২৫ নভেম্বর ভোট গ্রহণ

বগুড়া আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে আ’লীগপন্থীদের বিভেদের সুবিধা নিচ্ছে বিএনপি সমর্থিত প্যানেল

বিশেষ প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৪ নভেম্বর ২০২২ ১৭:০৭ ।
দেশের খবর
পঠিত হয়েছে ৬৩ বার।



বগুড়া জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন ২৫ নভেম্বর শুক্রবার। সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে। ভোটার সংখ্যার দিক থেকে উত্তরাঞ্চলে আইনজীবীদের সবচেয়ে বড় এই সংগঠনের নির্বাচনকে ঘিরে এরই মধ্যে বগুড়ার আদালতপাড়ায় উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়েছে। প্রতি বছর নভেম্বরের শেষ শুক্রবার অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনকে ঘিরে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি’র অনুসারী আইনজীবীরা রীতিমত ভোটযুদ্ধে নেমে পড়েন। 

 


বগুড়া জেলা আইনজীবী সমিতি সাংগঠনিকভাবে স্থানীয় রাজনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠায় ফি বছরের সেই ভোট যুদ্ধে প্রধান দুই দলের জেলা পর্যায়ের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ থেকে শুরু করে তাদের অঙ্গ, সহযোগী এমনকি ভাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও পরোক্ষভাবে শামিল হন। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ‘বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ’-এর প্যানেলের পক্ষে প্রচারে নামেন আর বিএপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা সক্রিয় হন ‘জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম’-এর প্যানেলের পক্ষে।
তবে এবার বগুড়া আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ‘বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ’ একক প্যানেল দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ক্ষমতাসীন ওই দল এবং তাদের অঙ্গ, সহযোগী ও ভাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা প্রকাশ্যে কোন প্রচার-প্রচারণায় নামতে পারেননি। পক্ষান্তরে ‘জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম’-এর পক্ষে আদালতপাড়ার ভেতরে-বাইরে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা জোর কদমে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন।

 


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বগুড়ায় আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীদের মধ্যে নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধ দীর্ঘদিনের। যার সূত্রপাত ‘আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ’ ও ‘বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদ’ নামে দু’টি সংগঠনকে ঘিরে। তবে ২০১৭ সালের ২১ মে কেন্দ্রীয়ভাবে ওই দু’টি সংগঠন ‘বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ’ নামে একীভূত হলেও গত পাঁচ বছরে বগুড়ায় নবগঠিত ওই সংগঠনটির কোন কমিটি না থাকায় পুরানো সেই বিরোধ আরও তীব্র হয়ে ওঠে। যে বিরোধের কারণে ২০২১ সালে বগুড়া বার সমিতির নির্বাচনে ওই সংগঠনের মনোনীত প্যানেল ১৩টি পদের মধ্যে মাত্র ৪টি পদে জয় পায়। সেই নির্বাচনে সভাপতি পদে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সভাপতি প্রার্থী বর্তমান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্দুল মতিন বিজয়ী হতে পারলেও সাধারণ সম্পাদক পদে সাবেক স্পেশাল পিপি তবিবর রহমান তবি শোচনীয়ভাবে পরাজয় বরণ করেন। এমনকি জেলায় সরকারি কৌশুলী হিসেবে নিয়োজিত ১৮০ জনের ভোটও বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী অ্যাডভোকেট তবিবর রহমান তবির পক্ষে পড়েনি। মূলত ওই নির্বাচনের পর থেকেই আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীদের সংগঠনের অভ্যন্তরীণ দ্ব›দ্ব প্রকাশ্যে রূপ নেয়। যার ফলশ্রæতিতে এবার ‘বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ’-এর নামে দু’টি প্যানেল একে অপরের বিরুদ্ধে ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছে। ওই সংগঠনের ব্যানারে ‘মতিন-রোমান পরিষদ’ নামে একটি প্যানেলের নেতৃত্বে রয়েছেন বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বর্তমান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্দুল মতিন। ‘মন্টু-নবাব পরিষদ’ নামে অপর প্যানেলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের অপর সহ-সভাপতি সাবেক পিপি রেজাউল করিম মন্টু। 

 


সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ-এর পক্ষ থেকে একক প্যানেলে নির্ধারণের জন্যঅভিভাবক সংগঠন হিসেবে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সাম্প্রতিককালে বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের নবগঠিত কমিটি নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগে সৃষ্ট দ্ব›েদ্বর কারণে তা ব্যর্থ হয়ে যায়। এতে চরম বিব্রত আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগসহ ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা। যে কারণে তারা নির্বাচনের শুরু থেকেই প্রচার-প্রচারণা থেকে নিজেদের গুটিয়ে রেখেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকার দলীয় সমর্থক আইনজীবীরা এবার নিজেরাই নিজেদের বিরুদ্ধে প্রতিদ্ব›দ্বীতায় অবতীর্ণ হওয়ায় প্রতিপক্ষ বিএপি সমর্থক আইনজীবীরা ভোটযুদ্ধে বেশ সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছেন। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম বগুড়া শাখার সভাপতি আলী আজগর জানিয়েছেন, এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ৭৭৮জনের মধ্যে প্রায় ৪৪ শতাংশ বা ৩৩৯জন তাদের সংগঠনের সদস্য। এছাড়া জামায়াত, গণফোরাম এবং লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) আরও অর্ধশত ভোট তাদের জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম মনোনীত ‘মুক্তা-বাছেদ’ প্যানেলের পক্ষে রয়েছেন। তিনি বলেন, সবমিলিয়ে এবার আমাদের প্যানেলের ভোটারের সংখ্যা প্রায় ৩৯০জন। যা মোট ভোটারের ৫০ শতাংশেরও বেশি। ফলে এবার আমরা ১৩টি পদের সবকটিতে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের দু’টি প্যানেল দেওয়ায় কোন সুবিধা পাবেন কি’না-এমন প্রশ্নের জবাবে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম নেতা অ্যাডভোকেট আজগর আলী বলেন, ‘সেদিক থেকে তো একটা সুবিধা আমরা পেতেই পরি।’

 


তবে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বগুড়ার স্পেশাল পিপি নরেশ মুখার্জীর দাবি তারা জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে দু’টি প্যানেল হলেও আমরা ভাল ফল করবো। কারণ আমরা মূলধারার সঙ্গে আছি। যারা আমাদের বিরুদ্ধে প্যানেল দাঁড় করিয়েছেন তারা ২০-৩০ ভোটের বেশি পাবে না। তাছাড়া জাতীয় পার্টির সমর্থক আইনজীবীরাও আমাদের সঙ্গে আছেন। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের অপর প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী সাবেক পিপি রেজাউল করিম মন্টুও জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। তিনি বলেন, ‘আমরা আশাবাদী, ইনশাল্লাহ্ জয় আমাদের হবে।’