পাঁচ মাসে চাকরি গেছে উচ্চপদস্থ ৪৮ পুলিশ কর্মকর্তার

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ০৪ জানুয়ারী ২০২৫ ১০:৫২ ।
দেশের খবর
পঠিত হয়েছে ২২ বার।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী সরকার পতনের পর পাঁচ মাসে চাকরি হারিয়েছেন পুলিশের উচ্চপর্যায়ের ৪৮ কর্মকর্তা। তাদের মধ্য থেকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে ৩৭ জনকে। আর সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে ১১ জনকে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও বিএনপি-জামায়াতপন্থি বিপুলসংখ্যক পুলিশ কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়। চাকরিচ্যুত করা হয় অনেক পুলিশ সদস্যকে। ওই সময়ে বরখাস্ত ও চাকরিচ্যুত বেশকিছু পুলিশ কর্মকর্তা ইতোমধ্যেই চাকরি ফিরে পেয়েছেন। অবসরে যাওয়া কোনো কোনো পুলিশ কর্মকর্তাকে গুরুত্বপূর্ণ পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ঘটনাও ঘটছে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর। তবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ নিয়ে পুলিশের অভ্যন্তরে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। ৫ মাসে যাদের বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে, তাদের সবার ক্ষেত্রেই সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ (২০১৮ সালের ৫৭নং আইন)-এর ৪৫ ধারার বিধানের কথা উল্লেখ করে জনস্বার্থের কথা বলা হয়েছে। এই ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো সরকারি কর্মচারীর চাকরির মেয়াদ ২৫ (পঁচিশ) বৎসর পূর্ণ হইবার পর যে কোনো সময় সরকার, জনস্বার্থে, প্রয়োজনীয় মনে করিলে কোনোরূপ কারণ না দর্শাইয়া তাহাকে চাকরি হইতে অবসর প্রদান করিতে পারিবে : তবে শর্ত থাকে যে, যেক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ, সেই ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন গ্রহণ করিতে হইবে।’ যাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তাদের বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ (২০১৮ সালের ৫৭নং আইন)-এর পাশাপাশি ৩৯(২) ধারার বিধানের কথা বলা হয়েছে। ৩৯(২) ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো কর্মচারী দেনার দায়ে কারাগারে আটক থাকিলে, অথবা কোনো ফৌজদারি মামলায় গ্রেফতার হইলে বা তাহার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গৃহীত হইলে, সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ উক্তরূপ আটক-গ্রেফতার বা অভিযোগপত্র গ্রহণের দিন হইতে তাহাকে সাময়িক বরখাস্ত করিতে পারিবে।’

 

১৩ আগস্ট চাকরি থেকে অবসর দেওয়া হয় অতিরিক্ত আইজপি মনিরুল ইসলাম, হাবিবুর রহমান, আব্দুল বাতেন ও ডিআইজি মনিরুজ্জামানকে। তাদের মধ্যে মনিরুল ইসলাম পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত ছিলেন। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের আগে তিনি পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। হাবিবুর রহমানও পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত ছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগ পর্যন্ত তিনি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। অবসরে যাওয়ার আগে আব্দুল বাতেন রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। আর মনিরুজ্জামান রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার হিসাবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

 

২১ আগস্ট চাকরি থেকে অবসর দেওয়া হয় অতিরিক্ত আইজপি আতিকুল ইসলাম, আনোয়ার হোসেন ও মো. আসাদুজ্জামানকে। তাদের মধ্যে আতিকুল ইসলাম ও আনোয়ার হোসেন পুলিশ সদর দপ্তরে এবং আসাদুজ্জামান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (সিটিটিসি) হিসাবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। ২২ আগস্ট অবসরের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয় অতিরিক্ত আইজপি মাহাবুবর রহমান, মোহাম্মদ আলী মিয়া ও ডিআইজি জয়দেব কুমার ভদ্রের বিষয়ে। তাদের মধ্যে মাহাবুবর রহমান শিল্পাঞ্চল পুলিশের প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। জয়দেব কুমার ভদ্র পুলিশ সদর দপ্তরে কর্মরত ছিলেন। আর পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত ছিলেন মোহাম্মদ আলী মিয়া। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের আগ পর্যন্ত তিনি ছিলেন ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টের (সিআইডি) প্রধান। ২৭ আগস্ট যাদের অবসরে পাঠানো হয় তারা হলেন অতিরিক্ত আইজিপি কৃষ্ণ পদ রায়, অতিরিক্ত ডিআইজি সরদার রফিকুল ইসলাম ও ডিআইজি মোজাম্মেল হক। তাদের মধ্যে কৃষ্ণপদ পুলিশ সদর দপ্তরে কর্মরত ছিলেন। এর আগে তিনি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার ছিলেন। অবসর প্রদানের আগে সরদার রফিকুল ইসলাম ছিলেন খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার। আর মোজাম্মেল হক ছিলেন কেএমপির কমিশনার।

 

২ সেপ্টেম্বর যাদের অবসর দেওয়া হয় তারা হলেন ডিআইজি (চলতি দায়িত্বে) ইমাম হোসেন, অতিরিক্ত ডিআইজি চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির, অতিরিক্ত আইজিপি মীর রেজাউল আলম ও খন্দকার লুৎফর কবির। তাদের মধ্যে ইমাম হোসেন সিআইডতে, মঞ্জুরুল কবির নোয়াখালী পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার ও লুৎফর কবির পুলিশ সদর দপ্তরে কর্মরত ছিলেন। আর মীর রেজাউল আলম ছিলেন ট্যুরিস্ট পুলিশের প্রধান। ২২ সেপ্টেম্বর অবসরে পাঠানো হয় অতিরিক্ত আইজিপি (সুপারনিউমারারি) একেএম হাফিজ আক্তার, বশির আহম্মদ, দেবদাস ভট্টাচার্য, এএসপি শামীম অর রশিদ তালুকদার, এসপি মীজানুর রহমান, এএসপি রফিকুল ইসলাম ও দাদন ফকিরকে। তাদের মধ্যে হাফিজ আক্তার শিল্পাঞ্চল পুলিশে কর্মরত ছিলেন। এর আগে তিনি ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ও ডিএমপি ডিবিপ্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বশির আহমেদ পুলিশ টেলিকমে, দেবদাস ভট্টাচার্য রেলওয়ে পুলিশে, শামীম অর রশিদ ডিএমপিতে, মীজানুর রহমান রঞ্জু রিজার্ভ ফোর্সে (আরআরএফ), রফিকুল ইসলাম এপিবিএন এবং দাদন ফকির ডিএমপিতে কর্মরত ছিলেন।

 

 

সবশেষ ৩১ জানুয়ারি পুলিশের চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় অতিরিক্ত আইজিপি মল্লিক ফখরুল ইসলাম, সেলিম মো. জাহাঙ্গীর ও ওয়াইএম বেলালুর রহমানকে। তাদের মধ্যে মল্লিক ফখরুল ইসলাম পুলিশ স্টাফ কলেজ, ঢাকার রেক্টার ছিলেন। এর আগে তিনি হাইওয়ে পুলিশের প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। সেলিম মো. জাহাঙ্গীর কর্মরত ছিলেন পুলিশ সদর দপ্তরে। আর বেলালুর রহমান ছিলেন পুলিশ টেলিকমে। আরও যাদের বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে তারা হলেন এএসপি জোবাইদুল হক, নাসির উদ্দিন ভূঁঞা, মি. জন রানা, জামাল উদ্দিন, এনায়েত হোসেন, সেলিম হোসেন, মোশাররফ হোসেন, এমআর শওকত আনোয়ার হোসেন, মিজানুর রহমান ও মতিউর রহমান।

 

৫ মাসে সরকার যেসব পুলিশ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করছে, তারা হলেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাবেক উপকমিশনার (সুপারনিউমারারি অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম ডিএমপির সাবেক উপকিমিশনার (ঢাকা রেঞ্জে সংযুক্ত) জসীম উদ্দিন মোল্লা, সাবেক সহকারী পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক ওয়ারী বিভাগ) তানজিল আহমেদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সুপারনিউমারারি এসপি) শাহেন শাহ, জুয়েল রানা (সুপারনিউমারারি এসপি), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আহসান খান, আহসানুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সুপারনিউমারারি এসপি) আব্দুল্লাহিল কাফি, ডিআইজি ফখরুল আলম ও ডিএমপির সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার (এডিসি) সানজিদা আফরিন। তাদের মধ্যে মশিউর রহমান, জসীম উদ্দিন মোল্লা, শাহেন শাহ, জুয়েল রানা আব্দুল্লাহিল কাফি ও সানজিদা আফরিন হলেন বহুল আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা।

 

গত বছরের সেপ্টেম্বরে রাজধানীর বারডেম হাসপাতাল থেকে ছাত্রলীগের তিন নেতাকে তুলে নিয়ে শাহবাগ থানায় আটকে নির্যাতনের ঘটনায় সানজিদার নাম আলোচনায় আসে। ওই ঘটনায় নাম আসে তার স্বামী রাষ্ট্রপতির সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) আজিজুল হক মামুন ও পুলিশের তৎকালীন আলোচিত এডিসি হারুন অর রশীদেরও। ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল বারডেম হাসপাতালে। সেখানে এডিসি হারুনের সঙ্গে ছিলেন এডিসি সানজিদা। সেখানে এডিসি হারুনকে মারধর করেন আজিজুল হক মামুন। তার জেরে ছাত্রলীগ নেতাদের ধরে থানায় নেওয়া হয়েছিল।

 

জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হত্যার দুটি মামলায় সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসানকে অব্যাহতি দিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করেছিলেন ডিএমপি ডিবির পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আরিফ। আদালতে ওই প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আগেই বিষয়টি জানাজানি হয়। জানা যায়, তিনি এডিসি সানজিদা আফরিনের নির্দেশে কাজটি করেছেন। এ ঘটনায় সানজিদা ও জাহাঙ্গীর আরিফকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। সূত্র: যুগান্তর