নবান্ন উপলক্ষ্যে বগুড়ার গ্রামে গ্রামে মেলা বসেছে: প্রধান আকর্ষণ বড় সাইজের মাছ
স্টাফ রিপোর্টার
সরকারি হিসাবে পহেলা অগ্রহায়ণ ছিল ১৬ নভেম্বর শনিবার। আর সনাতনী পঞ্জিকামতে পরদিন অর্থাৎ আজ ১৭ নভেম্বর রবিবার পহেলা অগ্রহায়ণ। তবে বগুড়ায় সরকারি এবং সনাতনী উভয় পঞ্জিকা অনুযায়ী পহেলা অগ্রহয়ণের দিন ‘নবান্ন’ উপলক্ষ্যে গ্রামে গ্রামে মেলা বসে। শনিবার নবান্নের মেলা বসেছিল জেলার আদমদীঘি উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামে। আর রবিবার মেলা বসে বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার উথলী হাটে। এদিন নন্দীগ্রাম উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামেও নবান্নের মেলা বসে।
শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার উত্তরে ওই মেলায় সূর্যোদয়ের পর থেকেই মানুষের সমাগম বাড়তে থাকে। প্রায় ৩০০ বছরের প্রাচীণ এই মেলার প্রধান আকর্ষণ হলো মাছ। আশ-পাশের জেলা এবং উপজেলার বিভিন্ন বিল ও পুকুর এবং নদীর রুই, কাতলা, মৃগেল, ব্রিগেড, সিলভার কার্প, পাঙ্গাশের পাশাপাশি চিতল এবং কালবাউশ মাছ ওঠে ওই মেলায়। এক দিনের ওই মেলায় ছোট-বড় প্রায় দেড় শতাধিক দোকানে সন্ধ্যা পর্যন্ত অন্তত ১০ কোটি টাকার মাছ বিক্রি হয়েছে।
হিন্দু ও মুসলিম পরিবারের পুরুষরাই শুধু নন দূর-দুরান্ত থেকে নারীরাও এসেছিলেন পছন্দের মাছ কিনতে। বাবা- মা এমনকি নানা ও দাদার সঙ্গে হাত ধরাধরি এসেছিল ৮ থেকে ১৬ বছরের শিশু-কিশোররাও। মেলায় শিশুদের বিনোদনের জন্য নাগর দোলার পাশাপাশি রসগোল্লা এবং জিলাপির পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ফাস্ট ফুডেরও দেখা মিলেছে। ছিল হরেক রকমের আচারের দোকান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নবান্নের মেলা উপলক্ষ্যে উথলীর পাশাপাশি আশ-পাশের অন্তত ২০ গ্রামের ঘরে ঘরে উৎসবের আমে ছড়িয়ে পড়েছে।মেলা একদিনের হলেও আশ-পাশের গ্রামের মেয়েরা তাদের জামাইদের নিয়ে বাবার বাড়িতে এসেছেন কয়েকদিন আগে। স্থানীয়দের পাশাপাশি শহর থেকেও অনেকে গাড়ি ও মোটর বাইক নিয়ে ছুটে গেছেন নবান্নের ওই মেলায়। মাছগুলো প্রকার ভেদে প্রতি কেজি ৩০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
সকাল ১১টার দিকে ভিড় ঠেলে মেলায় ঢুকতেই দিয়া মোদক নামে চল্লিশোর্ধ এক নারীর দেখা মেলে। তিনি তার বাবাকে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। দিয়া মোদক প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমি সময় পেলে প্রতি বছর নবান্নের এই মেলায় আসি। এবারও এসেছি। আমি আমার বাবাকে সঙ্গে নিয়ে মাছের দোকানগুলো ঘুরে ঘুরে সবচেয়ে বড় মাছ কিনি। এরপর বাচ্চাদের জন্য মিষ্টি কিনে থাকি। মেলায় ঘুরতে এবং কেনা-কাটা করতে আমার খুব ভাল লাগে।’ বগুড়া শহরের মালতিনগরের বাসিন্দা শাহীন মোস্তফা ফারুক জানান, এবার তিনি তার বিশ^বিদ্যালয় পড়–য়া ছেলেকে নিয়ে মেলায় এসেছেন। তিনি বলেন,‘এ মেলার অনেক নাম শুনেছি। কিন্তু কখনও আসা হয়নি। এবার ছেলেকে নিয়ে এলাম। ভাল লাগছে।’ মেলায় দেখা হয় ইশিকা খাতুন নামে দশ বছর বয়সী এক শিশুর সঙ্গে। সে তার চাচাতো ও খালাতো আরও দুই বোনকে নিয়ে বড় বড় মাছ দেখতে এসেছে। প্রতিদিনের বাংলাদেশকে সে বলে, ‘আমার জ্যন্ত বড় মাছ দেখতে খুব ভাল লাগে। মাছ দেখা হলে আমরা মিষ্টি খেয়ে নাগরদোলায় উঠবো। এরপর মামা এসে পছন্দের মাছ কিনে আমাদের নিয়ে বাড়ি ফিরবেন।’
মাছ বিক্রেতা শিবগঞ্জ উপজেলার চালুয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা রেজাউল জানান, তিনি এক যুগেরও বেশি সময় ধরে এই মেলায় মাছ বিক্রি করছেন। এবারও রুই, কাতলা, সিলভার কার্প এবং বিগ্রেডসহ বিভিন্ন ধরনের ১২ মণ মাছ এনেছেন। রেজাউল বলেন, মাছগুলো তিনি নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলা থেকে এনেছেন। বড় ধরনের কাতলা বিক্রি করেছেন ৮০০ টাকা কেজি দরে। এছাড়া ব্রিগেড বড় সাইজেরগুলো ৬০০ টাকা এবং ছোটগুলো ৩০০ টাকা এবং রুই মাছ বিক্রি করেছেন ৪০০ টাকা কেজি দরে। বেচা- কেনা কেমন-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এবার বড় মাছের ক্রেতা কিছুটা কম। অধিকাংশ মানুষ মাঝারি ও ছোট সাইজের মাছ কিনছেন।’
বগুড়া লেখক চক্রের সভাপতি ইসলাম রফিক জানান, নবান্ন উপলক্ষ্যে বগুড়ার গ্রামাঞ্চরে হাট ও বাজারসহ বড় বড় গাছ বিশেষত বট গাটের নিচে মেলা আয়োজনের রীতি দীর্ঘদিনের। এবারও তার কমতি ছিল না। কোন কোন স্থানে তো নবান্নের দু’দিন পর বাসি নবান্নের মেলাও বসে।