ হিসেবে। বগুড়ার মানুষ তাকে নিজেদের গর্ব বলেই মনে করতেন।
মঙ্গলবার সকালে জেলা বিএনপির কার্যালয়সহ বিভিন্ন এলাকায় নেতাকর্মীদের কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা যায়। তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র রেজাউল করিম বাদশা এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন।
জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কেবল আমাদের নেত্রী ছিলেন না, তিনি ছিলেন আমাদের মায়ের মতো। বগুড়ার মানুষের সঙ্গে তার আত্মার সম্পর্ক। তার মৃত্যুতে আমরা সত্যিকার অর্থেই এতিম হয়ে গেলাম। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে তার আপসহীন নেতৃত্ব ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।”
ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন বলেন, “ম্যাডাম অসুস্থ অবস্থায়ও দলের ও দেশের মানুষের খোঁজ নিতেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য আমরা বারবার দাবি জানিয়েছি। কিন্তু সুচিকিৎসার সুযোগ না দিয়েই তাকে চলে যেতে হলো। এই অপূরণীয় ক্ষতি কোনোদিন পূরণ হওয়ার নয়।”
মঙ্গলবার সকাল থেকেই শহরের নওয়াববাড়ি রোডস্থ জেলা বিএনপি কার্যালয়ে নেতাকর্মীদের ভিড় বাড়তে থাকে। অনেককেই কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা যায়। জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মরহুমার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনায় আজ শহরের বায়তুর রহমান সেন্ট্রাল মসজিদে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে।