আলতাদীঘির হারানো ঐতিহ্য ফেরানোর দাবি

নওগাঁ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৩ জুন ২০২৪ ১৭:১৭ ।
প্রতিবেশী জেলা
পঠিত হয়েছে বার।

নওগাঁর আলতাদীঘি শালবন জাতীয় উদ্যানের চলমান উন্নয়ন কার্যক্রম ও পরিবেশ বান্ধব প্রেক্ষাপট তুলে ধরে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার বিকেলে নওগাঁ শহরের ঐতিহ্যবাহী প্যারীমোহন লাইব্রেরী মিলনায়তনে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এই সভার আয়োজন করে।

 

আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, ২০১১ সালে জাতীয় উদ্যান ঘোষনার পর থেকে আলতাদীঘি জাতীয় উদ্যানে একাধিক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। কিন্তু সেসব প্রকল্প শুধুই মানুষের মনোরঞ্জনের জন্য গ্রহন করা হয়েছে। প্রকৃতি, বন কিম্বা বন্যপ্রানীর জন্য কোন উপকারেই আসেনি। অপরিকল্পিত ভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন ও পদক্ষেপ গ্রহন করায় শালবন ও বন্যপ্রানীর ব্যপক ক্ষতি হয়েছে। হারিয়ে যাওয়া সেই ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার দাবি তুলে ধরেন বক্তারা।

 

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাপা নওগাঁ জেলা শাখার সভাপতি মুকুল চন্দ্র কবিরাজ। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য তুলে ধরেন- নওগাঁর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আব্দুল করিম, বাপা কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন, একুশে পরিষদের সভাপতি ডিএম আব্দুল বারি, সহসভাপতি নাইস পারভীন, বিশিষ্ট সাংবাদিক রায়হান আলম, এমএর রকি, শফিক ছোটন। এছাড়া পরিবেশ কর্মি, বৃক্ষ প্রেমী, গবেষক, স্থানীয় প্রশাসন ও বন বিভাগের কর্মকর্তারা অংশ নেন। বিভিন্ন সময় আলতাদীঘি ও শালবনে বাস্তবায়িত প্রকল্পগুলো পরিবেশ বান্ধব নয় উল্লেক করে অসন্তোষ প্রকাশ করেন বক্তারা।

 

সভায় বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন বলেন- প্রতিনিয়ত পরিবেশ ধ্বংস করা হচ্ছে। আশংকা জনক হারে উজাড় করা হচ্ছে বনভূমি। নওগাঁর আলতাদীঘি একটি প্রাকৃতিক শালবন।  জাতীয় উদ্যান ঘোষনা করা হলেও যথাযথ ভাবে সংরক্ষনের অভাবে আজ অস্তিত্ব সংকটে। বর্তমান অবস্থায় উদ্বেগ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি।

 

পরিবেশ কর্মি নাইস পারভীন বলেন, সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতার কারনে প্রায়ই আগুনে পুড়ছে আলতাদীঘি শালবন। কিন্তু এর প্রতিকারে বন বিভাগ কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। আজ পর্যন্ত আগুন লাগার কোন ঘটনায় কোন মামলা হয়নি। কেউ গ্রেফতার হয়নি। দীঘি খননের সময় ইউকিলিপটাস ও আকাশ মনি গাছ কাটার কথা বলা হলেও প্রাকৃতিক শালবনের কয়েক’শ শালগাছ বিনষ্ট ও কাটা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

 

সংবাদ কর্মি শফিক ছোটন বলেন, অপরিকল্পিত ভাবে প্রকল্প বাস্তবায়নের কারনে শালবন ও দীঘি থেকে পাখি ও বন্যপ্রানী হারিয়ে যাচ্ছে। নতুন করে শালগাছ জন্মনিচ্ছে না।

 

একুশে পরিষদের সভাপতি ডিএম আব্দুল বারি বলেন, খোদ বন বিভাগের কর্মকান্ডে বর্তমানে চরম সংকটে আলতাদীঘি শালবন। বক্তব্যে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আব্দুল করিম বলেন, খননের পূর্বে আলতাদীঘিতে যেসব মাছ, জলজ উদ্ভিদ ও প্রানী ছিলো সেগুলো বিকল্প স্থানে সংরক্ষন করা উচিৎ ছিলো। আলতাদীঘি শালবনের ক্ষতি পূরনে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার দাবি করেন বক্তারা।

 

আলতাদীঘিতে চলমান উন্নয়ন প্রকল্প ও পরিবেশ বান্ধবতা তুলে ধরেন বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা  রফিকুজ্জামান শাহ ও বন সংরক্ষক আমিনুল ইসলাম।  তারা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সংষ্কার না করায় আলতাদীঘির গভীরতা কমে এসেছে। ফলে সেখানকার প্রকৃতি, বন্যপ্রানী ও পরিবেশে সংকট তৈরী হয়েছে। তাই পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে প্রায় সাড়ে ৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

 

তারা বলেন, দীঘির দক্ষিন পাশে একটি সুউচ্চ ওয়াচ টাওয়ার, পূর্বপাশে অতিথিশালা, বনবিভাগের অফিস নির্মানসহ পর্যটকদের জন্য বেশ কিছু সুবিধা তৈরী করা হচ্ছে। পরিকল্পিত ভাবে এসব উন্নয়ন কর্মকান্ড হাতে নেয়া হয়েছে। পরিবেশ, বন ও বন্য প্রানীর কোন ক্ষতি হবে না বলে দাবি করেন তারা। 

 

কর্মকর্তারা বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের শুরুতেই দীঘির চার পাশ থেকে সামাজিক বনায়নের এক হাজার দুইটি ইউকিলিপ্টাস ও আবাশমনি গাছ কাটা হয়েছে। দীঘি পুন: খননের পর দেশীয় প্রজাতির ৫ হাজার ফলবৃক্ষ রোপন করা হয়েছে।

 

আগুনে কিছু শালগাছের ক্ষতি হয়েছে স্বীকার করে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রফিকুজ্জামান শাহ বলেন- বিগত দিনে ধূমপায়ীদের মাধ্যমে বনে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে বলে ধারনা করা হচ্ছে। আগামী দিনে যাতে কেউ বনের ক্ষতিসাধন করতে না পারে সেদিকে কড়া নজর রাখা হয়েছে।

 

চলমান প্রকল্প বাস্তবায়নের পর বন থেকে বেঁত গাছ সরিয়ে ফেলা হবে। এছাড়া নতুন করে বিভিন্ন ফাঁকা জায়গায় বৃক্ষরোপন করা হবে। ফলে আলতাদীঘি শালবনে খুব শিগগিরিই সুন্দর পরিবেশ গড়ে উঠবে বলে দাবি করেন তারা।