ডেঙ্গু চিকিৎসায় অবহেলা নয়

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৩ ১১:২২ ।
ডাক্তারের খোঁজে
পঠিত হয়েছে বার।

ডেঙ্গু ছোঁয়াচে নয়। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীকে স্পর্শ করলে অথবা এক বিছানায় ঘুমালে কিংবা তার ব্যবহৃত কিছু ব্যবহার করলে, অন্য কারো এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সুযোগ নেই। ফলে, ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসায় কোনো বাধা নেই, কিংবা তাকে আলাদা রাখার কোনো প্রয়োজনও নেই। তবে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীকে মশারির মধ্যে রাখাই উত্তম। বিস্তারিত লিখেছেন ল্যাব এইড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের (উত্তরা শাখা) মেডিসিন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ ডা. সি. এম. শামীম কবীর।

এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু হয়। এ রোগে উচ্চ তাপমাত্রায় জ্বর, মাথাব্যথা, পেশি এবং জয়েন্টে ব্যথা হয়। ডেঙ্গুর লক্ষণ চিনতে পারলেই এর দ্রুত চিকিৎসা করা যায়।

* জ্বর

ডেঙ্গুতে উচ্চ তাপমাত্রায় জ্বর, মাথাব্যথা, পেশি এবং জয়েন্টে ব্যথা হয়। ডেঙ্গু হলে কারও কারও শরীরে প্লেটলেটের মাত্রা দ্রুত কমতে থাকে। এটা হলে রোগীকে অবিলম্বে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে, অন্যথায় সময়মতো চিকিৎসা না পেয়ে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে। ডেঙ্গুর লক্ষণ চিনতে পারলেই এর দ্রুত চিকিৎসা করা যায়। সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন অনুসারে, ডেঙ্গু সংক্রমণ বিশ্বের ১০০টিরও বেশি দেশে হওয়া একটি সাধারণ সমস্যা এবং আনুমানিক তিন বিলিয়ন মানুষ ডেঙ্গু-আক্রান্ত এলাকায় বাস করেন। এর মধ্যে রয়েছে ভারত এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য অংশ, চীন, আফ্রিকা, তাইওয়ান এবং মেক্সিকো।

* লক্ষণ

সংক্রমণের প্রায় চার বা ছয় দিন পরে ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দেয়। এগুলো হলো-

▶ উচ্চ তাপমাত্রায় জ্বর

▶ মাথাব্যথা

▶ চোখেব্যথা

▶ পেশি এবং জয়েন্টে ব্যথা

▶ ক্লান্তি

▶ বমি বমি ভাব

▶ বমি করা

▶ ত্বকে লাল লাল দাগ।

গুরুতর ক্ষেত্রে DHF (ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার) হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এই অবস্থায়, রক্তনালিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং প্লেটলেটের মাত্রা দ্রুত কমতে শুরু করে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে নিুলিখিত লক্ষণগুলো দেখা যেতে পারে-

▶ পেটব্যথা

▶ ঘন ঘন বমি হওয়া

▶ মাড়ি বা নাক দিয়ে রক্ত পড়া

▶ পায়খানা বা বমিতে রক্ত পড়া

▶ নিঃশ্বাস নিতে অসুবিধা

▶ ক্লান্ত বোধ করা

▶ বিরক্তি বা অস্থিরতা।

* চিকিৎসা

ডেঙ্গুর কোনো নির্দিষ্ট ওষুধ বা সঠিক চিকিৎসা নেই। কিছু ঘরোয়া প্রতিকার এ ক্ষেত্রে খুব কার্যকর হতে পারে। এমন অবস্থায় বেশি পানি পান করা উচিত। এর মধ্যে ফলের রস, স্টু জাতীয় খাবারও দেওয়া যেতে পারে। অত্যন্ত গুরুতর ক্ষেত্রে, রোগীকে ইলেক্ট্রোলাইট দেওয়া উচিত। কিছু ক্ষেত্রে, ব্লাড প্রেসার মনিটর এবং ব্লাড ট্রান্সফিউশনের মাধ্যমেও চিকিৎসা করা হয়। নিজে থেকে অ্যাসপিরিন বা আইবুপ্রোফেনের মতো ওষুধ খাওয়ার মতো ভুল করবেন না। তবে এসব ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরী।

* কখন হাসপাতালে যাবেন

ডেঙ্গুর চিকিৎসা বাড়িতেও সম্ভব। তবে রোগী বেশি দুর্বল ও পানিশূন্য হয়ে পড়লে বা শরীরের কোথাও রক্তবিন্দুর মতো দাগ, চোখ লাল হয়ে যাওয়া, নাক বা মাড়ি থেকে রক্ত পড়ার মতো যে কোনো লক্ষণে দেরি না করে হাসপাতালে নিতে হবে।

ডেঙ্গু আক্রান্তদের কারও পেটব্যথা বা ডায়রিয়া হলে সঙ্গে সঙ্গেই হাসপাতালে ভর্তি করানো উচিত। ডেঙ্গুতে আক্রান্তদের মধ্যে দ্বিতীয়বার আক্রান্তরা বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। তাই সঙ্গে সঙ্গেই তাদের হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা দেয়া উচিত।

ডেঙ্গু জ্বরের তিনটি ভাগ রয়েছে। এ ভাগগুলো হচ্ছে-‘এ’, ‘বি’ এবং ‘সি’।

▶ প্রথম ক্যাটাগরির রোগীরা নরমাল থাকে। তাদের শুধু জ্বর থাকে। অধিকাংশ ডেঙ্গু রোগী ‘এ’ ক্যাটাগরির। তাদের হাসপাতালে ভর্তি হবার কোন প্রয়োজন নেই।

▶ ‘বি’ ক্যাটাগরির ডেঙ্গু রোগীর শরীরে কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। যেমন তার পেটে ব্যথা, বমি ও কিছুই খেতে পারছে না।

অনেক সময় দেখা যায়, দুইদিন জ্বরের পরে শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়। এক্ষেত্রে হাসপাতাল ভর্তি হওয়াই ভালো।

▶ ‘সি’ ক্যাটাগরির ডেঙ্গু জ্বর সবচেয়ে খারাপ। কিছু-কিছু ক্ষেত্রে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসিইউ’র প্রয়োজন হতে পারে

* ডেঙ্গুজ্বর প্রতিরোধ

যতটা সম্ভব মশা রিপেলেন্ট এবং মশারি ব্যবহার করুন। সন্ধ্যার আগে ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ রাখুন। এমন পোশাক পরুন, যাতে শরীর পুরোপুরি ঢেকে যায়। আশপাশে যেন পানি জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখুন। কুলারের পানি পরিবর্তন করতে থাকুন। পানি ঢেকে রাখুন। বাইরের পাখি বা পোষা প্রাণীর খাবারের পানি নিয়মিত পরিবর্তন করুন।