নওগাঁর এনসিপি সংগঠক পরাগের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ নেতাকে পুনর্বাসনের অভিযোগ

নওগাঁ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ৩১ মে ২০২৫ ২০:১৬ ।
প্রতিবেশী জেলা
পঠিত হয়েছে বার।

নওগাঁয় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সংগঠক ইমরুল আখিয়ার পরাগ এর বিরুদ্ধে ফ্লাট বাণিজ্যের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ  নেতাকর্মীদের পুনর্বাসনের অভিযোগ উঠেছে।  


সম্প্রতি পলাতক জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বিমান কুমার রায়ের স্ত্রী ববি রায়ের কেনা ফ্লাটে হামলা চালিয়ে লুটপাট করার পর সেটা দখলে নিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে বিএনপি নেতা পরিচয় দিয়ে নওগাঁ সুরমা মাল্টিপারপাস সমিতির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও আওয়ামী লীগের নেতা সবেদুল ইসলাম রনি কে ওই ফ্ল্যাটে বসবাস করার সুযোগ দিয়ে পুনর্বাসনের চেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এদিকে এনসিপির জেলা কমিটিতে বিতর্কিত ব্যক্তি ইমরুল আখিয়ার পরাগ সভাপতি, পদ পাচ্ছেন বলে প্রচার হাওয়ায় ক্ষোভ দেখা দিয়েছে দলটির প্রতি আস্থা জন্মানো তরুণ সমর্থকদের মাঝে।


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে নওগাঁর বিশিষ্ট আবাসন ব্যবসায়ী শাহরিয়ার পারভেজ এর ছোট ভাই ও আবাসন ব্যবসার অন্যতম সহযোগী ইমরুল আখিয়ার পরাগ নওগাঁ শহরের পার-নওগাঁ মেরিগোল্ডপাড়া মহল্লার বাসিন্দা । বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় থেকে এখন পর্যন্ত জাতীয় নাগরিক কমিটি(এন সি পি) জেলা কমিটি গঠনে সংগঠক হিসেবে নানা কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছেন। এই অবস্থায় পরাগ সংগঠনের নাম ভাঙ্গিয়ে জেলা যুবলীগের সাধারন সম্পাদকের স্ত্রীর ফ্ল্যাট দখলে নিয়ে পলাতক এক আওয়ামী লীগ নেতাকে পুনর্বাসন করে। শুধু তাই নয় থানায় তদবির করে সবেদুল ইসলাম রনিকে দিয়ে আবার অবৈধ দখলের অভিযোগ উত্থাপন করে পলাতক জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে থানায় মামাদের করা হয়েছে। 


এনসিপির স্থানীয় নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, বড় ভাই শাহরিয়ার পারভেজ আবাসন ব্যবসায়ী হওয়ায় শহরে থেকে ভাইয়ের ব্যবসা দেখাশোনা করেন ইমরুল আখিয়ার পরাগ। সেই সুবাদে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও বড় বড় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আগে থেকেই সখ্যতা রয়েছে পরাগের। গত বছরের ৬ মার্চ পার নওগাঁ মহল্লার স্টেডিয়াম পাড়ায় তাদের নির্মিত ৭ তলা অ্যাপার্টমেন্টে ১ হাজার ২৫০ বর্গফুট আয়তনের একটি ফ্ল্যাট (৬/বি) কেনেন জেলা যুবলীগের সাধারন সম্পাদক বিমান কুমার রায় এর স্ত্রী ববি রায়। এরপর থেকে সেখানেই স্বপরিবারে বসবাস করতেন যুবলীগ সম্পাদক। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর থেকেই স্ব-পরিবারে গা ঢাকা দিয়েছেন যুবলীগ নেতা বিমান। এরপরই ফ্ল্যাটটিতে কয়েক দফায় লুটপাট করেন ইমরুল আখিয়ার পরাগ। এক পর্যায়ে ফ্ল্যাটটি পুরোপুরি হাতিয়ে নেওয়ার পরিকল্পিত ছক আঁকেন পরাগ। পত্নীতলা-ধামইরহাট আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সাংসদ শহিদুজ্জামান সরকারের আস্থাভাজন পত্নীতলা উপজেলার পাটিচড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক ছবেদুল ইসলাম রনিকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে পুনর্বাসনে মাঠে নামেন পরাগ। গ্রাহকদের ৫শ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে প্রায় ১ বছর পলাতক থাকা সুরমা মাল্টিপারপাস এর ব্যবস্থ্যাপনা পরিচালক আওয়ামী লীগ নেতা রনিকে আশ্রয় দেয়া হয় যুবলীগ সম্পাদকের স্ত্রীর মালিকানাধীন ফ্লাটে। আওয়ামী লীগ নেতা রনিকে বিএনপি নেতা হিসেবে পরিচিত করতে জোড়ালো তৎপরতা চালাতে থাকেন ইমরুল আখিয়ার পরাগ। এক পর্যায়ে ফ্লাটটি নিজেদের দখলে রাখতে গত ২২ ডিসেম্বর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক ছবেদুল ইসলাম রনিকে বাদী করে যুবলীগ নেতা বিমান ও তার স্ত্রীসহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও অবৈধভাবে ফ্ল্যাট দখলের মিথ্যে মামলা দায়ের করান ইমরুল আখিয়ার পরাগ।


নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনসিপির জেলা পর্যায়ের এক সংগঠক বলেন, জুলাই বিপ্লবের পর আওয়ামী লীগের পলাতক নেতারা বিভিন্ন কৌশলে মাঠে ফেরার চেষ্টা করছেন। দেশকে অস্থিতিশীল করতে পায়তারা করে যাচ্ছেন তারা। এই মুহুর্তে তাদের প্রতিহত না করে পুনর্বাসনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন ইমরুল আখিয়ার পরাগ। ছবেদুল ইসলাম রনি আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রীদের অর্থের যোগানদাতা ছিলেন। এটা সকলেরই জানা। সেই রনিকে পুনর্বাসন করছেন পরাগ। যুবলীগ নেতার স্ত্রীর ফ্লাট দখলে নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা রনিকে সেখানে নিরাপদ আশ্রয় করে দিয়েছেন তিনি।


এবিষয়ে কথা বলতে ফ্ল্যাটে অবস্থানরত আওয়ামী লীগ নেতা ছবেদুল ইসলাম রনি’র ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।


পলাতক যুবলীগ সম্পাদক বিমান কুমার রায়ের  স্ত্রী ববি রায় বলেন, ইমরুল আখিয়ার পরাগের বড় ভাই শাহরিয়ার পারভেজের কাছে থেকে ২৫ লক্ষ টাকায় ফ্লাটটি কিনে বাবা-মা আমাকে উপহার দিয়েছিলেন। সেই ফ্লাটে অন্তত ৭ লাখ টাকার ফার্নিচার ছিলো। যার সবটুকুই লুটপাট করেছেন পরাগ। এখন সেই ফ্লাট হাতিয়ে নিতে সে বিক্রিত ওই ফ্লাটটি রনির মালিকানাধীন বলে প্রচার করছে। এ নিয়ে থানায় রনিকে বাদী করে মিথ্যে মামলাও করিয়েছেন পরাগ। অথচ ফ্ল্যাট বিক্রির বেশ কিছু টাকা পরাগ নিজ হাতে গুনে নিয়েছেন। শাহরিয়ার পরভেজের ব্যাংক হিসাবেও টাকা দেওয়া হয়েছে। যার সকল প্রমাণাদি আমার কাছে রয়েছে।


বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নওগাঁয় নেতৃত্ব দেওয়া সমন্বয়ক ফজলে রাব্বী বলেন, আওয়ামী লীগ নেতাকে বিএনপি নেতা পরিচয় দিয়ে থানায় তদবিরের মাধ্যমে মিথ্যে মামলা দায়ের করার ক্ষেত্রে ইমরুল আখিয়ার পরাগের এমন ভূমিকায় এনসিপির ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে। নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে এনসিপির কোন সংগঠকের কাছে থেকে দখলদারিত্ব বা আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনের অপরাজনীতি কাম্য নয়। অভিযোগগুলো ক্ষতিয়ে দেখে সত্যতা পাওয়া গেলে এমন বিতর্কিত কাওকে সংগঠনে ঠাই হবে না। সংগঠন থেকে তাদের বহিষ্কার করা হবে। 


অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নওগাঁর সংগঠক ইমরুল আখিয়ার পরাগ বলেন, ছবেদুল ইসলাম রনির রাজনৈতিক পরিচয় আমার জানা ছিলো না। একজন ইটভাটা ব্যবসায়ী হিসেবে সে আমাদের অ্যাপার্টমেন্ট তৈরীর সময় ইট সরবরাহ করেছিলো। বিনিময়ে রনিকে একটি ফ্লাট দেওয়ার চুক্তি হয়েছিলো। পরে রনির ওই ফ্লাটটি জোরপূর্বক দখলে নিতে এসেছিলো যুবলীগ নেতা বিমান। পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটের পর রনি ফিরে এসে তার ফ্লাট বুঝে নিয়েছে। দখলবাজ যুবলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। এসবের মধ্যে আমার কোন সম্পৃক্ততা নেই। রনিকে পুনর্বাসনের প্রশ্নই আসে না।


যুবলীগ সম্পাদকের স্ত্রীর কাছে ফ্লাট বিক্রি ও আর্থিক লেনদেন এবং লুটপাট সম্পর্কে জানতে চাইলে পরাগ বলেন, এসব অভিযোগ মিথ্যে ও ভিত্তিহীন। আমি বা আমার ভাই কেউই তাদের কাছে ফ্লাট বিক্রি করিনি। খুব শীঘ্রই এনসিপির জেলা কমিটি ঘোষণা হবে। এই সময়ে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে একটি পক্ষ উদ্দেশ্য প্রণোদীতভাবে এসব অপপ্রচার করছে। এনসিপির ভেতরে কিছু ফ্যাসিবাদের দোসর ঢুকে পড়েছে। আওয়ামী পুনর্বাসনকারীদের প্রতিহত করায় আমাকে বেকায়দায় ফেলতে চাচ্ছেন তারা।


এ বিষয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন বলেন, নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে ফ্রেশ ইমেজের নেতা খুঁজছে এনসিপি। এই দলে আওয়ামী লীগ পুনর্বাসন ও দখলবাজিতে জড়িত এমন কাওকে কখনোই মূল নেতৃত্বে আনা হবে না। যেহেতু নওগাঁ জেলায় কমিটি গঠনের দায়িত্বে আছি “অবশ্যই বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবো”। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে এনসিপির সকল কার্যক্রম থেকে ইমরুল আখিয়ার পরাগকে সরিয়ে দেওয়া হবে।