নওগাঁ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাদক ও আটক বাণিজ্যের অভিযোগ

নওগাঁ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৮ নভেম্বর ২০২৫ ১৭:৩৬ ।
প্রতিবেশী জেলা
পঠিত হয়েছে ১৯ বার।

নওগাঁ জেলা গোয়েন্দা পুলিশে (ডিবি) কর্মরত এসআই মামুন হোসেন ও এএসআই মুকুল হোসেন নামে দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাদক আত্মসাৎ ও আটক বানিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। বিপুল পরিমাণ মাদক উদ্ধার করা হলেও তার সামান্য কিছু জব্দ দেখিয়ে অধিকাংশই মাদক আত্মসাৎ এবং রিমান্ডসহ নানা ভয়-ভীতি দেখিয়ে গত কয়েক মাসে ওই দুই কর্মকর্তা প্রায় কোটি টাকার বানিজ্য করেছে বলে এমন গুরুত্বর তথ্য সামনে এসেছে।

জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওই দুই কর্মকর্তার এ ধরনের তৎপরতায় সচেতন মহলেও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে তীব্র ক্ষতির সৃষ্টি হয়েছে। 

তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ১২ জুন নওগাঁ শহরের গোস্তহাটি মোড় এলাকা থেকে রানা কারী নামে একজনকে জাল টাকাসহ আটক করে ডিবি সদস্যরা। রানার তথ্য অনুসারে সুলতান এবং পরে সান্তাহার ইয়ার্ড কলোনীর জব্বার হোসেনকে আটক করা হয়। জব্বারের বাসায় তল্লাশির সময় তার স্ত্রী ও মেয়েকে গ্রেপ্তারের ভয় দেখিয়ে ডিবি সদস্যরা ২ লাখ টাকা নেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এছাড়া সুলতানকে ছেড়ে দেওয়ার আশ্বাসে ৮৫ হাজার এবং পরে ‘রিমান্ডের ভয়’ দেখিয়ে আরও ৪০ হাজার টাকা নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। রানা জামিনে বের হয়ে আবার জাল টাকা ব্যবসায় যুক্ত হলে পুনরায় তাকে এবং তার সহযোগী নিজামকে আটক করা হয়।

সুলতান অভিযোগ করেন, আমার কাছে কোনো জাল টাকা ছিল না। রানার মাধ্যমে ভুলবশত আমাকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে ভয়ভীতি দেখালে, আমি বাধ্য হয়ে ৮৫ হাজার টাকা তাদের প্রদান করি। এরপরেও মামলায় আমাকে ফাঁসানো হয়েছে।”

এদিকে গত সেপ্টেম্বর মাসে নিয়ামতপুরের উপজেলার ছাতরা এলাকা থেকে আমিনুর ইসলাম নামে এক মাদক ব্যবসায়ীকে ৩০০ পিস ট্যাপেন্টাডলসহ আটক করা হয়। পরে ১৬ হাজার টাকার বিনিময়ে ১০০ পিস দেখিয়ে মামলা দেওয়া হয়। আটকের সময় থাকা আমিনুরের মোটরসাইকেলটি জব্দ তালিকায় না থাকলেও ডিবি অফিসে আটকে রাখা হয়। এর পরেই মোটরসাইকেল ফেরত দিতে আরও ৩০ হাজার টাকা দাবি করা হয়েছিল বলে জানান আমিনুর।

গত ২৮ মার্চ মহাদেবপুরে মেরিনা আকতারের বাড়ির সামনে থেকে ১ হাজার ইয়াবা, ৫০ গ্রাম হেরোইন ও একটি সিএনজি অটোরিকশাসহ চারজনকে আটক করা হয়। অভিযোগ, মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে সিএনজি ও আটক ব্যক্তিদের ছেড়ে দেওয়া হয়। মামলায় দেখানো হয় মাত্র ১০ গ্রাম হেরোইন এবং এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা। এ ঘটনায় স্থানীয়দের দাবি অবশিষ্ট মাদক পরে ডিবির সোর্সের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়।

এদিকে নওগাঁ পৌর এলাকার নুনিয়া পট্টি মহল্লায় গত এলাকায় দুই মাদকসেবীকে আটকের পর জাকিয়ার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ১০ পুরিয়া হেরোইন, ১০ ইয়াবা ও ২৫ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। অভিযোগ, তাকে মামলায় না জড়ানোর শর্তে ১ লাখ টাকা নেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত তার নাম মামলায় যুক্ত করা হয়।

জাকিয়া বলেন, কিছু না পেয়েও আমার নিকট থেকে টাকা নিয়ে গেছে। পরে মামলা না দেওয়ার প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে আরো ১ লাখ টাকা দিতে বাধ্য হয়েছি। কিন্তু তারপরও মামলায় আমার নাম দেওয়া হয়েছে।

গত ১৯ এপ্রিল মহাদেবপুরের খোর্দ্দনারায়নপুরে একটি মোটরসাইকেল থামিয়ে কয়েক হাজার পিস ইয়াবাসহ দুইজনকে আটক করা হয়। অভিযোগ, পলাতক অভিযুক্তের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা রফাদফা করে মাত্র ৭৫০ পিস ইয়াবা জব্দ দেখিয়ে মামলা দেওয়া হয়।

এর আগের একটি ঘটনায় মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ব্যবসায়ীদের ছেড়ে দেয়ার অভিযোগে জানা গেছে গত ২০২৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর বদলগাছী সদরে ফেনসিডিলসহ মিঠু, এরশাদ ও মিল্টন নামে তিনজনকে আটক করে ২ লাখ ৭০ হাজার টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে এএসআই মুকুলের বিরুদ্ধে। বিষয়টি সে সময় বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ পেলেও কোনো প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এরপরই এসআই মামুন-মুকুল টিম তৈরী করে বেপরোয়া হয়ে ওঠে।

গত কযেক মাসে পরপর ঘটনায় দুজনের বিরুদ্ধে রফাদফা ও মাদকের পরিমান কমিয়ে আত্নসাতের মাধ্যমে প্রায় কোটি টাকা বানিজ্যের অভিযোগ উঠেছে।

এসব অভিযোগ নিয়ে কথা হলে নওগাঁ ডিবি পুলিশের এএসআই মুকুল হোসেন কোন মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। তবে মামলাগুলোর বাদী মামুন স্যার তিনিই ভালো বলতে পারবেন বলে জানান তিনি। 

এদিকে এসআই মামুন হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সব অভিযোগ মিথ্যা। যাদের আটক করেছি তাদের বিরুদ্ধেই মামলা দেওয়া হয়েছে। মাদক কম দেখানো হয়নি।

জেলা গোয়েন্দা পুলিশের সাবেক ওসি ( বর্তমান পোরশা থানার ওসি ) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, এসব ঘটনার সময় আমি দায়িত্বে ছিলাম না। মোটরসাইকেলটি পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার হওয়ায় জিডি করে রাখা হয়েছিল।

তবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করার পর মোটরসাইকেলটি দ্রুতই ডিবি অফিসের গ্যারেজ থেকে সরিয়ে ফেলা হয়।

 

এ ব্যাপারে নওগাঁর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাফিউল সারোয়ার বলেন, এ ধরনের অভিযোগ প্রমাণিত হলে আমাদের বাহিনীর নিজস্ব কিছু আইনকানুন আছে সে অনুযায়ী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রয়োজনে বিধি মোতাবেক তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।