বগুড়ায় সাতমাথা অবরুদ্ধ করেছিলেন শিক্ষার্থীরা
বাসস
২০২৪ সালের আজকের দিনটি বগুড়ায় ছিল বৃষ্টিস্নাত। বৃষ্টি উপেক্ষা করেই শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে থাকেন শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথায়। উদ্দেশ্য ছিল গণমিছিল ও সড়ক অবরোধ।
সেদিন শান্তিপূর্ণ সমাবেশের মধ্যে দিয়ে প্রায় ৪ ঘণ্টা সাতমাথা অবরুদ্ধ করে রেখেছিলেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীরা।
২ আগস্ট জুমার নামাজের পর বগুড়ায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সাতমাথায় জড়ো হয়ে অভূতপূর্ব প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া সহিংসতা ও সংঘর্ষে নিহত এবং গণগ্রেপ্তারের প্রতিবাদে এই কর্মসূচি ছিল দেশব্যাপী।
কর্মসূচিতে সমবেত গান, দেয়াল চিত্র আঁকিয়ে ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ করেন শিক্ষার্থীরা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা কর্মসূচির কারণে সেদিন সাতমাথা অচল হয়ে পড়েছিল। সাতমাথা এলাকার সড়কে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি-দাওয়া সংবলিত বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। এর মধ্যে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হলেও শিক্ষার্থীরা তাদের অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যান।
বেলা তিনটার দিকে জেলা আইনজীবী সমিতির নেতা আবদুল বাছেদের নেতৃত্বে বিএনপি-সমর্থিত আইনজীবী ও পেশাজীবীরা মিছিল নিয়ে সাতমাথায় এসে শিক্ষার্থীদের কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন।
কর্মসূচিতে বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজ, সরকারি মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজ, সরকারি মহিলা কলেজ, বগুড়া জিলা স্কুল, বগুড়া সরকারি কলেজ, বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বগুড়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটসহ জেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী ও অভিভাবক অংশ নেন।
কর্মসূচি চলাকলে সাতমাথায় সব সড়ক অবরোধ করা ছিল। সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে শিক্ষার্থীরা নিজ ইচ্ছায় ফিরে যান। তখন সাতমাথা ছিল ফাঁকা। সন্ধ্যার পর স্বাভাবিক হয় যান চলাচল।
আন্দোলনে অংশ নেওয়া কয়েক শিক্ষার্থী জানান, সে সময় শেখ হাসিনা সরকারের নির্দেশে পুলিশ নানাভাবে শিক্ষার্থীদের হয়রানি করে। মামলা, গ্রেপ্তার তো ছিলই। রাস্তায় কিশোর-কিশোরী ও তরুণ-তরুণীদের দেখলেই মোবাইল চেক করা হত। রাতে বাসা, বাড়ি ও মেসে অভিযান চালিয়ে শিক্ষার্থীদের অহেতুক হয়রানি করা হয়।
এর আগের দিন সারিয়াকান্দিতে উপজেলা প্রশাসনের স্পিডবোটে নাশকতার নামে সাজানো মামলায় দুই শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করে আদালতে চালান করা হয়। ওই দুই শিক্ষার্থী সারিয়াকান্দি সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ছিল। ফ্যাসিস্ট সরকারের গদি ঠিক রাখতে সে সময় স্কুলছাত্রদেরও রেহাই দেয়নি।
আন্দোলনের অন্যতম নেতা নিয়তি সরকার জানান, কোটা সংস্কার নিয়ে আন্দোলনে সারাদেশে সহিংসতা ও সংঘর্ষে নিহত এবং গণগ্রেপ্তারের প্রতিবাদে আমরা কর্মসূচি পালন করি। আমরা বিভিন্নভাবে প্রতিবাদ জানাই।
সহিংসতার পরিবর্তে আমরা অহিংস আন্দোলন গড়ে তুলেছিলাম।
গত ২ আগস্টের কথা স্মরণ করে শহরের মালতিনগরের নাজনীন আরা নামে এক অভিভাবক জানান, সেদিন বাচ্চাদের সঙ্গে আমরাও গিয়েছিলাম। কারণ দাবি-দাওয়া তখন শুধু শিক্ষার্থীদের মধ্যে নেই, এটি সাধারণ মানুষের দাবিতে পরিণত হয়েছে। সেদিন সব শ্রেণী-পেশার মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছিল।
বগুড়া জজ আদালতের আইনজীবী মানিক হোসেন বলেন, গত বছরের জুলাইয়ের পরপরই সবাই বুঝেছে যে আমাদের পিছু হটার আর কিছু নেই। আমাদের সন্তানদের রাস্তায় গুলি করে মারছে, গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাচ্ছে।
ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার উন্মাদ হয়ে গেছে এটা তখন সবার মধ্যে পরিস্কার। তাই আন্দোলনের একটাই লক্ষ্য হাসিনা সরকারের পতন। ২ আগস্ট থেকে আন্দোলন সেদিকে ধাবিত হয়