দলীয় সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে বিএনপি

নওগাঁ জেলার ছয়টি আসনের আওয়ামী লীগের দখলে: বড় দুই দলের একাধিক প্রার্থী

কাজী আনিছুর রহমান,রাণীনগর (নওগাঁ) 
প্রকাশ: ৩০ মার্চ ২০২৩ ১৬:৫৭ ।
প্রতিবেশী জেলা
পঠিত হয়েছে ৯৬ বার।

নওগাঁ জেলার ছয়টি সাংসদীয় আসনের সব আওয়ামী লীগের দখলে। আগামী নির্বাচনেও সব আসন ধরে রাখতে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছে দলটি। আর হারানো আসনগুলো পুনরুদ্ধারে মরিয়া বিএনপি। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা না হলেও ছয়টি সাংসদীয় আসনে শুরু হয়েছে প্রার্থীদের প্রচারণা। মনোনয়ন প্রত্যাশীরা জানান দিচ্ছেন আমি প্রার্থী হতে চাই, পেতে চাই মনোনয়ন। অপর দিকে আগামী নির্বাচনে কোনো ভুল করতে চায় না বিএনপি। বিএনপির একাধীক প্রার্থীর নাম শোনা গেলেও তারা দলীয় সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছেন।
 খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিটি আসনে বড় দুই দলে রয়েছে একাধিক প্রার্থী। সব আসনে জয়ের স্বপ্ন দেখছে আওয়ামী লীগ। বিএনপিও জাতীয় প্রার্থী। সব কটিতেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপি হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।  


 নওগাঁ-১ (সাপাহার-পোরশা-নিয়ামতপুর ) : এ আসনটি একসময় বিএনপির ঘাঁটি থাকলেও বিগত ২০০৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সংসদ সদস্য হিসাবে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। আগামী নির্বাচনেও তিনি দলীয় প্রার্থী হবেন। এছাড়া এ আসনে নিয়ামতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মরহুম এনামুল হকের ছেলে উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা রেজাউল হাসান রানার নাম প্রার্থী হিসাবে শোনা যাচ্ছে। 


নির্বাচনে গেলে বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন, সাবেক সংসদ সদস্য নিয়ামতপুর উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য  ডা. ছালেক চৌধুরী, গত নির্বাচনে সংসদ সদস্য প্রার্থী জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, পোরশা উপজেলা বিএনপির সভাপতি শাহ আহমেদ মোজাম্মেল চৌধুরী, পোরশা উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সাবেক কৃষি বিষয়ক সম্পাদক লায়ন মাসুদ রানা। জাতীয় পার্টি থেকে দলের জেলা যুগ্ন আহবায়ক ও উপজেলা সভাপতি আকবর আলী কালুর নাম শোনা যাচ্ছে।


 নওগাঁ-২ (ধামুইরহাট-পত্নীতলা ) : জেলা ছয়টি আসনের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সীমান্তবর্তী বরেন্দ্রভূমি অধু্যুষিত ধামইরহাট ও পত্নীতলা উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনের সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান সরকার। তিনি এবারও মনোনয়ন চাইতে পারেন। এছাড়াও মাঠে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য এইচ এম আখতারুল আলম, জেলা কৃষকলীগের সাবেক উপদেষ্টা বি এম আব্দুর রশীদ। 


বিএনপি থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য সামসুজ্জোহা খান, জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ও উপজেলা কিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য খাজা নাজিবুল্লাহ চৌধুরী মনোনয়ন প্রত্যাশী। জাতীয় পার্টি থেকে রয়েছেন পার্টির চেয়ারম্যানে উপদেষ্টা ও জেলা আহবায়ক তোফাজ্জল হোসেন দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। 


নওগাঁ- ৩ (মহাদেবপুর-বদলগাছী ) : উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছলিম উদ্দিন তরফদার এ আসনের সংসদ সদস্য। তিনি ছাড়াও আওয়ামী লীগের শক্তিশালী দু’জন প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। এদের একজন হলেন, সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ড. আকরাম হোসেন চৌধুরী, অপরজন সাবেক সিনিয়র সচিব ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। এছাড়াও উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি সখিনা সিদ্দিক, সাবেক সচিব ও  উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য এনামুল কবির। কুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ডি এম মাহবুব-উল-মান্নাফ দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী। 


বিএনপি থেকে উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও কৃষকদলের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ফজলে হুদা বাবুল, মহাদেবপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি রবিউল আলম বুলেট এবং সাবেক ডেপুটি স্পিকারের ছেলে পারভেজ আরেফিন সিদ্দিকী জনির নাম প্রার্থী হিসাবে শোনা যাচ্ছে। জাতীয় পার্টি থেকে জেলা যুগ্ন আহবায়ক বি এস হুমায়ুন চৌধুরীর নাম শুনা যাচ্ছে।


নওগাঁ-৪ (মান্দা) : জেলার সবচেয়ে বড় আসন এটি। এখানে আওমী লীগের মনোয়ন পেয়ে একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী  এবং আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা মুহা. ইমাজ উদ্দীন প্রামানিক। তিনি এবারও মনোনয়ন চাইতে পারেন। এছাড়াও যাদের নাম মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসাবে শোনা যাচ্ছে তারা হলেন, জেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ও বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবি পরিষদ জেলা সভাপতি আবদুল বাকী, জেলা আওয়¥অ লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক এস এম ব্রহানী সুলতান মাহবুব গামা, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাহিদ মোরর্শেদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মির্জা মাহাবুব বাচ্চু,উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য আব্দুল মান্নান, ও উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য আবদুল লতিফ শেখ।


বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক আহবায়ক ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুল মতিন, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ডা.ইকরামুল বারী টিপু। জাতীয় পার্টি থেকে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা যুগ্ন আহবায়ক আলতাব হোসেন মন্ডল দলীয় মনোনয়ন চাইবেন।


 নওগাঁ-৫ (সদর) :  আয়োমী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিলের মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেক বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তী ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনে তিনি আবারও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি এবারও দলীয় মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। অপরদিকে মরহুম আব্দুল জলিলের ছেলে ব্যারিষ্টার নিজাম উদ্দীন জলিল জন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি সব সময় মাঠে রয়েছেন ও কাজ করছেন। বর্তমানে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। এছাড়া মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসাবে  জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের নাম শোনা যাচ্ছে। 


বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন, গত নির্বাচনে সংসদ সদস্য প্রার্থী জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ধলু, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নজমুল হক সনি, জেলা যুগ্ন আহবায়ক ও বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মামুনুর রহমান রিপুন। 


জাতীয় পার্টি থেকে জেলা আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব ইফতারুল ইসলাম বকুল দলীয় মনোনয়ন চাইবেন।


নওগঁ-৬ (রাণীনগর-আত্রাই) : রক্তাক্ত জনপদ হিসাবে খ্যাত এ আসনটি। পরপর দুবার নির্বাচিত আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলমের মৃত্যু পর সংসদ সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হন রাণীনগর উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন হেলাল। আগামীতে তিনিও মনোনয়ন চাইবেন। এছাড়া এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন, প্রয়াত সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলমের স্ত্রী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি  সুলতানা পারভীন বিউটি। ইসরাফিলের মৃত্যুর পর তিনি সরকারি চাকরি ছেড়ে দিয়ে মাঠে কাজ করছেন। এছাড়া সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শাহিন মনোয়ারা হক, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: নওশের আলী, জেলা আওয়ামী লীগের ত্রান ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট ওমর ফারুক সুমন, অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব ও রাণীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ড. মো: ইউনুস আলী প্রামাণিক ,আত্রাই উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক নাহিদ ইসলাম বিপ্লব এবং রাণীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র উপদেষ্টা ও উপজেলার বড়গাছা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আব্দুর রহমান, দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীরা।


বিএনপি থেকে নওগাঁ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও আত্রাই উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এস এম রেজাউল ইসলাম রেজু শেখ। তিনি গত নির্বাচনে দলীয় সংসদ সদস্য প্রার্থী ছিলেন। তার পাশাপাশি জেলা তাঁতী দলের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় তাঁতী দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো: এচাহক আলী ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আনোয়ার হোসেন বুলুর নাম প্রার্থী হিসেবে শোনা যাচ্ছে। এছাড়াও বিএনপির সাবেক প্রতিমন্ত্রী মো: আলমগীর কবির আসলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই।

 
জাতীয় পার্টি থেকে রানীনগর উপজেলা সাধারণ সম্পাদক হাসান আলী দলীয় প্রার্থী হতে পারেন।