নওগাঁয় মেয়ে-জামাইয়ের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ বাবার; পুলিশ তদন্তে গিয়ে পেল তার মরদেহ

নওগাঁ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১১ নভেম্বর ২০২৪ ১৯:৩৫ ।
প্রতিবেশী জেলা
পঠিত হয়েছে ৫২ বার।

বসত ভিটার ১২ শতক জমি লিখে নিতে চায় মেয়ে-জামাই। দিতে অস্বীকার করলে মেয়ে-জামাইয়ের মারধর আর নির্যাতনের শিকার হতো বৃদ্ধ বাবা টুরু মিয়া। তারই ধারাবাহিকতায় গত ৭ নভেম্বর মেয়ে-জামাইয়ের মারধর আর নির্যাতনের শিকার হয়ে ভূক্তভোগী টুরু মিয়া বদলগাছী থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। আর অভিযোগের তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ টুরু মিয়ার মরদেহ দেখতে পায়।

 

এমনই ঘটনা ঘটেছে নওগাঁর বদলগাছী উপজেলায়।  ১০ নভেম্বর বিকাল ৪টায় উপজেলার জাইজাতা গ্রামে পুলিশ গিয়ে তার মরদেহ দেখতে পায়। মরদেহে বুকের ডান পাশে অনেকটা জায়গা জুড়ে কালো জখমের দাগ আর ডান হাতের কবজির উপরে ছিল ধারালো অস্ত্রের চিহ্ন। পুলিশের ধারণা মারধরের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। তবে এঘটনায় ওই দিন রাতেই মেয়ে-জামাইকে থানা পুলিশ আটক করে নিয়ে আসে। বিষয়টি ১১নভেম্বর সোমবার  দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেন থানার অফিসার ইনচার্জ শাহ্জাহান আলী।

ওসি বলেন, এ ঘটনায় নিহতের ছেলে বাদি হয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে। সেই মামলার প্রেক্ষিতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মরদেহের একাধিক জায়গায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। আর মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নওগাঁ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

 

জানা যায়, বদলগাছী উপজেলার সদর ইউনিয়নের জাইজাতা গ্রামের মৃত আফছার আলী মন্ডলের বড় ছেলে টুরু মিয়া। বয়স প্রায় (৮৫) বছর। যুবক বয়সে কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতো। প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর টুরু মিয়া দ্বিতীয় বিয়ে করেন। প্রথম পক্ষের এক ছেলে সন্তান আছে। বনিবনা না হওয়ায় সে মহাদেবপুর উপজেলায় মাতাজীহাট সংলগ্ন গুচ্ছগ্রামে বসবাস করে। আর ২য় পক্ষের দুই কন্যা সন্তান নিয়ে জাইজাতা গ্রামে বসবাস করে টুরু মিয়া।

 

ছেলে সন্তান না থাকায় আব্দুস সালাম নামের এক যুবকের সাথে বড় মেয়ে আঙুরের বিয়ে দিয়ে নিজ বাড়িতে ঘর জামাই রাখে টুরু মিয়া। বেশ ভালোই চলছিলো সংসার। কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে বসত বাড়ীর জমি লিখে চায় মেয়ে-জামাই। বাবা দিতে  অস্বীকার করলেই করতো মারধর। মারধর করে কখনো বাড়ী থেকে বের করে দিতো। আবার কখনো মানুষের বাড়ীতে কাজ করে টাকা আনতে বলতো। টুরু মিয়া বয়সের ভারে চোখে ঠিকমতো দেখতে পায়না। মেয়ে-জামাইয়ের নিষ্ঠুর আচরণে বাধ্য হয়ে বৃদ্ধ বয়সে একমুঠো খাবার যোগানের জন্য ভিক্ষা করতো। যেদিন ভালো ভিক্ষা পেতো সেদিন বাজার করে নিয়ে যেতো বাড়ীতে। তবেই তিন বেলা ভাত জুটতো। ভিক্ষা ভালো না হলে বাজার করতে পারতো না। সেদিন মারধর করে বাড়ী থেকে বের করে দেওয়া হতো।

 

এদিকে স্থানীয়রা বলছে, মাঝে মাঝে বৃদ্ধ বাবা টুরু মিয়াকে মারধর করতো তার মেয়ে-জামাই। মারধর করার জন্য এর আগেও বেশ কয়েকবার গ্রামে এবং থানায় মেয়ে-জামাইয়ের বিরুদ্ধে শালিস হয়েছিলো। কয়েকদিন ভালো থাকার পর আবারও মারধর করতো। গত কয়েকদিন আগেও তাকে মারধর করা হয়েছিল।

অপরদিকে অভিযুক্তরা থানা হেফাজতে থাকায় তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।