বগুড়ায় শ্যামল ভট্টাচার্য্য স্মৃতি সম্মাননা পাচ্ছেন চার গুণীজন
স্টাফ রিপোর্টার
আগামী ৪ নভেম্বর অসাম্প্রদায়িক মননের প্রতীক, শ্রদ্ধেয় শিক্ষক, সংস্কৃতি অঙ্গনের প্রতিভূ, মুক্তবুদ্ধি ও প্রগতিশীল চেতনার বাতিঘর শ্যামল ভট্টাচার্য্যরে ৫ম মৃত্যুবার্ষিকী। ওই তিনি বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালের আইসিইউতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। তার শেষ ইচ্ছানুযায়ী পারিবারিক সম্মতিতে চিকিৎসা বিজ্ঞানের কল্যাণে তাঁর মরণোত্তর দেহদান করা হয় বগুড়া শজিমেকের এনাটমি বিভাগে।
তার মৃত্যুবাষির্কী উপলক্ষে বগুড়ার এবার চার গুণীজনকে শ্যামল ভট্টাচার্য্য স্মৃতি সম্মাননা প্রদান করা হচ্ছে। সম্মাননাপ্রাপ্তরা হলেন- শিক্ষায় বগুড়া জিলা স্কুলের সাবেক শিক্ষক শ্যামপদ মুস্তফী, সঙ্গীতে যৌথভাবে বগুড়ার রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ ও নাট্য নির্দেশক মৃণাল কান্তি সাহা (মরণোত্তর) ও বগুড়া ইয়্যুথ কয়্যারের সাধারণ সম্পাদক তৌফিকুল আলম টিপু এবং নাটকে অভিনয় শিল্পী ও নাট্য নির্দেশক, অ্যাডভোকেট সৈয়দ সুলতান আলম।
আগামী ৬ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যা ৬টায় ‘ম্যাক্স মোটেল মিলনায়তনে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র বগুড়ার উদ্যোগে ও শ্যামল ভট্টাচার্য্য স্মৃতি পরিষদের সহযোগিতায় গুনীজনদের এই সম্মাননা পদক তুলে দেওয়া হবে।
শ্যামল ভট্টাচার্য্য বগুড়া জেলায় সংস্কৃতি-অঙ্গনে নাট্যকার, নাট্য নির্দেশক ও সংগঠক হিসেবে আলো ছড়িয়েছেন। তাঁর পুরো নাম শ্যামল রঞ্জন ভট্টাচার্য্য, তবে শ্যামল ভট্টাচার্য্য নামেই বেশি পরিচিত। অনেকের কাছে তিনি প্রিয় কাজল দা। ঋদ্ধিমান এই সংস্কৃতিজনের জন্ম ১০ আগস্ট ১৯৩৯ সালে বগুড়া শহরের জলেশ্বরীতলায় সাহিত্য-সংস্কৃতি ও রাজনীতি সচেতন পরিবারে। তাঁর পিতা আইনজীবী হৃষিকেশ ভট্টাচার্য্য এবং মাতা সুষমা ভট্টাচার্য্য। তাঁর মাতামহ রজনীকান্ত ভট্টাচার্য্য ছিলেন তৎকালীন রংপুর শহরের খ্যাতিমান ও বিত্তবান আইনজীবী, রংপুর শহরে শালবন পাড়ায় তাঁর প্রাসাদোপম বাসগৃহ বিদ্যমান। ১১ জন ভাই-বোনের মধ্যে শ্যামল ভট্টাচার্য্যরে অবস্থান অষ্টম।
তাঁর বড় ভাই কমরেড চিত্তরঞ্জন ভট্টাচার্য্য ভারতীয় উপমহাদেশের বিখ্যাত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। মা ও ভাই-বোনেরা বাম রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
পারিবারিক জীবনে শ্যামল ভট্টাচার্য্য ১৯৬৬ সালের ২৩ এপ্রিল সুকৃতি ভট্টাচার্য্যরে সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁর দুই পুত্র ও এক কন্যা যথাক্রমে পিনাকী ভট্টাচার্য্য পিংকু, লোপামুদ্রা ভট্টাচার্য্য বুলবুলি এবং অভ্র ভট্টাচার্য্য অভি।
শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি প্রখ্যাত সাংবাদিক প্রয়াত দুর্গাদাস মুখার্জির ‘দৈনিক উত্তরাঞ্চল’ পত্রিকায় সহযোগী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও তিনি ‘দৈনিক গণরায়’ পত্রিকায় সম্পাদক মণ্ডলীতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
নাটক নির্দেশনার পাশাপাশি তিনি বেশ কিছু গ্রন্থ সম্পাদনাসহ নাটক ও উপন্যাস লিখেছেন। শ্যামা পাখী (শিশু উপন্যাস), উজান গাঙের মাঝি (স্মারক গ্রন্থ), শুনিয়েছিলেম গান (সুরশিল্পী ওস্তাদ আলাউদ্দিনের জীবন-কথা), কদবানু বেগম নারী (উপন্যাস)Ñ তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনা।
একসময় নাট্য জগতে আলোড়ন সৃষ্টিকারী নাটকÑ কাফন, আলোর ঝরণা, দখল, পদ্মরাগ, হলধর মেস, বীরাঙ্গণা রওশনারা তাঁর রচিত দশটি নাটকের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। কিছু নাটক ও নাট্য বিষয়ে প্রবন্ধ নানা পত্রিকায় ছড়িয়ে আছে। সৃজনশীল কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ সম্মাননা পেয়েছেন বহুবার, তন্মধ্যেÑ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন কর্তৃক জাতীয় পদক, বগুড়া জেলা শিল্পকলা একাডেমী পদক, বটতলা সম্মাননা-২০১৬, বিশ্ব নাট্যদিবস সম্মাননা-২০১৮ পদক (বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী, ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইন্সটিটিউট বাংলাদেশ কেন্দ্র, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন এবং বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদ কর্তৃক যৌথ উদ্যোগ), বগুড়া জিলা স্কুল কর্তৃক নিবেদিত শিক্ষক পদক, বগুড়া থিয়েটার পদক, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র বগুড়া পদক, দিনাজপুর নাট্য সমিতি পদক, প্রাকৃতজন সংবর্ধনা পদক, ইউডিপিএস পদক, জাহান আরা ও লুৎফর রহমান পদক, শেরপুর সাহিত্য চক্র পদক, বগুড়া সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট পদক উল্লেখযোগ্য।