ঘুষ নিতে গিয়ে পুলিশ সদস্য আটক, অতঃপর...

জয়পুরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২০ মে ২০২৪ ১৯:১৩ ।
প্রতিবেশী জেলা
পঠিত হয়েছে ৫৭ বার।

জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে এক পুলিশ সদস্যকে মাদকাসক্ত এক ব্যক্তির বাড়িতে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে আটকে রেখে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। শনিবার (১৮ মে) আক্কেলপুর পৌরশহরের শ্রীকৃষ্টপুর মহল্লার মৃত সেকেন্দার আলীর পুত্র সোহেলের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।

রোববার (১৯ মে) এ ঘটনায় ওই পুলিশ সদস্যকে জয়পুরহাট পুলিশ লাইনে ক্লোজড করা হয়েছে।

জানা যায়, পুলিশের ওই কনস্টেবলের নাম আশিক হোসেন। ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে তাকে আটকে রাখেন শ্রীকৃষ্টপুর মহল্লার বাসিন্দা সোহেল রানা ও স্থানীয় লোকজন।


থানা-পুলিশ, ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় এক সপ্তাহ আগে জমি-জমা নিয়ে একটি অভিযোগের তদন্ত করতে একজন এসআইয়ের সঙ্গে কনস্টেবল আশিক রানা শ্রীকৃষ্টপুর মহল্লায় এসেছিলেন। তখন আশিক বিবাদী পক্ষের সোহেল রানার কাছে এক হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। ওইদিন সোহেল কনস্টেবলকে কোনো টাকা-পয়সা দেননি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সোহেলকে হুমকি দেওয়া হয়।

এ ঘটনার দুদিন পর রাতের বেলায় স্থানীয় একটি সড়কে কনস্টেবল আশিক সোহেল রানার পকেট তল্লাশি করে ইয়াবা পান বলে দাবি করেন। তখন তাকে ছেড়ে দেওয়ার শর্তে ২০ হাজার টাকা ঘুষ চাওয়া হয়। সোহেল পর দিন সকালে ঘুষের টাকা দেবেন বলে কথা দিয়ে সেখান থেকে চলে আসেন। কনস্টেবল শুক্রবার (১৭ মে) ভোরে ঘুষের টাকা নিতে সোহেল রানাদের বাড়িতে এসে ডাকাডাকি করে তাকে পাননি। তখন ক্ষুদ্ধ হয়ে বাড়ির দরজায় লাথি দিয়ে চলে যান।

শনিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে আশিক শ্রীকৃষ্টপুর মহল্লায় সোহেলের বাড়িতে আসেন। তিনি ঘুষের ২০ হাজার টাকা দাবি করলে সোহেল ৫ টাকা হাজার তুলে দেন। এ সময় সোহেলের স্ত্রী গোপনে মুঠোফোনে ঘুষের টাকা লেনদেনের ভিডিও ধারণ করেন। বিষয়টি টের পেরে টাকা ফেরত দিয়ে দ্রুত পালানোর চেষ্টা করে। তখন সোহেল পুলিশ সদস্যকে তার বাড়িতে আটকে রেখে ৯৯৯ কল করেন। পুলিশকে আটকে রাখার খবর পেয়ে উৎসুক গ্রামবাসীরা সেখানে জড়ো হন। সকাল ১০টার দিকে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফেরদৌস হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে আসেন। থানা পুলিশ সোহেলকে ভয়ভীতি দেখিয়ে মোবাইল ফোনে থাকা ঘুষ লেনদেন ভিডিও মুছে ফেলে আটক থাকা কনস্টেবল আশিককে নিয়ে চলে আসেন।

ভুক্তভোগী সোহেল বলেন, আমি দুই মাস আগে মাদক সেবন ছেড়ে দিয়েছি। জমি-জমা নিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে থানায় একটি অভিযোগ করা হয়েছিল। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে এক সপ্তাহ আগে একজন এসআইয়ের সঙ্গে কনস্টেবল আশিক রানা আমাদের গ্রামে এসেছিলেন। তখন আমার কাছে টাকা দাবি করেন। সেই টাকা না দেওয়ায় পরে আমাকে রাস্তার মধ্যে পকেটে মাদক দিয়ে ফাঁসিয়ে দেন তিনি। পরে ২০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা হলে তিনি আমাকে ছেড়ে দেন। পরে ওই টাকা নিতে এলে এ ঘটনাটি ঘটে। ঘটনাটি থানার ওসিকে জানাতে চাইলে ঘুষের টাকা রেখে দ্রুত পালানোর চেষ্টা করে। একপর্যায়ে ৯৯৯-এ ফোন দিলে পুলিশ এসে আমার স্ত্রীর ধারণ করা ভিডিও ডিলিট করে তাকে নিয়ে যায়।

আক্কেলপুর পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফেরদৌস হোসেন বলেন, সোহেলের বাড়িতে সিভিল পোশাকে একজন কনস্টেবলকে আটকে রাখা হয়েছিল। পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে এসেছে।

ঘটনার সময় নিজে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকার কথা জানিয়ে ফেরদৌস হোসেন আরও বলেন, একটি মোবাইল ফোন নিয়ে সোহেলের সঙ্গে পুলিশ সদস্যরা কাড়াকাড়ি করছিলেন। সেটি কার আমি জানি না।

তবে ঘুষ নেওয়ার কথা অস্বীকার করে পুলিশ সদস্য আশিক রানা বলেন, সোহল একজন মাদক ব্যবসায়ী। তাকে চিহ্নিত করতে ভোরবেলা তার বাড়িতে যাই। এ কারণে আমাকে আটকে রাখা হয়েছিল।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাসুদ রানা বলেন, আমি কনস্টেবলের ওই ঘটনায় এসপি স্যারের কাছে প্রতিবেদন দিয়েছি। বিকেল ৪টায় ওই কনস্টেবল আশিক রানাকে জয়পুরহট পুলিশ লাইনে ক্লোজড করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, কনস্টেবল আশিক রানার বাড়ি নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেল সদরে। সে ২০১৫ সালে পুলিশ সদস্য পদে যোগদান করেন।