১০ তারিখেই বগুড়ার আদুরীর জন্ম, মৃত্যু আর এসএসসির রেজাল্ট
স্টাফ রিপোর্টার
“আমার ময়না (আদুরী) পাস করেছে, কিন্তু সে আর পৃথিবীতে নেই। আমার মেয়ে এভাবে আমাদের ছেড়ে চলে যাবে, স্বপ্নেও ভাবিনি।” শনিবার সকালে কান্নাজড়িত কণ্ঠে এভাবেই বুকফাটা কষ্টের কথা বলছিলেন আদুরীর মা হালিমা বেগম। এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ৪.৫০ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে আদুরী। কিন্তু সেই কাঙ্ক্ষিত ফল আর দেখা হলো না তার। এক মাস আগেই সে বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে বাঙালি নদীতে ডুবে প্রাণ হারায়।
জয়পুরপাড়া পশ্চিমপাড়া এলাকার রিকশাচালক মকবুল হোসেন ও গৃহিণী হালিমা বেগমের তিন সন্তানের মধ্যে সবার ছোট ছিল আদুরী। এবছর সে ক্যাপ্টেন মাল্টিমিডিয়া পাবলিক স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। জন্ম, মৃত্যু ও ফল—তিনটাই ঘটেছে একই তারিখে, ১০ জুন।
আদুরীর মা হালিমা বেগম বলেন, “মেয়েটার জন্ম ১০ তারিখে, মারা গেল ১০ তারিখেই। কাকতালীয়ভাবে তার ফলও প্রকাশ হলো ১০ তারিখেই। সে পড়ালেখা করে পুলিশ হবে বলত। কত স্বপ্ন ছিল! আমি তাকে নিয়ে কত কিছু ভেবেছি। কিন্তু আজ সব শেষ। আমি এখন ঘরে থাকতে পারি না—ঘরের প্রতিটা জিনিস, প্রতিটা কোণ শুধু ওর কথা মনে করায়।”
জানা গেছে, বান্ধবী রত্নার বিয়েতে অংশ নিতে ১০ জুন আদুরী গিয়েছিল সারিয়াকান্দির দিঘলকান্দির তরফদারপাড়ায়। বিকেলে গরমে ক্লান্ত হয়ে সে ও তার কয়েকজন বান্ধবী গোসল করতে নামে বাঙালি নদীতে। একসময় স্রোতের টানে পানির গভীরে তলিয়ে যায় আদুরী। বান্ধবীরা অনেক চেষ্টা করেও খুঁজে না পেয়ে ফায়ার সার্ভিসে খবর দেয়। উদ্ধার হয় নিথর দেহ।
বাবা মকবুল হোসেন বলেন, “মেয়ের বিয়ের কথা বলেছিলাম, কিন্তু সে রাজি ছিল না। বলত, ‘বাবা, আগে চাকরি করব, তারপর বিয়ে।’ রেজাল্ট বের হলো—আমার মেয়ে পাস করেছে, কিন্তু সে নেই। সেদিন শুধু কবরের পাশে দাঁড়িয়ে বলেছি, ‘তুই পাস করেছিস মা, তুই পাস করেছিস!’ চোখের পানি আর দোয়ার সাথেই দিলাম তোকে সেই খবর।”
আদুরীর বড় বোন সোহাগী বলেন, “আমরা ছিলাম একেবারে বন্ধুর মতো। ওর প্রতিটা স্বপ্নে আমি পাশে থেকেছি। আজ সে নেই। আমি এখন কথা বলি একা, ঘুমাই একা, হাসি একা, কাঁদি একা। শুধু ওর কিছু জামা-কাপড় আর স্মৃতি গায়ে মেখে বেঁচে আছি।”
ক্যাপ্টেন মাল্টিমিডিয়া পাবলিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক দীপঙ্কর দাস খোকন বলেন, “এই বছর আমাদের স্কুলের শিক্ষার্থী আদুরী বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ৪.৫০ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। কিন্তু সে তার কাঙ্ক্ষিত ফল আর দেখে যেতে পারল না। এমন মেধাবী, শান্তশিষ্ট, সম্ভাবনাময় এক শিক্ষার্থীকে হারিয়ে আমরা সবাই স্তব্ধ।”