বুধবার তালিকা চুড়ান্ত হবে

বগুড়ায় আ’লীগের সম্মেলনে কাউন্সিলর হচ্ছেন ৫১৫জন

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ২৬ নভেম্বর ২০১৯ ১৭:২২ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৩৫৩ বার।

বগুড়ায় ৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে ৫১৫জনকে কাউন্সিলর করা হচ্ছে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, জেলার মোট জনসংখ্যার নির্দিষ্ট একটি অংশের পাশাপাশি দলের জেলা কার্য নির্বাহী সংসদের সকল সদস্য এবং প্রতিটি সাংগঠনিক ইউনিট (উপজেলা এবং সমমর্যাদার পৌরসভা কমিটি) থেকে নির্দিষ্ট করা কো-অপ্টের ভিত্তিতে কাউন্সিলরের ওই সংখ্যা চুড়ান্ত করা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী কাউন্সিলরদের ভোট কিংবা সমর্থনেই নেতৃত্ব নির্বাচন হওয়ার কথা। কিন্তু নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে তাদের মতামত দেওয়ার সুযোগ থাকবে কি’না তা নিয়ে দলের অভ্যন্তরেই সংশয় রয়েছে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, কাউন্সিলরদের সংখ্যা নির্ধারিত হলেও তাদের নামের তালিকা এখনও চুড়ান্ত হয়নি। এজন্য বুধবার দলের জেলা কার্য নির্বাহী সংসদের সভা ডাকা হয়েছে। সেখানে ইউনিটগুলোর সুপারিশের ভিত্তিতে কাউন্সিলরদের নাম চুড়ান্ত করা হতে পারে। একই সঙ্গে নেতৃত্ব নির্বাচনের তফসিল ঘোষণারও সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রায় পাঁচ বছর পর বগুড়ায় আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সর্বশেষ ২০১৪ সালের ১০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সম্মেলনে মমতাজ উদ্দিন সভাপতি এবং মজিবর রহমান মজনু সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। সম্মেলনের প্রায় ২২ মাস পর ২০১৬ সালের ১৩ অক্টোবর ৭১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। পরবর্তীতে আরও দু’জনকে সদস্য হিসেবে কো-অপ্ট করা হয়। এতে জেলা নির্বাহী সংসদের সদস্য সংখ্যা ৭৩-এ উন্নীত হয়। 
বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক মাশরাফি হিরো জানিয়েছেন, এবার ৫১৫ জন কাউন্সিলের মধ্যে ৩৮৫জনকে নেওয়া হচ্ছে জনসংখ্যার ভিত্তিতে। সংখ্যাটি নির্ধারণ করা হয়েছে বগুড়ার মোট জনসংখ্যা ৩৮ লাখ ৪৭ হাজার ২১৩জন ধরে। নিয়ম অনুযায়ী মোট জনসংখ্যার দশমিক শূন্য এক শতাংশ বা ১০ হাজারে একজন সরাসরি কাউন্সিলর হওয়ার সুযোগ পান।
বাদবাকী ১৩০জন নেওয়া হচ্ছে জেলা আওয়ামী লীগের কার্য নির্বাহী সংসদ এবং অধীনস্ত  সাংগঠনিক ইউনিটগুলো থেকে। কাকতলীয়ভাবে এবার জেলা আওয়ামী লীগের কার্য নির্বাহী সংসদ এবং ১৩টি সাংগঠনিক ইউনিট থেকে সমান সংখ্যক ৬৫জন করে কাউন্সিলর হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। কারণ জেলা আওয়ামী লীগের কার্য নির্বাহী সংসদ ৭৩ সদস্য বিশিষ্ট হলেও ৮জন মৃত্যুবরণ করেছেন। ফলে নির্বাহী কমিটি থেকে কাউন্সিলর হচ্ছেন ৬৫জন। আর সাংগঠনিক ১৩টি ইউনিটের প্রতিটি থেকে ৫জনকে অন্তর্ভূক্ত করার নিয়ম থাকায় কো-অপ্ট করা কাউন্সিলরের সংখ্যাও পঁয়ষট্টিতে গিয়ে ঠেকেছে।
জনসংখ্যার ভিত্তিতে ১৩টি ইউনিটের মধ্যে এবার সবচেয়ে বেশি ৪৩জন কাউন্সিলর পাচ্ছেন দলের শিবগঞ্জ উপজেলা কমিটি। আর সবচেয়ে কম ২০জন করে কাউন্সিলর পাচ্ছে দুপচাঁচিয়া ও নন্দীগ্রাম উপজেলা কমিটি। অন্যান্য ইউনিটের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪১জন কাউন্সিলর পাচ্ছে বগুড়া পৌর কমিটি। এছাড়া শেরপুর উপজেলা কমিটি থেকে ৩৮জন, গাবতলীর ৩৬, সারিয়াকান্দির ৩১, কাহালুর ২৫ এবং সোনাতলা উপজেলা থেকে কাউন্সিলর হচ্ছেন আরও ২১জন। এছাড়া ৩৩জন করে কাউন্সিলর আসছে ধুনট ও শাজাহানপুর থেকে এবং বগুড়া সদর ও আদমদীঘি থেকেও সমান সংখ্যক ২২জন করে কাউন্সিলর হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন।
বগুড়ায় এবার আওয়ামী লীগের সম্মেলন নানা কারণে নেতা-কর্মীদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এসব কারণের মধ্যে অন্যতম হলো প্রায় পঁচিশ বছর পর বগুড়ায় দলটির জন্য সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে নতুন নেতৃত্ব বেছে নেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কারণ সেই ১৯৯৪ সাল থেকে সভাপতি পদে আসীন মমতাজ উদ্দিন চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি প্রয়াত হয়েছেন। তার মৃত্যুতে ওই পদে নতুন মুখের কোন বিকল্প নেই। আওয়ামী লীগের পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে আরও যে বিষয়টি লক্ষ্যণীয় সেটি হলো -এতদিন প্রয়াত মমতাজ উদ্দিনের অনুসারীরই জেলা কমিটির সিংহভাগ পদে স্থান পেতেন কিন্তু তার অবর্তমানে কি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে তা নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে বেশ কৌতুহল রয়েছে।
বগুড়ায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দল পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বেশ কয়েকজন নেতার নাম আলোচনায় রয়েছে। তারা হলেন- বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. মকবুল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মজিবর রহমান মজনু, তিন সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম মন্টু, অ্যাডভোকেট মকবুল হোসেন মুকুল ও মুক্তিযোদ্ধা টি এম মুসা পেস্তা এবং তিন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে রাগেবুল আহসান রিপু, টি. জামান নিকেতা ও মঞ্জুরুল আলম মোহন। এর বাইরে  জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুর রহমান দুলু এবং প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক সুলতান মাহমুদ খান রনির অনুসারিরা ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে তাদের জন্য দোয়া কামনা করছেন। এছাড়া ‘সভাপতি হিসেবে দেখতে চাই’ উল্লেখ করে জেলা কমিটির সহ-সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন দুলুর পক্ষে পোস্টারিং এবং পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে সাধারণ সম্পাদক পদে সোনাতলা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মিনহাদুজ্জাম লিটনের জন্য দোওয়া ও সমর্থন চাওয়া হচ্ছে। 
সূত্রগুলো জানায়, বগুড়ায় আওয়ামী লীগে নেতৃত্ব কাউন্সিলরদের ভোটে নির্ধারণ করা হবে নাকি কেন্দ্রের পছন্দ অনুযায়ী হবে সেটি এখনও স্পষ্ট নয়। তবে নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র বলছে,  আগামীতে দলের নেতৃত্ব যে ক্লিন ইমেজের নেতাদের হাতেই তুলে দেওয়া হবে সেটি প্রায় নিশ্চিত। এখন দেখার বিষয় হলো ক্লিন ইমেজের নেতৃত্ব খোঁজার মহান সেই দায়িত্ব কাউন্সিলরদের হাতেই ছেড়ে দেওয়া হবে নাকি বিভিন্ন সংস্থার জরিপ রিপোর্টকে আমলে নেওয়া হবে? উত্তরটি পেতে হলে  যে ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।