কাহালু উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের প্রচারণা তুঙ্গে

মুনসুর রহমান তানসেন
প্রকাশ: ১৫ মে ২০২৪ ১৮:১২ ।
বগুড়ার খবর
পঠিত হয়েছে ৯৯ বার।

 আগামী ২১ মে কাহালু উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে চেয়ারম্যান, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও সাধারণ ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণায় এখন পুরো এলাকা মুখরিত হয়ে উঠেছে। পোস্টার ও প্যানায় ছেয়ে গেছে উপজেলার অলিগলি। নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে প্রার্থীরা নিজের বিজয়ের লক্ষ্যে মরিয়া হয়ে উঠছে ভোটারদের সমর্থন পাওয়ার জন্য। 

 এদিকে মাইকের প্রচারণায় গানের মাধ্যমে প্রার্থীদের ভোট চাওয়া এক নতুন চমক। মাইকের সাউন্ড ধ্বনি আর গানের সুরে মুগ্ধ করার অন্যরকম এক কৌশল নিয়ে প্রার্থীরা নিজেদের পাল্লা ভারী করা চেষ্টা করছেন। বিএনপি-জামায়াত ভোট বিরোধী অবস্থানে থাকলেও সাধারণ ভোটারদের আগ্রহের কমতি নেই। ভোট নিয়ে ভোট নিয়ে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে চলছে চুলছেড়া বিশ্লেষণ। আওয়ামীলীগ ও সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীর পাশাপাশি সাধারণ ভোটারদের মধ্যেও চলছে আসন্ন উপজেলা নির্বাচন নিয়ে ব্যপক আলোচনা।    

     এই জনপদের হাট-বাজার, বিভিন্ন স্ট্যান্ড, মোড়, হোটেল-রেস্তোরা ও চায়ের ষ্টলে নিজ নিজ প্রার্থীর পক্ষে আলোচনায় মেতে উঠেছেন কর্মী-সমর্থকরা। কর্মী-সমর্থক নিয়ে গ্রামে গ্রামে ছুটছেন প্রার্থীরা। তারা বিভিন্ন স্থানে গিয়ে ভোটারদের সাথে হাত মিলাচ্ছেন আর ভোট প্রার্থনা করছেন। প্রার্থীরা নিজেদের পাল্লা ভারী করতে উঠান বৈঠক ও সভা-সমাবেশের মাধ্যমে শোডাউন করছেন। প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থক লিফলেট নিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন। প্রচার-প্রচরনার ক্ষেত্রে কোনো প্রার্থীই পিছিয়ে নেই। নিজেদের জয়ের জন্য তারা প্রাণপন চেষ্টা করছেন ব্যপক প্রচারনার মাধ্যমে।

        অত্র উপজেলা নির্বাচনে এখানে আওয়ামীলীগ ঘরনার ছাড়া অন্য কোন দলের প্রার্থী নেই। যারফলে নিজের দলের কর্ম-সমর্থকদের প্রায় সব প্রার্থীই টানাটানি করছেন। আওয়ামীলীগ ঘরনার প্রার্থী হওয়ায় অনেক নেতাকর্মীই কিছুটা বিপাকে পড়েছেন। যারা গ্রুপ করে তারা নিজ নিজ গ্রুপের প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নেমেছেন। আর যারা কোনো গ্রুপে নেই তারা ভোটকেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি বাড়ানোর চেষ্টা ছাড়া কোনো প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে মাঠে নেই। উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠ, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছেন। কোনো প্রার্থী যাতে নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘন করতে না পারেন, সেদিকে কঠোর দৃষ্টি রয়েছে স্থানীয় প্রশাসনের। 

সংশ্লিষ্ট সুত্রমতে অত্র উপজেলায় মোট ১২ জন প্রতিদ্বন্দি প্রার্থীর মধ্যে তিনজন চেয়ারম্যান পদে, দুজন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ও মোট সাতজন সাধারণ ভাইস পদে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রতিদ্বন্দি ১২ প্রার্থীর মধ্যে  চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সহসভাপতি আল হাসিবুল হাসান কবিরাজ সুরুজ (আনারস প্রতিক), উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নান  (মোটরসাইকেল প্রতিক)  ও জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য এন, এম আহছানুল হক  (ঘোড়া প্রতিক) নিয়ে লড়ছেন। 

    মহিলা ভাইস চেয়ারম্যন পদে মোছা. রওশন আক্তার (কলস প্রতিক) ও মোছা. আছমা খাতুন (প্রজাপতি প্রতিক) , সাধারণ (পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান) পদে অঞ্জন কুমার ( উড়োজাহাজ প্রতিক), মোঃ আব্দুর রশিদ লালু (তালা প্রতিক), আব্দুল্লাহ আল মাসুদ (টিউওবয়েল প্রতিক), মোঃ আব্দুস সোবাহান (বই প্রতিক), মোঃ রায়হান আলী (মাইক প্রতিক), মোঃ সাইফুল ইসলাম (চশমা প্রতিক) ও মোঃ সাইফুল ইসলাম সুলতান (টিয়া পাখি প্রতিক) নিয়ে ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন।

অত্র উপজেলা নির্বাচনে মূলত আওয়ামীলীগ নেতার সাথে আওয়ামীলীগ নেতার ভোটযুদ্ধ। এই ভোটযুদ্ধে কোন প্রার্থীর কী অবস্থান তা নিয়ে চলছে ভোটাদের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনা। চেয়ারম্যান পদে ভোট যুদ্ধে তিনজন প্রার্থী লড়াই করলেও মূল লড়াই হবে দ্বিমুখী।  এই নির্বাচনে কে জয়ী হবে সেই নিশ্চয়তা কেউ দিতে না পারলেও মূল লড়াই হবে বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান আল হাসিবুল হাসান সুরুজ ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নানের মধ্যে। 

        উপজেলা নির্বাচন অফিসার মোছা. মাহমুদা খাতুন জানান,  নয়টি ইউনিয়ন, একটি পৌরসভা ও তালোড়া পৌরসভা আংশিক নিয়ে অত্র উপজেলা। এখানে মোট ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৯২ হাজার ৪০৬ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ৯৫ হাজার ৯৫১ জন ও মহিলা ভোটার ৯৬ হাজার ৪৪০ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার সংখ্য মাত্র ৫ জন। আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে মোট ৬৫ টি ভোটকেন্দ্রে ৫০৯ টি বুথ থাকবে। নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতিমধ্যে ১ হাজার ৬১৩ জন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণ নেওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন ৭৬ জন পিজাইডিং অফিসার,  ৫০৯ জন সহকারী পিজাইডিং অফিসার ও ১ হাজার ১৮ জন পোলিং অফিসার।

         কাহালু থানার অফিসার ইনচার্জ মো. সেলিম রেজা জানান, মোট ৬৫ টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে অতি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র মোট ২০ টি। এই ২০ টি কেন্দ্রের মধ্যে কয়েকটি প্রার্থীদের বাড়ির নিকটবর্তী ও দুরত্ব এবং বিশেষ বিবেচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্র হিসেবে ধরা হয়েছে। সেই বিবেচনায় এই কেন্দ্রগুলোতে ভোটারগণ নির্ভয়ে যাতে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন তার জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সজাগ থাকবে। 

       উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী রিটার্ণিং অফিসার মোছা. মেরিনা আফরোজ জানান, বগুড়া-৪ আসনের উপনির্বাচন ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতোই উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠ ও শান্তিপূর্ণভাবে করার লক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে।