নওগাঁয় জমে উঠেছে কুরবানীর পশুর হাট: দাম নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া
এম আর ইসলাম রতন
নওগাঁয় জমে উঠতে শুরু করেছে কুরবানীর। ছোট বড় মিলে জেলার ৩৮ হাজার ৬ শ খামারি সহ ব্যক্তি উদ্যোগে প্রস্তুতকৃত প্রায় ৮ লাখ গবাদি পশু বিভিন্ন হাটে ক্রমান্বয়ে উঠতে শুরু করেছে।
ক্রেতা বিক্রেতাদের হাঁকডাকে মুখরিত হাট প্রাঙ্গণ। এবারও বড় গরুর তুলনায় ছোট ও মাঝারি গরুর চাহিদাই বেশি। তবে দাম নিয়ে রয়েছে নানা মতামত ও অভিযোগ। কোরবানির পশু হাটগুলোতে প্রশাসনের পক্ষে সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। হাট গুলিতে গরুর সুস্থতা যাচাইয়ের জন্য প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম কাজ করছেন ও জাল টাকা পরীক্ষার জন্য ব্যাংক প্রতিনিধি নিয়োজিত রয়েছেন। এবছরও কোরবানির পশুর দাম বেশি বলে জানান ক্রেতারা অপরদিকে গো-খাদ্যের যে দাম তাতে খামারিরা লোকসানের মুখে পরবে বলে জানান খামারীরা।
বিক্রেতারা বলছেন, হাটে ছোট ও মাঝারি আকারের গরুর চাহিদা বেশি। বড় গরুর কেউ কিনতে চাইছেন না। বড় আকারের গরুর ক্রেতা কম থাকায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন বিক্রেতেরা। এছাড়াও হাটগুলোতে গরুর সরবরাহ বেশি হওযায় খরচের তুলনায় তেমন দাম পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন তারা। এতে শঙ্কায় খামিরা ও প্রান্তিক চাষিরা।
ক্রেতারা বলছেন, ঈদের এখনো বেশ কয়েকদিন বাকি আছে। এখন গরু কিনলে বাড়িতে রেখে লালন-পালন কষ্টসাধ্য। ঈদের দু-একদিন আগে গরু কিনলে বাড়িতে রাখা সহজ হবে। তাই শেষ দিকে গরু কেনার অপেক্ষায় আছেন তারা। তবে গতবারের চেয়ে গরুর দাম বেশি বলে দাবি তাদের।
নওগাঁ জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কোরবানির ঈদ উপলক্ষে এ বছর জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে ৩৮ হাজার ৫৭৩টি খামারে দেশীয়, অস্ট্রেলিয়ান, ফ্রিজিয়ানসহ বিভিন্ন জাতের প্রায় ৭ লাখ ৮৮ হাজার ৩২০টি গবাদিপশু লালনপালন করা হয়েছে। জেলায় চাহিদা রয়েছে প্রায় ৩ লাখ ৮৬ হাজার ৪৩৭টি পশু। এসব গরু বেচাকেনার জন্য জেলায় স্থায়ী ও অস্থায়ী প্রায় ৩৬টি হাট বসানো হয়েছে। এছাড়াও উদ্বৃত্ত পশু ব্যবসায়ীরা দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করবেন।
নওগাঁ জেলার সবচেয়ে বড় পশুর হাট মান্দা উপজেলার চৌবাড়িয়া, সতিহাট, মহাদেবপুর উপজেলার মাতাজি, রানীনগর উপজেলার আবাদপুকুর ঘুরে দেখা যায়, দুপুর ১২টার পর থেকেই এসব হাটে বিভিন্ন জাতের ও আকারের গরু নিয়ে আসতে শুরু করেন খামিরা, প্রান্তিক চাষি ও ব্যাপারীরা। দুপুর ২টার পর থেকে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় হাটগুলো। এরপর ক্রেতা-বিক্রেতাদের উপস্থিতে সরগরম হয়ে উঠে। হাটগুলোতে ক্রেতারা আসছে, দেখছেন, ঘুরছেন দরদাম করে কিনছেন পছন্দের পশু। তবে ভারতীয় গরু না থাকায় দেশীয় গরুর চাহিদায় বেশি। ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকার ছোট ও মাঝারি আকারের গরুর চাহিদা বেশি। এসব হাটে ক্রেতাদের পাশাপাশি ভিড় জমাচ্ছেন ঢাকা ও ঢাকার বাইরের বড় ব্যবসায়ীরা। তবে দাম নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায় ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে।
জেলার সবচেয়ে বড় পশুর হাট চৌবাড়িয়া। এই হাটে মহাদেবপুর উপজেলা থেকে আসা খামারী আব্দুর রহমান বলেন, হাটে প্রচুর দেশি গরু উঠেছে। গো-খাদ্য, খড়ের দাম বেড়ে যাওয়ায় গরু লালন-পালনে এবছর গরু প্রতি ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা বেশি খরচ হয়েছে। কিন্তু সে তুলনায় দাম বলছে না। বড় গরুর দাম আরও কম দিতে চাচ্ছেন ক্রেতারা। তার ওপর ফেরত নিয়ে গেলে আবার খরচ আছে। তাই কিছুটা লোকসান হলেও বিক্রি করে চলে যাব।
আরেক খামারী খায়রুল মন্ডল বলেন, আমার খামারে ১২ টি ষাঁড় পালন করেছি। ২২ লাখ টাকার উপরে খরচ হয়েছে। ব্যাপারীরা এসে ১২ টি গরু ২০থেকে ২২ লাখ টাকা দাম করছে এতে লোকসানের আশংকা করছি । তিনি বলেন হাটে তুলে দেখি কত টাকা বিক্রি করা যায় । লাভের মুখ দেখছিনা।
তবে বিক্রেতার দাবির সঙ্গে একমত নন ক্রেতারা। এই হাটে গরু কিনতে আসা সোলাইমান হোসেন বলেন, হাটে প্রচুর পরিমাণে দেশি গরু উঠছে। গরুগুলো দেখতেও খুব সুন্দর। তবে দাম একটু বেশি মনে হচ্ছে। গত বছরের চেয়ে ৮ থেকে ১২ হাজার টাকা বেশি চাওয়া হচ্ছে।
শফিকুল ইসলাম নামের আরেক ক্রেতা বলেন, আমরা যারা কোরবানি দেই, আমাদের অনেকের গরু রাখার জায়গা থাকে না। তাই ঈদের দু-তিন দিন আগেই কোরবানির পশু কিনে থাকি। আজ শুধু ঘুরে ও দরদাম করছি। যদি আশানূরুপ দাম হয় তবে গরু কিনেও ফেলতে পারি।
নওগাঁ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মাহফুজার রহমান বলেন, সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে পশু লালন-পালনে আগে থেকেই জেলার খামারিদের মাঝে প্রচারণা চালানো হয়েছে। চাহিদার চেয়ে অতিরিক্ত পশু থাকায় কোনো সঙ্কট হবে না। হাটগুলোর বিভিন্ন স্থানে মেডিক্যাল টিম বসানো হয়েছে। এছাড়াও নওগাঁ সীমান্তবর্তী জেলা হওযায় যাতে ভারতীয় গরু না আসে এজন্য প্রশাসনের সাথে যোগায়োগ রাখা হচ্ছে। আশা করি এবছর খামারিরা লাভের মুখ দেখবেন। আর চাহিদার অতিরিক্ত গবাদি পশু বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হবে।
নওগাঁর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাফিউল সারোয়ার বলেন, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে বিশেষ উদ্যোগ। পশুবাহী যানবাহন এবং হাট কেন্দ্রিক যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে জোরদার নিরাপত্তা থাকবে। ক্রেতা- বিক্রেতারা যাতে নিশ্চিন্তে হাটগুলোতে পশু ক্রয়-বিক্রয় করতে পারেন সেদিকে আমাদের সার্বক্ষনিক নজরদারী রয়েছে।
এদিকে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল বলেন, জেলার হাটগুলোতে যেন কেউ গবাদিপশুসহ সকল পণ্যের অতিরিক্ত খাজনা আদায় করতে না পারে, সেই লক্ষ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চলমান রাখা হয়েছে। প্রতিটি হাটে জেলা ও উপজেলা কোরবানির পশু ক্রয় ও বিক্রয় সুন্দরভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে বিগত সময়ের চেয়ে এবার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গ্রহণ করা কঠোর পদক্ষেপ হিসেবে মাঠপর্যায়ে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত সব সময় কাজ করবে বলে জানান জেলা প্রশাসক। "