ওজন কমাতে গিয়ে যেসব ভুল করা যাবে না

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ০২ ডিসেম্বর ২০২৩ ১১:৩৭ ।
লাইফস্টাইল
পঠিত হয়েছে বার।

খাবার আমাদের শরীরে ক্ষয়পূরণ, বৃদ্ধিসাধন, শক্তি জোগানো এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। মানসিক বিকাশেও খাবারের ভূমিকা আছে। দেখা যায়, অতিরিক্ত খাবার বা খুব কম খাবার গ্রহণ ওজন বাড়িয়ে বা কমিয়ে দেয়। তখন হতাশা, অস্বস্তি, বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা যায়। ওজন বেড়ে যাওয়া নিয়ে বেশিরভাগ মানুষ চিন্তিত থাকেন। তখনই তারা ওজন কমানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতি অবলম্বন করেন। কেউ এ ব্যাপারে সঠিক পথে যান, কেউ আবার ভুল করে থাকেন। যেমন

খালি পেটে লেবু-মধু-গরম পানি খেলে ওজন কমবে

অনেকের ধারণা খালি পেটে গরম পানির সঙ্গে আস্ত একটি লেবুর রস, ১ চা চামচ মধু খেলে ওজন কমে যায়। এর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। লেবুতে আছে সাইট্রিক এসিড। ওজন কমানো বা চর্বি গলিয়ে ফেলার ক্ষেত্রে সাইট্রিক এসিডের কোনো ভ‚মিকা নেই। তবে লেবুর রসে ভিটামিন সি ও পটশিয়াম থাকে, যা ত্বকের জন্য ভালো। যাদের পাকস্থলীতে আলসার রাখা আছে, তাদের খালি পেটে লেবু না খাওয়াই ভালো। ১ চা চামচ মধুতে আছে ৬৪ ক্যালরি। সুতরাং, এ খাবারে দেহে ক্যালরি বাড়বে বৈ কমবে না।

ভাত খেলে ওজন বাড়ে

অনেকের ধারণা ভাত খেলে ওজন বাড়ে। এ ধারণা ঠিক নয়। ভাত শর্করাযুক্ত খাবার। আমাদের খাবারের ৫০ শতাংশ ক্যালরি আসতে হয় শর্করা থেকে। শ্রমজীবী অথবা গ্রামাঞ্চলে দেখা যায়, তারা তিনবেলা ভাত খান। অথচ তাদের ওজন বাড়ে না। এর কারণ তারা যতটুকু ভাত খাচ্ছেন, পাশাপাশি তারা কায়িক পরিশ্রম করছেন। ভাত খাওয়ার ফলে ওজন বাড়ার কারণগুলো হলো-প্রয়োজনের তুলনায় বেশি ভাত খাওয়া, কম পরিশ্রমও করা, মাড় না ফেলে ভাত অর্থাৎ বসা ভাত খেলে ওজন বাড়তে পারে। এজন্য বেশি ওজনের ব্যক্তিদের রাইস কুকার ব্যবহার না করা ভালো।

টক খেলে ওজন কমে

টক জাতীয় খাবার খেলে ওজন কমে বলে অনেকের ধারণা। সব ধরনের টকই বিভিন্ন এসিডের সমন্বয়ে গঠিত। যত বেশি টক, তত বেশি লবণ। লবণের পরিমাণ বেশি হলে দেহের কোষে পানি জমার আশঙ্কা থাকে। এতে ওজন বেড়ে যেতে দেখা যায়।

প্রাতঃরাশ বা সকালের নাস্তা বাদ দেওয়া ভালো

অনেকে ওজন কমানোর জন্য সকালের নাস্তা বা প্রাতঃরাশ বাদ দিয়ে থাকেন। সকালের নাস্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ খাবার। যা সারা দিনের শক্তি জোগাবে। প্রাতঃরাশ বাদ দেওয়ার ফলে শরীর ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়বে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা কমে গিয়ে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হবে। সকালে কিছু খাওয়া হয় নাই বলে, সারাদিনে বেশি বেশি খাবারের প্রতি আগ্রহ জন্মায়। ফলে ওজন কমার পরিবর্তে বেড়েই চলে। বাস্তবে দেখা যায়, যারাই সকালে খান না, তাদেরই ওজন বেশি থাকে।

কোলেস্টেরল ফ্রি তেলে ওজন কমে

অনেকে বলে থাকেন, ওজন কমানোর জন্য কোলেস্টেরল ফ্রি তেল খাই। একমাত্র নারিকেল তেল ছাড়া অন্য কোনো উদ্ভিজ তেলে কোলেস্টেরল থাকে না। যে ধরনের তেল খাওয়া হোক না কেন, সেটা হতে হবে পরিমিত। কারণ, এক গ্রাম তেলে থাকে ৯ ক্যালরি। পাম তেলে কিছুটা কোলেস্টেরল আছে, রিফাইন করার পর সেটাও থাকে না।

নো কার্ব খাবার খাওয়া ভালো

ওজন কমানোর প্রোগ্রামে একটি প্রচলিত বাক্য হচ্ছে, ‘নো কার্ব’। অর্থাৎ কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা জাতীয় খাবার না খাওয়া। যদি সত্যিই কেউ খাবার থেকে শর্করা বাদ দেন, তাহলে তাকে বেশ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়তে হবে। কারণ শর্করার কাজ হলো শরীরে শক্তি জোগানো এবং রক্ত শর্করার মধ্যে সমতা রাখা। প্রতিদিনের খাবারে সব কয়টি খাদ্য উপাদান থাকা উচিত। এদিকে যারা ‘নো কার্ব’ বলেন, তারা একমাত্র ভাত-রুটিকে কার্বোহাইড্রেট বলে বুঝে থাকেন। এজন্য তারা এই দুটি খাবার বাদ দিয়ে অন্য সব ধরনের কার্বোহাইড্রেট খেয়ে থাকেন। যেমন- পাস্তা, পিৎজ্জা, নুডলস, বিস্কুট, মুড়ি, মোমো, পপকর্ন, পাকা কলা, আলু, ময়দার তৈরি নাস্তা, ওটমিল, ফালুদা, কর্নফ্লেক্স ইত্যাদি। সুতরাং একথা বলা যায় না যে, তারা কার্বো হাইড্রেটযুক্ত খাবার থেকে বিরত আছেন।

উপবাস বা অভুক্ত থাকলে ওজন কমে

না খেয়ে থেকে কখনই ওজন কমানো যায় না। এক বেলা না খেয়ে থাকলে পরবর্তী বেলায় খাবারের চাহিদা বেড়ে যায়। সেই বাড়তি খাবারটাই ওজন বাড়ানোর জন্য যথেষ্ট। এমন অনেকে আছেন, ওজন কমানোর জন্য সারা বছরই সপ্তাহে এক-দুই দিন রোজা রাখেন। রোজার শেষে ইফতারিতে অন্য দিনের চাইতে ক্যালরি খাওয়া বেশি হয়ে যায়। ফলে ওজন আরও বাড়তে থাকে। যদি এমন হয়-সারা দিনের খাবারটা তিনবারে কম ব্যবধানে খেতে গিয়ে অন্যান্য দিনের চাইতে কম খাওয়া হয়, তাহলে উপবাস থাকলে অবশ্যই ওজন কমবে।

ওজন কমাতে দামি খাবার খেতে হয়

অনেকে মনে করেন, দামি খাবারের মধ্যেই লুকিয়ে আছে ওজন কমানোর রহস্য। যেমন- গ্রিন টি, চিয়াসিড, ওটস, ফুড সাপ্লিমেন্ট ইত্যাদি। এ খাবারগুলোতে অবশ্যই ওজন কমবে, যদি বিধিনিষেধ মেনে এগুলো খাওয়া হয়। উচ্চমাত্রায় ক্যালরি গ্রহণের পাশাপাশি এগুলো খেলে কোনো কাজই হবে না। ওটমিলের ক্ষেত্রে বলা যায়, এটি মূলত শর্করাযুক্ত খাবার। যুগ যুগ ধরে এটি ব্রেকফাস্ট সিরিয়াল হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এটি শুধু ওজন নয়, কোলেস্টেরল কমাতে ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। পাতলা দুধ দিয়ে এটি খেলে তেমন কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু অনেকে এটিকে ক্যালরিবহুল করে খান। যেমন-ওটস ৪ টেবিল চামচ+১ কাপ ঘন দুধ+একটি কলা+আলমন্ড ৬/৭টা+কিশমিশ ৫/৬টা+খেজুর ২টি। এভাবে খেয়ে তারা বলেন, আমি তো ভাত-রুটি খাই না, ওটস খাই, আমার কেন ওজন কমে না। সুতরাং, খাবার কীভাবে তৈরি করবেন এটা সম্পূর্ণ আপনার এখতিয়ার। তবে ওজন কমাতে হলে, কম ক্যালরি ও শারীরিক পরিশ্রম এবং পরিমিত পরিমাণে সময়মতো খাওয়া উচিত। এটি ছাড়া ওজন কমানো কিছুতেই সম্ভব নয়।

লেখক: চিফ নিউট্রিশন অফিসার ও বিভাগীয় প্রধান (অব.), বারডেম। সভাপতি, ডায়াবেটিস নিউট্রিশনিস্ট সোসাইটি অব বাংলাদেশ, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, শ্যামলী ও অ্যাডভান্স হাসপাতাল, ঢাকা।