চাঁপাইনবাবগঞ্জের মুঘল তাহাখানা

সাজিয়া আফরিন সোমা
প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০২২ ২২:৩০ ।
ভ্রমণ
পঠিত হয়েছে ৬৩ বার।

মুঘল আমলে নির্মিত একটি স্থাপত্য তাহাখানা। জানা যায় শাহ্ সূজার সময় নির্মিত হয় এই স্থাপত্যটি। শাহ্ সূজার 'তাহাখানা'কে একটি প্রাসাদ বলা যায়। মুঘল সম্রাট শাহজাহানের পু্ত্র শাহ্ সূজা বাংলার সুবাদার থাকাকালে তাপনিয়ন্ত্রিত ইমারত হিসেবে তাহাখানা নির্মাণ করেন।

 

বিশাল পুকুরের উপরে নির্মিত এই তাহাখানাটি দেখতে অপূর্ব সুন্দর। ভবনের বারান্দায় দাড়িয়ে পুকুর আর চারপাশের অপরূপ দৃশ্য দেখা যায়। ভবনের পাশ দিয়ে বিশাল বাঁধানো সিঁড়ি নেমে গেছে পুকুরে। তাহাখানা অর্থ শীতল ভবন। ভবনটি এমন করে নির্মিত যেনো গরমকালেও  সব সময় সেটি ঠান্ডা থাকে। এই কারণেই হয়তবা তাহাখানা পুকুরের উপর বিশেষ ভাবে নির্মান করা হয়েছে। দ্বিতল ভবনের একদম নিচের অংশটি রয়েছে মাটির নিচে যার বারান্দায় দাঁড়িয়ে পুকুরের পানি ছোঁয়া যায়। তবে নির্মাণশৈলী এতোটাই  সুন্দর যে দর্শনার্থীদের মন ছুঁয়ে যাবে। দেখভালের দায়িত্বে যিনি আছেন তার কাছে জানা যায় মাঝে মাঝে শাহ সূজাও এখানে এসে বসবাস করতেন আর তখন ভবনের একেবারে নিচের তলায় যেটি মাটির নিচে অবস্থিত সেখানে শাহ্ সূজার পাহারায় নিয়োজিতরা বিশ্রাম নিতেন । ভেতরে রয়েছে একটি অন্ধকার কূপ। কালের বিবর্তনে কূপটি তার আসল চেহারা হারিয়েছে,সাথে অজানা রয়ে গেছে কূপের ইতিহাসও। 

 

নিচের অংশটি বহুদিন পর্যন্ত মাটির নিচে থাকার পর,  পরবর্তীতে খননের ফলে সেটি বেরিয়ে আসে। দ্বিতীয় তলার কক্ষ আর তার বারান্দা থেকেও একই ভাবে বিশাল পুকুর আর সামনের সুন্দর দৃশ্য চোখে পড়বে। ভবনের একপাশে রয়েছে একটি বিশেষ কক্ষ যেখান থেকে চুল্লির মাধ্যমে শীতকালে পুরো ভবনের মেঝে উষ্ণ রাখা হতো। এতে পুরো ভবনটিই শীতকালে উষ্ণ থাকতো। রয়েছে ইটের তৈরি একটি বিশেষ বাথটাব। যেটির পানি শীতকালে গরম আর গরম কালে ঠান্ডা রাখার ব্যবস্থা ছিলো। ভবনের সামনে ছিলো ফুয়ারা,এখন সেটি না থাকলেও রয়েছে তার চিহ্ন। ভবনের পাশেই রয়েছে একটি বিশাল মসজিদ।এখনও মুসল্লিরা নিয়মিত নামাজ আদায় করেন সেখানে। মসজিদের সামনে দিয়ে আরও একটি বড় বাঁধানো সিঁড়ি পুকুরে নেমে গেছে। মসজিদের পাশে রয়েছে আরও একটি স্থাপনা,উঁচু পাচিলে ঘেরা। যার ভেতর রয়েছে সারি সারি ছোট বড় অনেক কবর। কয়েকটি কবর একটু উচু আর বড়,আর বেশীরভাগ  কবর ছোট। কবরগুলো কাদের বা কোন সময়ের সেটা জানার কোন সুযোগ নেই। কোথাও উল্লেখ ছিলো না।  তবে কবরগুলো মুঘল আমলের বলেই ধারনা করা হয়। কারণ একই রকম অনেকগুলো কবর সোনা মসজিদের সমানেও রয়েছে। যে স্থাপনার ভেতর সারি সারি কবরগুলো আছে,সেখানে রয়েছে নানান রকম ফুলের বাগান আর বাড় বড় পুরানো অনেক গাছ। সেই ফুলগাছগুলোর দেখভাল করার জন্য রয়েছেন যিনি,তার যত্নের ছোঁয়া পাওয়া যাবে স্থাপনার ভেতর প্রবেশের সাথে সাথেই। হাজারো পাখির কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে আছে সেই সমাধিগুলো। বহু পুরানো বড় বড় গাছগুলো শুধু কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আর তাহাখানার চারপাশে এখনও ছড়িয়ে রয়েছে আরও না জানা অনেক গল্প অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন।  

 

তাহাখানার অবস্থান- চাঁপাইনবাবগঞ্জ উপজেলার শাহাবাজপুর ইউনিয়নে ঐতিহ্যবাহী তোহাখানা কমপ্লেক্স বা তাহাখানা অবস্থিত। পাশেই রয়েছে সোনা মসজিদ।