নওগাঁয় অর্থ আত্মসাৎ করে আত্মগোপনে থাকা চাল ব্যবসায়ীকে আটকের দাবি
নওগাঁ প্রতিনিধি
নওগাঁর মহাদেবপুরে ওসমান অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ (প্রা.) লিমিটেডের চেয়ারম্যান ওসমান গণির বিরুদ্ধে ধান ব্যবসায়ী ও কৃষকদের প্রায় ৩৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। অর্থ আত্মসাৎ করে আত্মগোপনে রয়েছেন। মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে পাওনাদাররা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে ‘ভুক্তভোগী সকল পাওনাদারের’ ব্যানারে মানববন্ধন করছেন। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি একটি কোম্পানিকে ভাড়া দিয়ে পরিবারসহ ঢাকায় অবস্থান করছেন তিনি। এদিকে অভিযোগকারী ব্যবসায়ীরা টাকা না পেয়ে হন্যে হয়ে ঘুরছেন। পরে ভুক্তভোগীরা ওসমান গণির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে তাদের টাকা ফেরতের দাবি জানিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারক লিপি দেন।
মানববন্ধনে আড়তদার আবু আহসান হাবিবের সভাপতিত্বে আড়তদার সামিউল আলম, ইমতিয়াজ হোসেন সরদার, মাসুদ মোল্লাসহ বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী ও অভিযোগকারী কৃষকরা বক্তব্য রাখেন। মানববন্ধনে প্রায় তিন শতাধিক ব্যবসায়ী ও কৃষকরা অংশগ্রহণ করেন।
ভুক্তভোগি ব্যবসায়ী ও কৃষক সূত্রে জানা যায়, নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার নওগাঁ-মহাদেবপুর সড়কের আখেড়া এলাকায় ওসমান গণি গত প্রায় ৪০ বছর আগে চালকল গড়ে তুলে ব্যবসা শুরু করেন। পর্যায়ক্রমে চালকলটি অটোমেটিকে রুপান্তর করে ওসমান অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ (প্রা.) লিমিটেড নাম দেন। যেখানে কয়েক একর জায়গার ওপর পাঁচটি ইউনিট গড়ে তোলেন। ধানের আড়ৎদারদের কাছ থেকে নগদ ও বাকিতে ধান কিনে চালকল পরিচালনা করা হতো। এতে ব্যবসার সুবাদে আড়তদারদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে ওঠে। এভাবে জেলা ও জেলার বাহিরের প্রায় ২৬০ জন ধান ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নগদ ও বাকিতে ধান কিনতেন তিনি। একপর্যায়ে প্রায় ৩৫ কোটি টাকা ধান ব্যবসায়ীদের কাছে বকেয়া রাখেন।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, গত তিন থেকে চার মাস ধরে ধান ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ওসমানের দূরত্ব বাড়তে থাকে এবং টাকা আত্মসাতের চেষ্টা করা হয়। তিনি পরিবারসহ ঢাকায় অবস্থান করতে থাকেন। গোপনে তার প্রতিষ্ঠানটি একটি কোম্পানির কাছে ভাড়া দিয়ে দেন।
আব্দুল ওহাব মোল্লা ও জিন্নাত হোসেন নামের দুই ভুক্তভোগি বলেন, ওসমান গনী আমাদের সাথে প্রতারণা করেছেন। তার কাছে আমরা কয়েকজন ব্যবসায়ী ও কৃষক প্রায় ৩ কোটি টাকা পাই। কিন্তু আমাদের কোন টাকা ফেরত দিচ্ছেনা। তার কঠিণ শাস্তির দাবি করছি।
উপজেলার মাতাজি হাট এলাকার মোল্লা ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকার সামিউল আলম বলেন, ‘গত কয়েক বছর থেকে ওসমান গণিকে ধান দিয়ে আসছি। নগদ ও বাকিতে ধান দিতাম। এভাবে প্রায় এক কোটি ৩৯ লাখ টাকা পাওনা রয়েছি। পাওনা টাকা চাওয়া হলে বিভিন্ন বাহানা শুরু করেছে। আমার মতো ২৬০ জন ব্যবসায়ীর প্রায় ৩৫ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। আমরা এখন পথে পথে ঘুরছি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মহাদেবপুর উপজেলার ওসমান অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান ওসমান গণি বলেন, ‘প্রায় ৩৮ বছর থেকে ব্যবসা করছি। ব্যবসার সুবাদে অনেক টাকা লোকসান হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ীদের কাছেও আমার দেনা রয়েছে। আমার কাছে নগদ টাকা নাই। পাওনাদারদের বলেছি যে সম্পদ আছে, তা বিক্রি করে দেনা পরিশোধ করা হবে। নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করার জন্য আদালতে একটি আবেদন করেছি, তবে আমি আমার প্রতিষ্ঠানটি ভাড়া দিয়েছি। এর বেশি কিছু বলতে চাইনা।
জেলা প্রশাসক মো.গোলাম মওলা বলেন, ভুক্তভোগি ব্যবসায়ী কৃষকরা একটি স্বারকলিপি দিয়েছেন। আমরা আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।