বগুড়ায় গণপিটুনিতে এক ব্যক্তি নিহত, পিকআপে আগুন
শেরপুর( বগুড়া) প্রতিনিধি
বগুড়ার শেরপুরে গরু চুরি করে পালানোর সময় গণপিটুনিতে আছির আলী প্রামাণিক (৪৫) নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় গরু চুরির কাজে ব্যবহৃত একটি পিকআপ আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) ভোররাতে উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের শুবলী গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। নিহত আছির আলী প্রামাণিক উপজেলার গাড়িদহ ইউনিয়নের মহিপুর কলোনী গ্রামের মৃত ফজল প্রামাণিকের ছেলে।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, সম্প্রতি শুবলী এলাকায় গরু, ভুট্টাসহ বিভিন্ন মালামাল চুরির ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। এমনকি গত তিনদিন আগেও শালফা গ্রামের মকবুল হোসেনের বাড়ি থেকে দুটি গরু চুরির ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া আগেরদিন চুরি করতে এসে গ্রামবাসীর ধাওয়া খেয়ে চোরদল পালিয়েছে। তাই চুরি রোধে এলাকায় রাতজেগে পাহারা বসানো হয়েছে।
এদিকে মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাত অনুমান তিনটার দিকে শুবলী দক্ষিণপাড়ার বাসিন্দা মিজানুর রহমানের বাড়ি থেকে একটি গাভী গরু চুরি করে একদল চোর। তারা গরুটি নিয়ে ধানখেতের মধ্যদিয়ে ইটভাটা সংলগ্ন সড়কে নিয়ে পিকআপ গাড়িতে তুলছিল। এসময় পাহারায় থাকা গ্রামবাসী ঘটনাটি দেখতে পেয়ে চিৎকার শুরু করেন।
পরে তাদের চিৎকারে আশপাশের গ্রামের লোকজন বেড়িয়ে পড়েন। পাশাপাশি গরু চোরদের ধাওয়া করে। একপর্যায়ে চুরি করতে আসা চারজনের মধ্যে তিনজন পালিয়ে গেলেও আছির আলী প্রামাণিক নামের একজনকে আটক করতে সক্ষম হয়। এরপর তাকে স্থানীয় শুবলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নিয়ে গেলে বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসী আছিরকে গণপিটুনি দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি।
শেরপুর থানার দায়িত্বে থাকা উপ-পরিদর্শক (এসআই) আমিরুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, গরুচোর সন্দেহে গণপিটুনিতে আসিফ আলী প্রামাণিকের মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনার খবর পেয়েই পুলিশ ঘটনাস্থল যান এবং নিহতের লাশ উদ্ধার করে থানায় আনে। পরে ময়না তদন্তের জন্য লাশ বগুড়ায় শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এই ঘটনায় থানায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশের ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, গণপিটুনিতে আছির আলীর নামে একাধিক গরু চুরির মামলা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
উদ্ধার হওয়া গরুর মালিক মিজানুর রহমান বলেন, গরুসহ এলাকাবাসী চোর ধরেছে। খবর শুনে আমি গোয়াল ঘরে গিয়ে দেখি তালা ভাঙা, আমার গরু নেই। পরে শুবলী মধ্যপাড়া গিয়ে দেখি চোরদের কাছে থাকা উদ্ধার হওয়া গরুটি আমার। এরপর গরুটি বাড়িতে নিয়ে আসি।
স্থানীয় গ্রামবাসী জানান, দিনের পর দিন শুবলীসহ আশেপাশের গ্রামে চুরি হচ্ছে। কৃষকের সম্পদ গরু। গরু চুরি হলে তারা নিঃস্ব হয়ে যায়। তাই গরু চুরিরোধে গ্রামবাসী রাতজেগে পাহারা দেন। কিন্তু ঘটনার রাতে চুরি করতে এসে আছির আলী নামের একজন চোর ধরা পড়লে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী তাকে গণপিটুনি দিলে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি।
নিহতের চাচাতো ভাই তানভীর আলম বলেন, আছির আলী গরু চুরির সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে আমাদের কিছুই জানা নেই। সে একজন মাছ চাষী ও ফল ব্যবসায়ী। তাই ঘটনার রাতে শুবলী গ্রামে সে কিভাবে গেলেন সেটিও বুঝতে পারছি না। তিনি সঠিক তদন্তের মাধ্যমে ওই ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনের দাবি জানান।