বগুড়ায় পুলিশের ওপর হামলা: অ্যাডিশনাল এসপিসহ আহত ৫: ছাত্রদলের ১১ কর্মী আটক

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ০১ জানুয়ারী ২০২০ ১০:৪৪ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৪৩৮ বার।

বগুড়ায় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সমাবেশে যোগ দিতে আসা ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের হামলায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ ওই বাহিনীর ৫ সদস্য আহত হয়েছেন। বুধবার দুপুর ১২টার দিকে শহরের সার্কিট হাউজ সড়কে শহীদ খোকন পার্কের অভ্যন্তরে ওই হামলার ঘটনা ঘটে। আহত পুলিশ সদস্যদের মধ্যে পারভেজ নামে এক কনস্টেবলের মাথা ফেটে গেছে। তাকে বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
পুলিশের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা জুতা-স্যান্ডেল পায়ে শহীদ খোকন পার্কের শহীদ মিনারে উঠেছিল। সেখান থেকে নামিয়ে দিতে গেলে তারা পুলিশের ওপর হামলা চালায়। হামলায় আহত পুলিশের অপর ৪ সদস্য হলেন হলেন- বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী, এএসআই আশরাফুল, কনস্টেবল মামুন ও কনস্টেবল শিফাত। ওই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ ছাত্রদলের সমাবেশ শেষে ১১ কর্মীকে আটক করেছে। 
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, ৪১তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে বগুড়ায় ছাত্রদলের পক্ষ থেকে শহরের নওয়াববাড়ি সড়কে দুপুর ১২টার দিকে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের আয়োজন করা হয়। ওই সমাবেশে যোগ দিতে ছাত্রদল নেতা-কর্মীরা সকাল থেকেই শহরের বিভিন্ন মহল্লা থেকে মিছিলসহ সার্কিট হাউস সড়কে শহীদ খোকন পার্কের ভেতরে সমবেত হতে থাকে। সেখান থেকেই একজোট হয়ে তাদের দলীয় কার্যালয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। তারই অংশ হিসেবে জেলা বিএনপির আহবায়ক ও বগুড়া-৬ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম মোহাম্মদ সিরাজসহ দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দী খোকন পার্কে যান। এভাবে দুপুর পৌণে ১২টা নাগাদ খোকন পার্কের অভ্যন্তরে ছাত্রদলের বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী সমবেত হয়। তাদের মধ্যে অনেকে ওই পার্কের ভেতরে অবস্থিত শহীদ মিনারে জুতা স্যান্ডেল পায়ে উঠে পারে। পরে পুলিশ ভেতরে গিয়ে তাদেরকে শহীদ মিনার থেকে নেমে যেতে বলেন। এক পর্যায়ে পুলিশের ধাওয়ায় ছাত্রদল নেতা-কর্মীদের একাংশ ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। অপর অংশ পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুঁড়তে শুরু করে। 
বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী জানান, ছাত্রদল নেতা-কর্মীরা জুতা-স্যান্ডেল পায়ে শহীদ মিনারের ওপর উঠে তান্ডব চালাচ্ছিল। দুপুর ১২টার দিকে তার নেতৃত্বে পুলিশ সেখানে গিয়ে ছাত্রদলের কর্মীদের শহীদ মিনার থেকে নেমে যেতে বলেন। তিনি বলেন, ‘এ সময় কেউ কেউ নেমে গেলেও অন্যরা পুলিশ সদস্যদের উপর হামলা চালায়। এ সময় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের অস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়ারও চেষ্টা হয়েছে। হামলায় আমিসহ আমাদের বাহিনীর ৫ সদস্য আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে কনস্টেবল পারভেজের মাথায় আঘাত করা হয়েছে।’
পরে ছত্রভঙ্গ হয়ে যাওয়া ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে পরে দুপুর সোয়া ১২টায় নওয়াববাড়ি সড়কে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ শুরু হয়। তবে পুলিশের ওপর হামলা হয়েছে-এমন খবর ছড়িয়ে পড়ার পর ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। গ্রেফতার এড়াতে অনেকেই সমাবেশে অংশ না নিয়ে ফিরে যেতে শুরু করেন। অবশ্য এমন পরিস্থিতিতেও দলীয় কার্যালয়ের সামনে দুপুর ২টা পর্যন্ত সমাবেশ করা হয়। সেখানে বগুড়া-৬ আসনের সংসদ সদস্য জেলা বিএনপির আহবায়ক গোলাম মোহাম্মদ সিরাজসহ বিএনপি ও ছাত্রদলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ বক্তৃতা করেন। সাংসদ গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ তার বক্তৃতায় বলেন, ‘শহীদ মিনার পবিত্র জায়গা। সেখানে জুতা স্যান্ডেল পায়ে ওঠা উচিত নয়। যদি কেউ উঠে থাকে তাহলে আমরা ক্ষমাপ্রার্থী।’
তবে সমাবেশ শেষ হওয়ার পর ফিরে যাওয়ার সময় পুলিশ হামলার ঘটনায় জড়িতদের ধরতে অভিযানে নামে। বিকেল পৌণে ৪টা পর্যন্ত ১১ কর্মীকে আটক করা হয়। তবে এদের মধ্যে ১০জনের নাম পাওয়া গেছে। তারা হলো-সাব্বির (১৯), শাকিল (১৭), রাহিদ (১৬), ফরদিন (১৭), রাশেদুল (২২), আলাল হোসেন (২১), সাব্বির হোসেন (১৬), আরিফুল ইসলাম (১৩),জবহিল আলী (২১) ও আরাফাত আলী (১৯)।
বগুড়া সদর থানার ওসি এস এম বদিউজ্জামান জানান, পুলিশের ওপর হামলায় এখনও মামলা হয়নি। তবে জড়িতদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ওদিকে ছাত্রদল বগুড়া জেলা কমিটির সভাপতি আবু হাসানের দাবি করেছেন তাদের কোন কর্মী পুলিশের ওপর হামলা করেনি। তিনি বলেন, ‘খোকন পার্কের পাশে আওয়ামী লীগ অফিস। সেখান থেকে কেউ পুলিশকে লক্ষ্য করে ঢিল ছুঁড়ে থাকতে পারে।’ 
বগুড়ার ২৫০ শয্যা মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক শফিক আমিন কাজল জানান, আহত পুলিশ সদস্যদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তবে তারা আশঙ্কামুক্ত।