শিশুদের সুরক্ষায় বগুড়ার তালোড়া আলতাফ আলী স্কুল থেকে কাজ শুরু করেলো ‘আরএসিবি’

নাগরিক সংবাদিকতা
প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০১৮ ১৩:৩৩ ।
নাগরিক সাংবাদিকতা
পঠিত হয়েছে ৮০২ বার।

বগুড়ায় শিশুদের সুরক্ষায় ‘রিহ্যাবিলিটেশন ফর অ্যাবিউসড চাইল্ড ইন বাংলাদেশ- আরএসিবি’ নামে একটি বেসরকারি সংগঠন কাজ শুরু করেছে। গত ২৯ জুন জেলার দুপচাঁচিয়া উপজেলার তালোড়া আলতাফ আলী উচ্চ বিদ্যালয়ে ছাত্রীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। অষ্টম থেকে দশম শ্রেণির ছাত্রীদের নিয়ে আয়োজিত মতবিনিময় অনুষ্ঠানে যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ এবং বয়ঃসন্ধিকালীন পরিচর্যা নিয়ে করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করা হয়।

অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া ছাত্রীদরেকে তাদের স্বাস্থ্যগত সমস্যার কথা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে তুলে ধরার সুযোগ দেওয়া হয়। ছাত্রীদের কাছ থেকে তাদের স্বাস্থ্যগত নানা সমস্যার কথা শুনে চিকিৎসক অনেককে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থাপত্রও দেন।

আয়োজকদের পক্ষ থেকে জনানো হয়েছে, সুস্থ পরিবেশে শিশুর স্বাভাবিক বেড়ে ওঠা নিশ্চিত করাই তাদের লক্ষ্য। এক্ষেত্রে শিশুদেরকে যৌন নির্যাতন কি এবং তা থেকে নিজেদেরকে কিভাবে রক্ষা করা যায় সেগুলো জানিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি শিশু এবং তাদের অভিভাবকদের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলতে কাজ করে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ওই আলোচনায় বয়:সন্ধিকালীন বিভিন্ন সমস্যা, শিশু যৌন নির্যাতন কী এবং তার প্রতিকারই বা কী সেগুলো নিয়ে কথা বলেছেন ঢাকা টিনি টটস/সামারফিল্ড স্কুলের শিক্ষক ফারহানা আক্তার ফ্লোরা। ভিডিও কনফারেন্সে ছাত্রীদেরকে চিকিৎসা বিষয়ক নানা পরামর্শ দিয়েছেন ডা. মুনা। ছাত্রীরা এমনও অনেক সমস্যার কথা ওই চিকিৎসককে জানিয়েছে যা তারা তাদের বড় বোন, মা কিংবা খালাদের সঙ্গেও শেয়ার করতে পারছিল না। 

প্রথম দিনের অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করতে গিয়ে সংগঠনটির উদ্যোক্তা সাজিয়া আফরিন সোমা জানান, শত বছরের প্রাচীন তালোড়া আলতাফ আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের সব শিক্ষক তাদের এই কার্যমের প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক শামসুল ইসলাম টুটুল এবং অপর দুই শিক্ষক তারিকুল ইসলাম তুহিন ও সাহিনা পারিভনসহ প্রত্যেকেই আন্তরিক ছিলেন বলেই আনন্দঘন পরিবেশে আলোচনা সভা চালিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়েছে।’

আগামীতেও এ ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়ে আয়োজকদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যৌন নির্যাতন থেকে নিজ নিজ শিশুদের নিরাপদ রাখার ক্ষেত্রে বাবা-মাসহ অভিভাবকদের কী ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে তার একটি নীতিমালাও তারা তৈরি করেছেন। সেই নীতিমালার শুরুতেই বলা হয়েছে, নির্যাতন বা যৌন নির্যাতন আসলে কি সেটা আগে শিশুদের বুঝিয়ে বলতে হবে। এই সম্পর্কে যতটা সম্ভব তাদের জানাতে হবে। আরও যেসব বিষয়ের প্রতি বাবা-মা এবং অভিভাবকদের বিশেষ নজর দিতে বলা হয়েছে সেগুলো হলো-
১.বাড়ির ভেতরে বা বাইরে শিশুরা কার সঙ্গে মিশবে সে ব্যাপারে বাবা-মার খেয়াল রাখতে হবে।
২.ইচ্ছার বিরুদ্ধে কেউ শরীর স্পর্শ করলে ভয় বা লজ্জা না পেয়ে তা বাবা-মাকে খুলে বলতে হবে।  
৩.খেলার ছলে শিশুদের শরীরের অঙ্গ সম্পর্কে শিক্ষা দিতে হবে। তিন বছরের বড় শিশুদের তার শরীরের সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ সম্পর্কে শিক্ষা দিতে হবে। খেলতে খেলতে শিশুদের এসব বুঝিয়ে দিতে হবে এবং এসব থেকে রক্ষা পাবার কিছু কৌশলও শিখিয়ে দিতে হবে।
৪. যদি উচ্ছ্বল কোন শিশু হঠাৎ করেই শান্ত হয়ে যায়, তাহলে অবশ্যই তার সাথে কথা বলতে হবে। পাশে বসে ঠাণ্ডা মাথায় প্রশ্ন করে সে কেন এমন করছে- তা জানার চেষ্টা করতে হবে।
৫.কোন আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে নিয়ে যেতে চাইলে যদি কোন শিশু অস্বীকৃতি জানায়, তাহলে তাকে জোর না করে তার মনোভাব বোঝার চেষ্টা করতে হবে।  তার অনীহার কারণটিও জানার চেষ্টা করতে হবে।
৬.অনেক সময় মজা করে শিশুকে অনেকে ‘স্বামী’ বা ‘স্ত্রী’ সম্বোধন করে থাকে। অথচ দেখা গেছে, স্বজন বা প্রতিবেশীর সাথে এই ধরনের সম্পর্ক থেকেই যৌন নির্যাতনের ঘটনাগুলো বেশি ঘটে। তাই এগুলো পরিহার করতে হবে।
৭.শিশুদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করতে হবে। এতে করে শিশুরা যে কোন সমস্যা সহজেই বাবা-মা’র কাছে শেয়ার করবে।
৮. যৌন নির্যাতন নিয়ে ছোট ছোট গল্প আকারে বাড়িতে বা স্কুলে শেখানো যেতে পারে।