অনলাইন ক্লাস শুরু হচ্ছে মাধ্যমিক বিদ্যালয়েও

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ১২:৫৪ ।
দেশের খবর
পঠিত হয়েছে ১০ বার।

তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে ইতোমধ্যেই সাত দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে দেশের সব প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়। সেই ছুটি শেষ হবে আগামী ২৭ এপ্রিল। তবে চলতি মাসেই গরম কমে আসবে, এমন কোনো পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে না। তাই সিলেবাস শেষ করতে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছুটি না বাড়িয়ে অনলাইন ক্লাস চালুর চিন্তা করছে মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)।

 

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাউশির কর্মকর্তারা বলছেন, ইতোমধ্যেই তারা এ বিষয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছেন। সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে এ ব্যাপারে ইতিবাচক অভিমতও পাওয়া গেছে। এমন প্রেক্ষাপটে আগামী ২৬ এপ্রিল শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী জেনেভা থেকে দেশে ফিরলে এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হতে পারে। 

 

মাউশি এবং এনসিটিবি সূত্র জানাচ্ছে, চলতি বছর সাপ্তাহিক ছুটিসহ অন্যান্য ছুটি বাদে ১৮৫ দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকার কথা। তবে এর মধ্যে পরীক্ষার জন্য ২০ দিন, ৫টি জাতীয় দিবস, অন্যান্য জরুরি প্রয়োজনে ২০ দিন পাঠদান বন্ধ থাকার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে ১৪০ দিনে সিলেবাস শেষ করার রূপরেখা তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে শীতের কারণেও বেশ কয়েকদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। বর্তমানে গরমের কারণে অনির্ধারিতভাবে পাঁচ দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এই ছুটি দীর্ঘায়িত হলে সিলেবাস শেষ করা অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে। এসব চিন্তা করেই গরম অব্যাহত থাকলে অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার চিন্তা করছে মাউশি।

 

মাউশির এক কর্মকর্তা বলেন, নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নে কমপক্ষে ১৮৫ দিন বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম অব্যাহত রাখা অবশ্যক। কারণ নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নে শিক্ষক প্রশিক্ষণ, শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠানের বাইরে তথ্য সংগ্রহসহ নানা কারণে আগের চেয়ে বেশি সময় প্রয়োজন হয়। কিন্তু এবার ১৪০ দিন ক্লাস হওয়ার কারণে সিলেবাস শেষ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাই আর ছুটি বাড়ানোর সুযোগ নেই। আগামী বছর থেকে সাপ্তাহিক ছুটি দুই দিনের পরিবর্তে এক দিন করে ১৮৫ দিন ক্লাস নিশ্চিত করার সিদ্ধান্তও নেওয়া হতে পারে। 

 

এ প্রসঙ্গে মাউশির পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক সৈয়দ জাফর আলী বলেন, অনির্ধারিত ছুটির কারণে শিক্ষাসূচি বিঘ্নিত হয়। ছাত্র-ছাত্রীরা তখন শিখন ঘাটতির মধ্যে পড়ে। চলমান এই অনির্ধারিত ছুটি শেষ হলে গরমের তীব্রতা থাকলেও ছুটি না বাড়িয়ে অনলাইন ক্লাসের আয়োজন করা উচিত। এতে অন্তত শিখন ঘাটতি থেকে রক্ষা পাবে ছাত্র-ছাত্রীরা। অনলাইন ক্লাসের ব্যাপারে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান তিনি।

 

সিলেবাস শেষ করতে চলতি বছর শিক্ষাপঞ্জি সংশোধন করে রমজানে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রম চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল শিক্ষা বিভাগ। তবে রমজানের এই ছুটি নিয়ে বিতর্ক উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়ায়। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল খোলা রাখা সংক্রান্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত হাইকোর্ট স্থগিত করেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এরপর আপিল বিভাগ হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেন। ফলে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তই বহাল থাকে। 

 

এদিকে গরমের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে অনলাইন ক্লাস। স্বাস্থ্যমন্ত্রী এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তাপপ্রবাহ চলমান থাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি আরও বাড়ানোর সুপারিশ করবেন বলে জানিয়েছেন। এদিকে গরমের কারণে ছুটি না বাড়িয়ে অনলাইনে ক্লাস চালু রাখার দাবি জানিয়েছে ‘অভিভাবক ঐক্য ফোরাম। 

 

মঙ্গলবার ফোরামের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউল কবির দুলু এক বিবৃতিতে বলেন, সারা দেশে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়ায় এবং আবহাওয়া অধিদপ্তর বিশেষ তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা জারি করায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ৭ দিনের জন্য বন্ধের দাবি জানিয়েছিল অভিভাবক ঐক্য ফোরাম। এ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত সব স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা বন্ধ ঘোষণা করে।’

 

বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, ‘কোথাও কোথাও অতি তীব্র তাপপ্রবাহ এখনও অব্যাহত থাকায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরও এক সপ্তাহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছে। এ অবস্থায় অভিভাবকরা শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিবেচনায় নিয়ে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার দাবি জানাচ্ছে।’