লাইসেন্স ফি না দিয়েই নির্মাণ করা সেই ২০০ দোকান উচ্ছেদ

বগুড়ায় রেলওয়ের জায়গায় ওদের ‘মার্কেট বাণিজ্য’ ভেস্তে গেল 

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ১৯ নভেম্বর ২০১৯ ১১:১০ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৮০০ বার।

বগুড়া শহরের রেলওয়ে স্টেশনের বিপরীতে অবৈধভাবে গড়ে তোলা ২০০ দোকান বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছেন রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা রেজাউল করিম বিপুল সংখ্যক পুলিশ এবং রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) সদস্যদের নিয়ে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, লাইসেন্স ফি না দিয়েই দোকানগুলো নির্মাণ করা হয়েছিল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজনৈতিকভাবে কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি রেলওয়ে স্টেশনের দক্ষিণের ওই জায়গা ‘বরাদ্দ পাওয়ার’ কথা বলে সেখানে দোকান নির্মাণ করে সাইজ অনুযায়ী সেগুলো তিন লাখ টাকা থেকে ৪ লাখ টাকায় বিক্রি করেন। তবে যারা দোকানগুলো কিনেছিলেন উচ্ছেদ অভিযানে খবর পেয়ে তারা ঘটনাস্থলে ছুটে গেলেও ভাঙার দৃশ্য চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া তাদের আর করার কিছুই ছিল না। কেউ কেউ নীরবে শুধু চোখের পানি ফেলেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, রেলওয়ে স্টেশনের দক্ষিণে ফাঁকা জায়গা বাণিজ্যিকভাবে ইজারা দেওয়ার জন্য কয়েকটি প্লটে ভাগ করে ২০১৮ সালের শুরুতে টেন্ডার আহবান করা হয়। তখন যারা সর্বোচ্চ দর দাখিল করেছিলেন তাদের নামে ডিমান্ড নোট ইস্যু করা হয় এবং ২০১৮ সালের ২৬ আগস্টের মধ্যে লাইসেন্স ও নকশা ফি’র টাকা জমা দিতে বলা হয়। কিন্তু তারা সেই অর্থ জমা না দিয়েই বগুড়া শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল মান্নান আকন্দের মাধ্যমে রেলওয়ের ওই জায়গায় দোকান নির্মাণ করে তা বিক্রি করা শুরু করেন। 
রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান, রেলওয়ে স্টেশনের দক্ষিণে ডি এবং ই বøকে যারা টেন্ডারে সর্বোচ্চ দর দাখিল করেছিলেন তাদের মধ্যে মাত্র ৬৭জন ছাড়া বাকিরা টাকা জমা দেননি। কিন্তু টাকা জমা না দিলেও সেখানে ২০০টি দোকান নির্মাণ করা হয়। যাতে টাকা জমা দেওয়া ৬৭জনের জন্যও কোন দোকান রাখা হয়নি। এমনকি টেন্ডার করা হয়নি এমন জায়গাতেও দোকান ঘর নির্মাণ করা হয়।
রেলওয়ের লালমনিরহাট বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা রেজোয়ানুল হক জানান, বার বার তাগাদা দেওয়ার পরেও যারা ডিমান্ড নোটের টাকা জমা দেননি তাদের বরাদ্দপত্র চলতি বছরের ২৭ মে বাতিল করা হয়। যেহেতু সেগুলো অবৈধ হয়ে গেছে তাই এখন উচ্ছেদ করা হচ্ছে। 
তবে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে দোকানের জায়গা বরাদ্দ পাওয়া শহরের চকসুত্রাপুর এলাকার আবুল হোসেন নামে একজন জানিয়েছেন, পারিবারিক ও ব্যবসায়িক সমস্যার কারণে তিনি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে লাইসেন্স ও নকশা ফি জমা দিতে পারেন নি। তবে পরবর্তীতে সমুদয় ফি জমা দেওয়ার সুযোগ চেয়ে তিনি গত ১০ নভেম্বর তিনি রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) বরাবর আবেদন করেছিলেন।
দোকানগুলোর ক্রেতাদের একজন হায়দার আলী জানান, দু’টি দোকান কেনার জন্য তিনি আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মান্নান আকন্দকে ৬ লাখ টাকা দিয়েছেন। কিন্তু এখন তিনি জানতে পারছেন তার কাছ থেকে টাকা নেওয়া হলেও তা রেলওয়ে বিভাগে জমা করা হয়নি। তাই সেগুলো উচ্ছেদ করা হচ্ছে।
বগুড়া রেলয়ের ফিল্ড কানুনগো গোলাম নবী জানান, যে ৬৭ ব্যক্তি টাকা জমা দিয়েও দোকান বরাদ্দ পাচ্ছিলেন না উচ্ছেদ অভিযান শেষে তাদেরকে জায়গাগুলো বুঝে দেওয়া হবে। তবে যোগাযোগ করা হলে বগুড়া শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল মান্নান আকন্দ জানান, তার নামে কোন জায়গা কিংবা দোকান বরাদ্দ নেই। তিনি শুধু দোকান ঘর নির্মাণের ঠিকাদার ছিলেন। তবে তিনি স্বীকার করেন, যারা দোকান বরাদ্দ পেয়েছিলেন তারা তার পাড়ার লোকজন। তিনি বলেন, ‘রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এভাবে উচ্ছেদ না করে দোকানগুলোর কাঠামো ঠিক রেখে নতুন করে টেন্ডার আহবান করতে পারতেন।’
রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা রেজাউল করিম জানান, উচ্ছেদ শেষে আবারও নতুন করে টেন্ডার আহবান করা হবে।