বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে মাহে রমজানের রোজা ও অটোফেজি

মো: রফিকুল ইসলাম
প্রকাশ: ০৮ এপ্রিল ২০২৪ ২০:৫০ ।
বিশেষ
পঠিত হয়েছে ১১২ বার।

রোযা এক অতুলনীয় ইবাদত। রোযা ইসলামের অন্যতম ভিত্তি। রোযা আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের ফরয করা কর্মানুষ্ঠান। “রোযা” ফার্সী শব্দ, কুরআন হাদিসে রোযাকে সওম বলা হয়েছে। এর অভিধানিক অর্থ উপবাস করা, সংযত হওয়া, বিরত থাকা, বারন করা বা ফিরিয়ে রাখা। রোযা মানুষকে পানাহার ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে। নফসকে পাপাচার থেকে বারন করে এবং শয়তানকে বান্দার কাছ থেকে ফিরিয়ে রাখে বলেই এর নাম রাখা হয়েছে সওম। তাই হাদিস শরীফে “সওম” কে ঢাল বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। শত্রুর আক্রমন থেকে ঢাল যেমন রক্ষা করে রোযাও তেমনি মানুষকে নফসের তাড়না এবং শয়তানের ধোকা থেকে রক্ষা করে।

ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে রোযা বা সিয়াম একটি বিশেষ স্তম্ভ। রোযা সম্বন্ধে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে “ হে ইমানদারগন তোমাদের জন্য রমযানের রোযাকে ফরয করা হয়েছে। যেমন ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ব-পুরুষদের উপর এবং এটা এই

জন্য যে, যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করে মুত্তাকী হতে পার। সূরা আল-বাকারাহ-১৮৩

চিকিৎসা বিজ্ঞানে নানাবিধ উপকারের কথা আজ প্রমানিত। রোযা বা উপবাস স্থুলকায় লোকদের উপকার সাধন করে। বিশেষ করে স্থুলকায় রোগী যারা তাদের শরীরে অস্বাভাবিক চর্বি জমা হয়। চর্বি যে শুধু চামড়ায় নিচেই জমা হয় তা নয়, চর্বি কোলেস্টেরল আকারে শিরা উপরিশা, ধমনী এবং হৃদপিন্ডে জমা হয়। ফলে তাদের শরীরে রক্ত চলাচল ব্যহত হয়। বেশি কোলেস্টেরল শরীরে জমা হলে, শিরা উপশিরার ভিতরের লাইনিং এ তা জমা হয়ে এগুলোর গভীরতা কমিয়ে ফেলে। যার ফলে পর্যাপ্ত রক্ত চলামান করতে সক্ষম হয় না। অন্যদিকে শরীরের টিস্যুগুলো পুষ্টি পায় না। যার ফলে রোগীর ভোগান্তি চলতে থাকে। এই ধরনের লোকের জন্য রমযানের রোযা

অত্যান্ত উপকারী। রোযাই একমাত্র আত্মশুদ্ধি পথ। হযরত ইসা (আ.) ও চল্লিশ দিন রোযা রেখে ইঞ্জিল কিতাব প্রাপ্ত হয়েছিলেন তিনিও তাঁর শিষ্য বর্গকে তা পালনের বিধান দেন। বৌদ্ধ মহাথির পুরোহিত ও ভিক্ষুগনও বিভিন্ন চীবর অনুষ্ঠানে অবশ্য পালনীয় হিসাবে উপবাস উদ্যাপন

করেন। প্রাচীন জাপনী জাতির “কেন্ট” ধর্মে উপবাস অবশ্য পালনীয় ছিল। এরা এখনও এ রীতি বজায় রেখেছেন। জরথুস্ত্রবাদী পারসিকগণও নানাভাবে বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে উপবাস পালন করে থাকেন। বৈদিক হিন্দু ধর্মে প্রতিটি পুজায় ব্রতী পুজারী ও অনুষ্ঠান উদ্দোগী নর-নারী উপবাস পালন করেন। এক নাগাড়ে, একদিন, দু’দিন কিংবা তিনদিনের বেশী নয়। বিভিন্ন পুজা পার্বন ছাড়াও অমাবস্যা পূর্ণিমা ও একাদশীতে উপবাস পালনের নিয়ম অব্যহত আছে। কোন কোন ধর্মে উপবাসের সময় বিশেষ সংখক বার বিশেষ নাম জপার নিয়ম রয়েছে।

অপরদিকে অটোফেজি সম্পর্কে বলি। অটোফেজি একটি প্রক্রিয়া যা বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সুবিধার সাথে যুক্ত। ২০১৬ সালে চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পান জাপানের অটোফেজি গবেষক অধ্যাপক ইয়োশিনোরি ওহসুমি। দীর্ঘক্ষন খাওয়া বন্ধ রাখলে দেহের কোষগুলো বাইরে থেকে কোন খাবার না পেয়ে নিজেই নিজের রোগ জীবানু সৃষ্টিকারী কোষ ও বর্জ্য আবর্জনা খেতে শুরু করে আর এই প্রক্রিয়াকেই অটোফেজি বলা হয়। এই প্রক্রিয়া অব্যবহার যোগ্য কোষগুলোকে পুনরায় নতুন কোষে রূপান্তর করে সেটা সত্যিই বিস্ময়কর।

অটোফেজি সমস্ত কোষে সক্রিয় কিন্ত চাপ বা পুষ্টির বন্ধনার (রোজা বা অনাহারে) প্রতিক্রিয়ায় বৃদ্ধি পায়। এর মানে হলো অস্থায়ী ক্যালরি শূণ্য (রোযা) ও ব্যায়ামের মত ভালো স্ট্রেস ব্যবহার করা যায়। রোযা অটোফেজির মূল সক্রিয়কারী। অটোফেজি প্রক্রিয়ায় দেহ কোষকে পুনরুজ্জীবিত করে বাড়িয়ে দেয় কোষের আয়ু যা এন্টি এজিং বা বার্ধক্য রোধক হিসাবে কাজ কের। কোষ

পুনরুজ্জীবনের ইতিবাচক প্রভাব পুরো শরীরের ওপরই পড়ে যা অন্য অঙ্গের উপকারে আসে। তার মানে অটোফেজি শরীরকে ভাংগে না বরং গড়ে তোলে। আর অটোফেজির এই পদ্ধতিকে চালু করতে প্রয়োজন কিছুটা দীর্ঘ তবে সবিরাম ড্রাই ফাস্টিং, যা রোযা রাখার

মাধ্যমে পাওযা যায়। অধ্যাপক ইয়োশিনোরি ওহসুমি অটোফেজির যে প্রক্রিয়া ও ফলাফল বর্ণনা করেছেন তা রোজার (ড্রাই ফাস্টিং) সাথে যথেষ্ট সামজ্ঞস্যপূর্ণ। অটোফেজি মানুষের উপলদ্ধিতে আসার পর আধুনিক মানুষ রোযাকে অধিকতর কল্যানকর হিসাবে বুঝতে পেরেছে।

লেখক: 

সহকারী অধ্যাপক, (পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ)

সরকারি আজিজুল হক কলেজ, বগুড়া।