জাতীয় নির্বাচন ১২ ফেব্রুয়ারি, একই দিনে গণভোট

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৯:১৯ ।
দেশের খবর
পঠিত হয়েছে বার।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। একই দিনে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন বিষয়ে গণভোটও নেওয়া হবে। সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্নভাবে ভোটগ্রহণ চলবে।

 

বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পাশাপাশি গণভোটের সময়সূচিও নিশ্চিত করেন। 

 

 

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) হিসাবে এবার ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ৭৬ লাখের বেশি। প্রথমবারের মতো উল্লেখযোগ্য হারে প্রবাসী বাংলাদেশিরাও পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোটদানের সুযোগ পাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত নিবন্ধন করেছেন ৩ লাখেরও বেশি প্রবাসী ভোটার। 

 

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৯ ডিসেম্বর, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ৩০ ডিসেম্বর থেকে ৪ জানুয়ারি। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিলের শেষ তারিখ ১১ জানুয়ারি। আপিলের শুনানি ১২ জানুয়ারি থেকে ১৮ জানুয়ারি। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২০ জানুয়ারি।

 

২১ জানুয়ারি রিটার্নিং কর্মকর্তা কর্তৃক চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ ও প্রতীক বরাদ্দ বলেও ঘোষণায় জানানো হয়।

 

এতে আরও বলা হয়, ২২ জানুয়ারি থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চলবে।

 

গত ৭ ডিসেম্বর সংসদ নির্বাচন ও গণভোট আয়োজনের প্রস্তুতি সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে অবহিত করেন সিইসি।

 

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ৩০০ আসনভিত্তিক ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করেছে ইসি। প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী দেশে এখন মোট ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ৭৬ লাখ ৯৫ হাজার ১৮৩ জন।

 

এই ভোটারদের মধ্যে পুরুষ ৬ কোটি ৪৮ লাখ ১৪ হাজার ৯০৭ জন, নারী ৬ কোটি ২৮ লাখ ৭৯ হাজার ৪২ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ১ হাজার ২৩৪ জন।

 

 

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তালিকা অনুযায়ী মোট ভোটার সংখ্যা ছিল ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জন।

 

গণঅভ্যুত্থানের মুখে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। সেই সরকার ১৬ মাস পর ইসি জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করল।

 

শুরুতে বিএনপিসহ কয়েকটি দল গত বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন দাবি করেছিল। তবে গত ৬ জুন জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস জানান, নির্বাচন হবে ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে। পরে ১৩ জুন লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকের পর দু’পক্ষ ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচনে সম্মত হয়। এরপর থেকে সরকার ধারাবাহিকভাবে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধকেই নির্বাচনের সময় হিসেবে উল্লেখ করে আসছে। সেই লক্ষ্যেই প্রস্তুতি নেয় ইসি।

 

১৩ নভেম্বর প্রধান উপদেষ্টা ঘোষণা দেন, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন একই দিনে হবে। বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) সিইসি সেই দিনক্ষণ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করলেন। 

 

ইসির নিবন্ধিত ৫৬টি রাজনৈতিক দল দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে। তবে রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকায় আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত রয়েছে, ফলে দলটি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। অন্যান্য নিবন্ধিত দল অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবে। পাশাপাশি যোগ্য কোনো ব্যক্তি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও লড়তে পারবেন।

 

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত বছরের ২১ নভেম্বর এ এম এম নাসির উদ্দীনের নেতৃত্বে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়। আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ও গণভোটই হবে এই কমিশনের অধীনে প্রথম বড় নির্বাচন। দুটি ভোট একই দিনে নেওয়ায় সময় ব্যবস্থাপনাকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে ইসি।

 

সে কারণে এবার ভোটগ্রহণের সময় এক ঘণ্টা বাড়ানো হয়েছে—সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত। ভোটকেন্দ্রে গোপন কক্ষের সংখ্যাও বাড়ানো হবে।

 

আইনশৃঙ্খলা রক্ষা নিয়েও রয়েছে বাড়তি প্রস্তুতি। সরকার জানিয়েছে, তফসিল ঘোষণার পর সশস্ত্র বাহিনীসহ সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা নির্বাচনী শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে মাঠে থাকবে। প্রায় ৯ লাখ সদস্য নিয়োজিত থাকবে, যা দেশে কোনো নির্বাচনে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ। পাশাপাশি সুষ্ঠু ভোট আয়োজনে রেকর্ডসংখ্যক দেড় লাখ পুলিশ সদস্যকে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।