মহাস্থানগড়ে শাহ সুলতানের স্মরণে সাধু-সন্ন্যাসীর ভিড়

অরুপ রতন
প্রকাশ: ০৮ মে ২০২৫ ১৭:৩৭ ।
প্রধান খবর
পঠিত হয়েছে ৩০ বার।

বগুড়ার মহাস্থানগড়ে প্রতি বছর বৈশাখ মাসের শেষ বৃহস্পতিবার বসে এক বিশেষ মেলা। এই দিনে স্মরণ করা হয় সুফি সাধক হযরত শাহ সুলতান মাহিসওয়ার বলখী (রহ.)-কে। দূর-দূরান্ত থেকে হাজারো সাধু-সন্ন্যাসী, বাউল, ভক্ত ও সাধারণ মানুষ এই মেলায় আসেন।

সকালের আলো ফোটার আগেই আসতে শুরু করেন ভক্তরা। কেউ গান গেয়ে, কেউ নাচে, আবার কেউ শুধু প্রার্থনায় অংশ নিতে আসেন। নানা ধর্ম ও মতের মানুষ এখানে একসাথে মিলিত হন। এই মিলনমেলা শুধু ধর্মীয় নয়, লোকজ সংস্কৃতি ও সম্প্রীতির এক সুন্দর উদাহরণ।

জনশ্রুতি রয়েছে, বহু বছর আগে এই দিনে শাহ সুলতান (রহ.) মহাস্থানগড় জয় করেছিলেন এবং তখনকার এক রাজা পরশুরামের অত্যাচার বন্ধ হয়েছিল। অনেকে বলেন, এই দিনেই শাহ সুলতান (রহ.) ইন্তেকাল করেন। আবার কেউ বলেন, রাজকন্যা শিলা দেবী করতোয়া নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মাহুতি দিয়েছিলেন। এসব কাহিনি থেকেই এই দিনে মেলা বসে।

মাজার এলাকা ঘিরে বসে বড় মেলা। সেখানে নানা জিনিসের দোকান দেখা যায়—খাবার, খেলনা, ধর্মীয় পণ্যসহ অনেক কিছু। ‘কটকটি’ নামের একটি মিষ্টি খাবার এখানকার ঐতিহ্য, যা কিনে নিয়ে যান সবাই।

মাজারের পাশে ‘দুধ পাথর’ নামে এক জায়গায় অনেকে দুধ ঢালেন আশার প্রতীক হিসেবে। কেউ কেউ সেই দুধ পান করেন, আবার কেউ মানত করেন।

জয়পুরহাটের খলিলুর রহমান বলেন, "৫০ বছর ধরে এই মেলায় আসি। প্রতিবছর মানুষ আরও বাড়ছে।"

পাবনার জামাল শেখ বলেন, "আমি আগে গাড়ি চালাতাম। এখনো জানি না কেন, শাহ সুলতানের টানে প্রতি বছর আসি। এবার স্ত্রীকেও এনেছি।"

ফকির সাইফুল সাইজি নামে এক সাধু বলেন, "রাতভর ইবাদত করবো। সকালে জুমার নামাজ আর আখেরি মোনাজাত শেষে চলে যাব।"

মাজার কমিটির কর্মকর্তা জাহেদুর রহমান জানান, “প্রতি বছর লাখো ভক্ত মেলায় অংশ নেন। সারা রাত চলে প্রার্থনা ও গান। পরদিন জুমার নামাজ দিয়ে শেষ হয় আয়োজন।”

শিবগঞ্জ থানার ওসি শাহীনুজ্জামান জানান, “মেলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় চার স্তরের নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে। কাজ করছে পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, র‍্যাব ও আনসার। স্থাপন করা হয়েছে শতাধিক সিসিটিভি ক্যামেরা।”