বগুড়ায় অপহৃত পাঁচ নৃত্যশিল্পী উদ্ধার, ৪ অপহরণকারী গ্রেপ্তার

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৭:৫০ ।
প্রধান খবর
পঠিত হয়েছে ১৭৮ বার।

বগুড়ায় অপহৃত পাঁচজন নৃত্যশিল্পীকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারী) ভোর ৫ টার দিকে গাবতলী উপজেলার রামেশ্বরপুর ইউনিয়নের পাঁচকাতুলী বুড়িতলায় একটি পরিত্যক্ত গোডাউন থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়। এসময় অপহরণ ও মুক্তিপণ দাবির অভিযোগে চার যুবককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

গ্রেপ্তার ওই চার যুবক হলো- বগুড়ার গাবতলী উপজেলার পাঁচকাতুলীর (পশ্চিমপাড়া) মুকুল মিয়ার ছেলে সাফিন মিয়া (২২), বজলুর রহমানের ছেলে আব্দুস ছালাম (২০), আব্দুল হাইয়ের ছেলে মামুনুর রশিদ ওরফে নীরব হোসেন(২০) এবং মুকুল মিয়ার ছেলে মোস্তাকিম (১৯)।

এদিকে অপহৃত পাঁচজন নৃত্যশিল্পী হলো- মোন্তাসির , তাহাজ্জত, অর্কো, সামিয়া ও জয় শেখ।

এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন গাবতলী থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, 'নৃত্যশিল্পীদের অপহরণ করে মুক্তিপণের দাবির অভিযোগে অপহরণকারী ওই চার যুবককে আটক করা হয়েছে। বাকি চারজন পলাতক রয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এছাড়াও আটক ওই চারজনের প্রত্যেককে ৫ দিন করে রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে।'

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মামলার বাদী বগুড়া সদরের বুজর্গধামা এলাকার রেজাউল করিমের ছেলে মোন্তাসির পেশায় একজন ফটোগ্রাফার। মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারী) সাতমাথায় অবস্থানকালে এক বন্ধু মোন্তাসির কে ফোন দিয়ে গাবতলীর রামেশ্বরপুরের পাঁচকাতুলী পশ্চিমপাড়া গ্রামে একটি অনুষ্ঠানে নাচের প্রোগ্রামের কথা জানায়। সেই সাথে একজন নারী নৃত্যশিল্পীকে প্রোগ্রামে নেওয়ার কথা বলে। তখন মোন্তাসির তার আরেক বন্ধু অর্কের সাহায্যে ঠনঠনিয়া কলোনী এলাকার নৃত্যশিল্পী সামিয়া ওরফে পপিকে নাচের প্রোগ্রামের কথা জানালে তিনি রাজি হন যাওয়ার জন্য।

 ওইদিন বিকাল ৪ টার দিকে মোন্তাসির সহ তাহাজ্জত, অর্কো, সামিয়া ও জয় শেখ সিএনজিযোগে গাবতলীর রামেশ্বরপুরের গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। এরপর রাত ১০ টা পর্যন্ত তারা উপজেলার পাঁচকাতুলী পশ্চিমপাড়া গ্রামে প্রোগ্রাম করেন। তবে অনুষ্ঠানে সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকায় তারা রাতেই বগুড়ায় ফেরার উদ্দেশ্যে বের হয়। কিন্তু পথেই তাদের সিএনজি নষ্ট হয়ে যায়। তখন স্থানীয়দের সহযোগিতায় আশেপাশে স্ট্যান্ডের খোঁজ করলে কিছু দূর এগিয়ে মগার নামক জায়গায় যেতে বলে তারা। সবাই তখন পায়ে হেঁটে রওনা দেয় মগারে যাবার জন্য। এওকপর্যায়ে রাত সাড়ে ১০ টার দিকে পাঁচকাতুলী বুড়িতলা গ্রামের পাঁচকাতুলী জামে মসজিদের সামনে পৌঁছামাত্র অস্ত্রসহ ৮-১০ জন যুবক তাদের পথরোধ করে। এরপর তাদেরকে রশি দিয়ে বেঁধে ৩ টি সিএনজিতে তুলে অপহরণ করে ওই পরিত্যাক্ত গোডাউনে আটকে রাখে। এসময় অপহরণকারীরা ওই পাঁচ নৃত্যশিল্পীর কাছ থেকে নগদ ১২ হাজার ৫০০ টাকা ছিনিয়ে নেয় এবং ২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। তা না হলে তাদের প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে নির্যাতন করে।

২ লাখ টাকা দিতে অস্বীকার করায় নৃত্যশিল্পী সামিয়ার উপর চড়াও হয়ে এক অপহরণকারী বলে, 'তুই জানিস আমি কে? আমার নাম রাঙ্গা, আমার কথায় এই এলাকা চলে।' একথা বলে সামিয়ার মাথায় ইট দিয়ে আঘাত করে ওই অপহরণকারী। তখন রক্তাক্ত জখম অবস্থায় মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে সামিয়া।

এরপর অপহরণকারীদের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে অপহৃতরা তাদের আত্মীয়দের মুক্তিপণের বিষয়টি জানান। তখন মামুন শেখ নামে সামিয়া ওরফে পপির এক আত্মীয় নিরুপায় হয়ে ত্রিপল ৯৯৯ এ কল দিয়ে বিষয়টি জানায়।

অপহৃতদের আত্মীয়দের নিয়ে পুলিশ তখন তাদের উদ্ধার করতে অভিযানে নামে ওই রাতেই। একপর্যায়ে ভোর ৫ টার দিকে গাবতলী উপজেলার রামেশ্বরপুর ইউনিয়নের পাঁচকাতুলী বুড়িতলায় একটি পরিত্যক্ত গোডাউনের বাইরে কিছু যুবকদের অবস্থান টের পেয়ে পুলিশ সেখানে গাড়ি থামায়। এসময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ৪ জন পালিয়ে গেলেও বাকি ৪ অপহরণকারীকে আটক করা হয়। এছাড়াও গোডাউনের ভেতর থেকে অপহৃত ওই পাঁচ নৃত্যশিল্পীকে উদ্ধার করে পুলিশ। এসময় ১নং আসামী সাফিন মিয়ার কোমরে গোঁজানো ০১ টি চাপাতি এবং ২নং আসামী আব্দুস ছালাম এর কোমরে গোঁজানো ০১ টি ধারালো চাকু সহ ঘটনাস্থল থেকে ৪ টি স্মার্টফোন এবং মাদক সেবনের সরঞ্জামাদিসহ মোট ০৪ সেট বিভিন্ন রংয়ের তাস জব্দ করা হয়।

ওসি আবুল কালাম আজাদ আর বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অপহরণকারী ওই চার যুবক বাকি আসামিদের নাম স্বীকার করেছে। তারা হলো ওই এলাকার আরিফুল ইসলাম রাঙ্গা (৩৫), হৃদয় (২৬), শাহেদ (২৫) ও  আপেল (৪০)। এর মধ্যে আরিফুল ও রাঙ্গা সব টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়।

এছাড়াও আসামিদের আদালতে পাঠানো হচ্ছে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।