ওয়াজ মাহফিলে জামায়াত সমর্থক বক্তাদের প্রভাব কমাতে কৌশলী হওয়ার পরামর্শ

বগুড়ায় বিএনপি নেতা-কর্মীদের নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে কেন্দ্রের নির্দেশ

বিশেষ প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৮ জানুয়ারী ২০২৫ ০৯:৪৫ ।
দেশের খবর
পঠিত হয়েছে ৫৫ বার।

জাতীয় সংসদের নির্বাচন চলতি বছর অর্থাৎ ২০২৫ সালের মধ্যেই হতে পারে জানিয়ে বিএনপি’র ঘাঁটি বগুড়ায় ওই দল এবং তার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদেরকে এখন থেকেই সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গত ৬ জানুয়ারি সোমবার বগুড়ায় অনুষ্ঠিত জেলা বিএনপি’র কর্মী সভায় আসছে সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এক গুচ্ছ নির্দেশনা দেন। শহরের নওয়াববাড়ি সড়কে একটি কমিউনিটি সেন্টারে সোমবার সকাল ১১টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত চলা কর্মীসভায় দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন বগুড়া বিএনপিকে সাংগঠনিকভাবে তদারকির দায়িত্বপ্রাপ্ত দলটির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম। সভায় দলটির রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকত ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ওবায়দুর রহমান চন্দনও বক্তৃতা করেন। 

 


সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আসছে সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতিতে যাতে কোন ঘাটতি না থাকে সেজন্য স্থানীয় নেতৃবৃন্দকে উপজেলা এবং পৌরসভা পর্যায়ে কোন দ্ব›দ্ব এবং কোন্দল থাকলে তা দ্রæত মিটিয়ে ফেলার পাশাপাশি নিজেদের মধ্যে সমন্বয় বাড়ানোরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা  তৃণমূলের নেতৃবৃন্দের উদ্দেশ্যে বলেছেন, সংসদ নির্বাচনে জেলার আসনগুলোতে কারা মনোয়ন পাবেন সেটি বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানই নির্ধারণ করবেন। তিনি যাকে মনোনয়ন দিবেন তার পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। 

 


উল্লেখ্য বিএনপি চেয়ারপার্সন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এবং তার বড় ছেলে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বগুড়া জেলা বিএনপি’র নির্বাহী কমিটির সদস্য। সোমবারের সভায় ওই দু’জন ছাড়া সকলেই উপস্থিত ছিলেন। এর পাশাপাশি২৪টি সাংগঠনিক ইউনিটের (১২টি উপজেলা ও ১২টি পৌরসভা কমিটি) প্রতিটি থেকে ৫জন করে নেতা এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর জেলা কমিটির সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

 


জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মী সভায় কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাবেক এমপি কাজী রফিকুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম, আলী আজগর হেনা ও জেলা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সাবেক সংসদ সদস্য মোশারফ হোসেন বক্তৃতা করেন। পুরো কর্মী সভা সঞ্চালনা করেন জেলা বিএনপি’র তিন সাংগঠনিক সম্পাদক যথাক্রমে শহীদুন্নবী সালাম, খায়রুল বাশার এবং জাহিদুল ইসলাম।

 


কর্মী সভায় উপস্থিত এক নেতা জানান, প্রধান অতিথি’র স্বাগত বক্তব্যের পর পরই বিভিন্ন উপজেলা এবং পৌরসভা কমিটির নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখতে শুরু করেন। সভায় তৃণমূলের একাধিক নেতা বগুড়ার কয়েকটি উপজেলায় নানাভাবে জামায়াতে ইসলামীর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা এবং ধর্মীয় ওয়াজ মাহফিলগুলোতে জামায়াত সমর্থক বক্তাদের ব্যাপক উপস্থিতি ও জামায়াতের পক্ষে প্রচার চালানোর কথা জানিয়ে বলেন, ওয়াজ মাহফিলের নামে জামায়াতের সমর্থক বক্তাদের কারণে বিএনপি সমর্থক জনগণ বিভ্রান্ত হচ্ছেন। এ বিষয়ে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের করণীয় কি হবে তাও তারা জানতে চান। জবাবে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ জেলার সব ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, পৌরসভা এবং উপজলো পর্যায়ে বিএনপি এব্ ংএর সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সাংগঠনিক তৎপরতা আরও বৃদ্ধির নির্দেশ দেন। জামায়াতের প্রভাব যেখানে বেশি মনে হবে সেখানে বেশি বেশি সাংগঠনিক তৎপরতা চালানোর নির্দেশ দিয়ে নেতৃবৃন্দ বলেন, এর পাশাপাশি প্রতিটি ওয়াজ মাহফিলে বিএনপি নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি বাড়াতে হবে। বলা হয়, ওয়াজ মাহফিলগুলোতে বিএনপি নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি যত বাড়বে বক্তাদের রাজনৈতিক বক্তব্য তত কমে আসবে। এর পরেও যদি কোন বক্তাকে নিয়ে সন্দেহ থাকে তাহলে সেই বক্তাকে মাহফিলে ধর্মীয় আলোচনার বাইরে রাজনৈতিক বক্তব্য না দেওয়ার জন্য আগে-ভাগেই অবহিত করার পরামর্শ দেওয়া হয়। 

 


সভা সূত্র জানায়, জেলার ২৪টি ইউনিটের মধ্যে ধুনট, আদমদীঘি, শেরপুর এবং সোনাতলা ইউনিটের নেতৃত্ব নিয়ে স্থানীয়ভাবে কিছু অসন্তোষের কথা উঠে আসে। তখন প্রধান অতিথি সকলকে দ্ব›দ্ব-কোন্দল ভুলে প্রত্যেককে নিজেদের মধ্যে সমন্বয় করে কাজ করার নির্দেশ দেন। এক পর্যায়ে কয়েকজন নেতা তাদের নিজ ইউনিটে নেতৃত্ব নিয়ে সৃষ্ট অসন্তোষ নিরসনের প্রক্রিয়া নিয়ে দলের চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালামের সঙ্গে একান্তে কথা বলতে চাইলে তিনি তাতে সম্মত হন এবং আলাদাভাবে কথাও বলেন।

 


কর্মী সভায় আলোচিত বিষয় সম্পর্কে জানতে চাইলে বগুড়া জেলা বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সাবেক এমপি মোশারফ হোসেন বলেন, ২০২৫ সালের মধ্যেই সাধারণ নির্বাচন হতে পারে জানিয়ে আমাদেরকে এখন থেকেই সার্বিক প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। যেহেতু বগুড়া আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জেলা তাই এখানে সবাইকে সততা এবং নিষ্ঠার সঙ্গে সাংগঠনিক তৎপরতা চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দলীয় মনোনয়ন যাকেই দেওয়া হোক না কেন তার পক্ষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে কোথাও যাতে কোন ভুল বুঝাবুঝি না হয় সেজন্য সকলকে সমন্বয় চরে চলতেও বলা হয়েছে। ধর্মীয় ওয়াজ মাহফিলগুলোতে জামায়াত সমর্থক বক্তাদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের নেতা-কর্মীদের প্রতিটি ওয়াজ মাহফিলে উপস্থিতি বাড়াতে বলা হয়েছে। কারণ কোন ওয়াজ মাহফিলে যখনই আমাদের নেতা-কর্মীরা থাকবেন তখন কোন বক্তাই আর ধর্মীয় বিষয়ের বাইরে কোন রাজনৈতিক বক্তব্য দিতে চাইবেন না।’ মেয়াদ ফুরিয়ে আসায় জেলা বিএনপির কমিটি ভেঙ্গে দেওয়া বা নতুন কমিটি গঠনের কোন আলোচনা হয়েছে কি’না- এমন প্রশ্নের জবাবে বগুড়া জেলা বিএনপি’র সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা বলেন, ‘না এ ধরনের কোন আলোচনা হয়নি। নির্বাচনকে সামনে রেখে দলকে কিভাবে সাংগঠনিকভাবে প্রস্তুত করা যায় মূলত সেসব বিষয় নিয়েই আলোচনা হয়েছে।’