স্বামী বশীকরণ, সতীন মোচর ও হৃদয়হরণসহ হরেক পিঠার উৎসব

অসীম কুমার কোশিক
প্রকাশ: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৯:৩৫ ।
বিশেষ
পঠিত হয়েছে ১০৩ বার।

ঢেঁকিতে ভানা হচ্ছে চালের আটা। একদিকে উঠানে বসে নাতি-নাতনীদের নিয়ে চুলায় ডোবা তেলে হরেক রকম পিঠা ভাজতে ব্যস্ত নানী। মেলায় নাগরদোলা দুলছে। মেলা থেকে খেলনা কিনে বাবার হাত ধরে বাড়ি ফিরছে ছোট্ট ছেলে। এদিকে খেঁজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে কাঁধে করে নিয়ে যাচ্ছে গাছি। এ যেন গ্রাম-বংলার বৈচিত্রময় সব ঐতিহ্য।

পরম যত্নে পেনসিলে আঁকা এমন সব চিত্রের দেখা মিললো বগুড়ার আজিজুল হক কলেজের বেগম রোকেয়া হলের পিঠা উৎসবে। জামাই, হৃদয়হরণ, সতীন মোচর, স্বামী বশীকরণ ও নবাব নন্দিনীসহ হরেক রকমের পিঠা সাজিয়ে রাখা হয়েছে সাতটি স্টলে। গ্রাম বাংলার উৎসব ও ঐতিহ্য তুলে ধরতেই স্টলগুলোতে কাগজে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে পেনসিলে আঁকা হয়েছে এসব চিত্র।

মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে ওই পিঠা মেলার উদ্বোধন করেন সরকারি আজিজুল হক কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর খোন্দকার কামাল হোসেন। উদ্বোধনি অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, বেগম রোকেয়া হলের ছাত্রীদের আয়োজিত এই পিঠা উৎসব অনেক প্রাণবন্ত। এখানে অনেক রকমের পিঠার সাথে পরিচয় হবে সকলের। কলেজ কর্তৃপক্ষ এমন আয়োজনে সবসময় শিক্ষার্থীদের পাশে থাকবে।

এসময় ওই পিঠা উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানের সকল বিভাগীয় প্রধান শিক্ষক, হল সুপার, বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সজীব সাহা, সাধারণ সম্পাদক আল-মাহিদুল ইসলাম জয়সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

বেগম রোকেয়া হল চত্ত্বরে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত ওই পিঠা উৎসবে পদ্মরাগ, নারী অঙ্গন, মতিচুর, পিঠা কুঠির, অপরাজিতা, পিঠা-পার্বন ও রস-বাড়ি নামের সাতটি স্টলে প্রায় শতাধিক পিঠা প্রদর্শন করা হয়। একেকটি স্টলে কমপক্ষে ১২-১৫ রকমের বাহারি সব পিঠার দেখা মেলে। এসব পিঠার মধ্যে রয়েছে গোলাপ পিঠা, রাজ দুলালি, ক্যারামেল পায়েস, রস বরা, দুধ পুলি, ভালোবাসার পাটিসাপটা, নকশি পিঠা, ঝাল পুলি পিঠা, ইলিশ পিঠা, মিষ্টি পুলি, হৃদয়হরণ পিঠা, সুজির রসবড়া, ফুলঝুড়ি, ডিম পিঠা, জামাই পিঠা, রাধাবল্লব পিঠা, চিনিগুড়া পায়েস, জিরা পায়েস, পাকন, কামরাঙ্গা পিঠা, রসে ডোবা ঝিমুর পিঠা, সূর্যমুখী, গোলাপ জামুন, নারকেল পুলি, বউ সন্দেশ, পানতুয়া, স্পাইসি পসিত পুলি, সতীন মোচর, স্বামী বশীকরন, মুগ পাকন, নারিকেল মিষ্টী, রাজ দুলালী, মমোপিঠা, শঙ্খ পিঠা, ডালিয়া, পাতা বাহার, ডিম কুমারী, নবাব নন্দিনী, তেল পিঠা, বেনুনি পিঠা, দুধ চিতই, মিষ্টি কুশলি, করলা পিঠা, আনার কলি, চিকেন মাছ ও ঝাল কুশলী।

পিঠা কুঠির নামের স্টলে দেখা গেলো স্বামী বশীকরণ ও সতীন মোচর নামের পিঠা। কথা হলো ওই স্টলে থাকা নুসরাত জাহান, আবছানা ও সোহাগী নামের তিন শিক্ষার্থীর সাথে। তারা বলেন, 'আমরা একটু ব্যতিক্রমী পিঠা বানানোর চেষ্টা করেছি। মূলত পীঠা যে হরেক রকমের হয় সেটা প্রদর্শন করছি আমরা।'

পীঠার এমন ব্যতিক্রমী নামের কারণ জানতে চাইলে হাসতে হাসতে তারা বলেন, 'এই পিঠা স্বামীকে বশ করে তাই এমন নাম হয়তো।'

এদিকে পদ্মরাগ নামের একটি স্টলে প্রায় ১৭ রকমের পিঠা প্রদর্শন করা হয়েছে। ওই স্টলে থাকা প্রিয়াঙ্কা নামের এক মাস্টার্স পরীক্ষার্থী জানান, বসন্তকে বরণ করতে আমাদের এই আয়োজন। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য পিঠার মাধ্যমে তুলে ধরার আমাদের প্রচেষ্টা নতুন প্রজন্মকে এসবের সাথে পরিচয় করে দেয়া।

হাঁটতে হাঁটতে দেখা মিললো ব্যতিক্রমী এক পিঠার স্টলের। পেনসিলে আঁকা গ্রাম বাংলার উৎসব ও পার্বনের চিত্র দেখা গেলো মতিচচূর নামের এই স্টলে।  

কাগজ দিয়ে বানানো কুলা দেখিয়ে পিঠার স্টলে থাকা আশা নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, 'আমরা পেনসিল দিয়ে কাগজে এসব চিত্র এঁকেছি। বাঙালিয়ান সব ঐতিহ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। এছাড়াও কাগজ দিয়ে কিছু জিনিসপত্র তৈরি করা হয়েছে। আমাদের স্টলে ২৫ রকমের পিঠা রয়েছে।'

 বগুড়া আজিজুল হক কলেজের বেগম রোকেয়া হলের সহকারি হল সুপার সবর্ণা রানী দাস বলেন, 'এমন আয়োজন শিক্ষার্থীদের প্রাণবন্ত করে। সেই সাথে বাহারি সব পিঠার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। আমরা প্রতিবছর এমন উৎসবের আয়োজন করার চেষ্টা করবো।'

বেগম রোকেয়া হলের সাধারণ সম্পাদক মেহেরুন্নেছা ইতি বলেন, 'আমরা সবাই সারারাত ধরে হরেক রকম পিঠা তৈরি করেছি। ঋতুরাজ বসন্তের আগমনে আমরা হরেক রকমের শতাধিক পিঠা প্রদর্শন করেছি এই উৎসবে। খুব স্বল্পমূল্যে এসব পিঠা আমরা বিক্রি করছি। আমাদের শিক্ষগণ এমন আয়োজনে অনেক খুশী। আমাদের উতসাহিত করতে তাঁরা বিভিন্ন স্টল ঘুরে ঘুরে পিঠা কিনছেন।'