তাদের জীবনেও ‘ঈদ’ আসে

মুজাহিদুল ইসলাম জাহিদ:
প্রকাশ: ১২ জুন ২০১৮ ১০:৪০ ।
নাগরিক সাংবাদিকতা
পঠিত হয়েছে ৫৮৫ বার।

ঈদ আসে, ঈদ যায় কিন্তু টেরই পায় না মিন্টু মিয়া। পায়ের শক্তির উপর নির্ভর করে তার সংসার গতি। কারণ তিনি যে রিকশা চালক। রাতের খাবারটা চাঁদের আলোতেই সারতে হয়। দুই মেয়ে বিয়ের উপযুক্ত, ছেলে অন্ধ। পুষ্টিহীনতায় রোগবালায় যেন উঠান ছাড়ে না। এরপরও খরচ বাড়ালে কিস্তি দিবে কে? এটাতো একজন মিন্টু মিয়াঁর কথা মাত্র। এমন হাজারও মিন্টু মিয়ার জীবন চলে চেরাগের নিভু নিভু আলোর মত। উন্নয়নের জোয়ারে যা আমাদের চোখেই পড়ে না। কে তাদের খোঁজ রাখে!

ষ্টেশনের পাশের ঝুপড়িতে থাকে হাজেরা বেগম। পৌরসভার আবর্জনা পরিষ্কার এবং তা থেকে ‘মূল্যবান’ পদার্থ সংগ্রহ করে ৫০-১০০ যা পায় তাতেই কোন মতে দিন পার হয়। এ কাজ কোন দিন আয়-রোজগার হয়, আবার কোনদিন হয়ও না। কাজ হলে খাওয়া জোটে, না হলে নাই বলে জানালেন হাজেরা বেগম। তার আছে অসুস্থ স্বামী। তিনি ভারী কাজ করতে পারেনা। তাই প্লাস্টিক কুড়ায় আর আছে এক মেয়ে জহুরা, সে সন্তান সম্ভাবা। বিয়ের কিছুদিন পর স্বামী সেই যে চলে গেছে তার পর থেকে আজও তার দেখা পায়নি জহুরা।  জীবনের এমন বাস্তবতা নিয়ে সাজানো হাজেরা বেগমের সংসার। ঈদের দিন কি করেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নিজের তো কিছু করার সাধ্য নাই। ঈদের দিন ছেলে মেয়েরা নতুন কাপড় পড়ে ঘুরে বেড়ায়-এটা দেখেই আমরা দুঃখ ভুলে থাকার চেষ্টা করি ।’

ঈদের আগে শেষ হাট। হাতে ব্যাগ নিয়ে হেঁটেই বাড়ি ফিরছিলেন কৃষক জসীম উদ্দিন। সত্তর পার করেছেন। বাড়িতে আছে তার স্ত্রী। আর ছেলারা থেকেও যেন নেই। তারা যে যার সংসার নিয়ে ব্যাস্ত। এ বয়সেও কৃষি কাজ ছাড়া একদিনও চলে না তার। আর পয়সা বাঁচাতে ৪-৫ কিলোমিটার পথ এভাবে হেঁটেই যাতায়াত করেন তিনি। ঈদে কি কিনেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আড়াই শ’ সেমাই, ১০০ (১০০ গ্রাম) সয়াবিন ত্যাল (তেল), ১০০ সরষার ত্যাল, আড়াই শ’ ক্যারাসিন (কেরোসিন) ত্যাগল আর এ্যাটা লুঙ্গী-এটাই হামার ঈদ।’

ইফতারের পরও ঠক ঠক শব্দ। শহরে এক বিল্ডিং তৈরীর কাজ চলছে। দু’একজনের সাথে কথা বলতেই দেখা হয় দুদু মিয়াঁর সাথে। কাজ ছাড়া তার কথাবলার সময় নাই। তাই তাকে জানার আগ্রহ একটু বাড়ল। কিছুটা আলাপ জমিয়ে জানা গেল,  তিন ছেলে নিয়ে ৬ সদস্যের পরিবার তার। ছেলেরা সবাই পড়াশোনা করে। বড় ছেলে এবার S.S.C.তে G.P.A-5 পেয়েছে। ছেলেদের নিয়ে অনেক স্বপ্ন তার। ছেলেরা তার কাজে কিছুটা সাহায্য করলেও বড় সংসারের খরচ চালাতে ওভার টাইমে কাজ করতে হয় তাকে। ঈদ বরাবরের ন্যায় সাদামাটাই হয় তার। ছোট ছেলে সবে স্কুলে যাওয়া শুরু করেছে। ঈদে সে একটা পাঞ্জাবী চেয়েছে। তার আবদার মেটাতেই একটু বেশী কাজ করতে হচ্ছিল দুদু মিয়াঁর।

হাতে লাঠি, মুখে বাঁশি। খাকী পোশাকের মোখলেস উদ্দিন একজন নাইটগার্ড। নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষের নিরাপদ ঘুম নিশ্চিত করেন তিনি। বেতন মাত্র সাড়ে তিন হাজার টাকা। এ বেতনে বড় সংসারের খরচ চলে না। তাই বাধ্য হয়ে মেয়েকে অন্যের বাড়িতে কাজ করতে পাঠিয়েছেন। ঈদে পুরানো পাঞ্জাবী পরতে হয় ছেলেদের। তাই ঈদে তার তেমন আয়োজন নাই বললেই চলে।