প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে কঠোর হুঁশিয়ারি ডা. সায়েদুরের
স্টাফ রিপোর্টার
২০৩০ সাল থেকে দেশে সরকারি উদ্যোগে ভ্যাক্সিন ও বায়োটেক কোম্পানির উৎপাদন শুরু হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান। তিনি বলেন, “আমরা সরকারে না থাকলেও আগামী জানুয়ারি থেকে প্রকল্পের কাজ শুরু হবে এবং পাঁচ বছরের মধ্যে এটি সম্পন্ন হবে।” এর মাধ্যমে দেশে তৈরি হবে অ্যান্টিভেনম ও অ্যান্টির্যাবিক্স ভ্যাক্সিন।
শুক্রবার রাতে বগুড়ায় শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক)-এর মেডিসিন বিভাগ, বাংলাদেশ সোসাইটি অফ ইনফেকশাস অ্যান্ড ট্রপিকাল ডিজিজ এবং টক্সিকোলজি সোসাইটি অফ বাংলাদেশ-এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত দুই দিনব্যাপী ‘১৩তম ন্যাশনাল কনফারেন্স অন ট্রপিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড টক্সিকোলজি’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শজিমেকের মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. আব্দুস সালাম।
ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, সরকার অ্যান্টিভেনম প্রজেক্টকে অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে দেখছে এবং এটি দেশের সম্মান ও সার্বভৌমত্বের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি বিষয়। প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানেরও ঘোষণা দেন তিনি। তিনি বলেন, “যেসব ফার্মেসি প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি করবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাদেরও ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, ওষুধের গায়ে লাল রঙে ‘অ্যান্টিবায়োটিক’ না লিখে বাজারে ছেড়ে দেওয়া কোম্পানির উৎপাদনও বন্ধ করা হবে।
এ সময় চিকিৎসা ও গবেষণায় প্রণোদনার প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, “শিক্ষার্থী ও চিকিৎসকেরা অনেক সময় কম আকর্ষণীয় বিষয়ে পড়াশোনা করতে চান না। তাই সরকার সংক্রামক রোগ ও বিষবিজ্ঞানসহ আটটি মৌলিক বিষয়ে শিক্ষার্থীদের শতকরা ৭০ শতাংশ প্রণোদনা দেবে, যা বছরে লাখ টাকার বেশি হবে।”
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন শজিমেকের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. ওয়াদুদুল হক তরফদার, টিএমএসএস মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. জাকির হোসেন, শজিমেকের সাবেক অধ্যক্ষ ও প্রজেক্ট ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল, সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. ইসমাইল পাটোয়ারী, বাংলাদেশ টক্সিকোলজি সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম. এ. ফয়েজ, বিএমএ বগুড়ার সভাপতি অধ্যাপক ডা. আজফারুল হাবিব রোজ, সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মাইনুল হাসান সাদিক, বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো–ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ ও টিএমএসএস নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপিকা ড. হোসনে আরা বেগম।
কনফারেন্সের সদস্য সচিব ছিলেন শজিমেকের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. মামুনুর রশিদ।
দুই দিনব্যাপী এই বৈজ্ঞানিক আয়োজনে দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের শিক্ষক, গবেষক ও শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। অনুষ্ঠানে সাপে কাটা, ডেঙ্গু, জলাতঙ্ক, ধনুষ্টংকারসহ বিভিন্ন সংক্রামক রোগ ও বিষবিজ্ঞান–সম্পর্কিত সাম্প্রতিক গবেষণা ও চিকিৎসা অগ্রগতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
আয়োজকরা জানান, বাংলাদেশের জলবায়ু ও ভৌগোলিক অবস্থার কারণে ট্রপিক্যাল মেডিসিন ও টক্সিকোলজি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র। এসব রোগে মৃত্যুহার কমাতে দ্রুত চিকিৎসা, গবেষণা এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির ওপর জোর দেওয়া হয়। বক্তারা মনে করেন, এ ধরনের বৈজ্ঞানিক সম্মেলন চিকিৎসা গবেষণায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে এবং দেশের চিকিৎসা খাতকে আরও সমৃদ্ধ করবে।