সোলাইমানি হত্যা: সাবেক প্রেসিডেন্টরা পিছু হটলেও ট্রাম্প কেন ঝুঁকি নিলেন?

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ০৪ জানুয়ারী ২০২০ ০৭:২৫ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৫৬ বার।

যুক্তরাষ্ট্রের আগের প্রেসিডেন্টরা যা করার সাহস দেখাননি, ডোনাল্ড ট্রাম্প সেটাই করে দেখিয়েছেন। তার নির্দেশেই ইরানের শীর্ষ জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে হত্যা করা হয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ইরানের প্রভাব বিস্তার ও মার্কিন উদ্যোগগুলোকে ব্যর্থ করে দেয়ার মূলহোতা ছিলেন এই সোলাইমানি।

ট্রাম্পের পূর্বসূরিরা ভাবতেন, কুদস ফোর্সের প্রধান কাসেম সোলাইমানিকে হত্যায় নতুন একটি যুদ্ধের ঝুঁকি রয়েছে। কারণ ইরাক ও আফগানিস্তানে মার্কিন বাহিনী নাকানিচুবানি খেয়ে চলছে।

মার্কিন জয়েন্ট চিফস চেয়ারম্যান জেনারেল মার্ক মিলেই বলেন, গত তিন বছর ধরে সোলাইমানির ছায়াবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পরে বাগদাদে মার্কিন দূতাবাসে হামলার ঘটনা ঘটে। পেন্টাগন সিদ্ধান্ত নেয়,যদি এটা কাজ না করে, তবে আমরা নিশ্চিতভাবে অবহেলিত হতে থাকব।

স্থানীয় ইরানি মিত্রদের সঙ্গে বসতে বাগদাদ বিমানবন্দর থেকে সবে বের হচ্ছিলেন জেনারেল সোলাইমানি, তখনই তার গাড়িবহর লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে হামলা চালানো হয়।

মার্ক মিলেই বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য ছিল যে সোলাইমানির বিভিন্ন অভিযানের হুমকি আসছে। আকার, মাত্রা ও সুযোগ বিবেচনায় যা ছিল অতীতের চেয়ে বড়।

তিনি বলেন, সেখানে কি ঝুঁকি ছিল না? নিশ্চিতভাবে সেখানে ঝুঁকি ছিল। নিষ্ক্রীয়তার ঝুঁকি সক্রিয়তার ঝুঁকিকে ছাড়িয়ে যাবে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র সম্পর্কীয় কাউন্সিলের জাতীয় নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ম্যাক্স বুট বলেন, সোলাইমানিকে হত্যা ট্রামের ছোট্ট কোনো সিদ্ধান্ত ছিল না। ১৯৪৩ সালের পরে যুক্তরাষ্ট্রের গুপ্তহত্যার শিকার কোনো দেশের শীর্ষ কোনো জেনারেল হলেন সোলাইমানি। তখন জার্মানির অ্যাডমিরাল ইসোরোকু ইয়ামামোটুর বিমানে গুলি চালিয়ে তাকে হত্যা করা হয়েছিল। তিনি ছিলেন ১৯৪১ সালের ডিসেম্বরে পার্ল হারবারে হামলার নেপথ্য নায়ক।

সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ কিংবা বারাক ওবামাও এমন হত্যাকাণ্ড ঘটানোর সাহস করেননি।

সিআইএর বিশ্লেষক থেকেআইনপ্রণেতা হওয়া ইলিসা স্লোটকিন বলেন, দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতের আশঙ্কা থেকেই ডেমোক্র্যাটিক ও রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টরা তাকে হত্যা থেকে বিরত ছিলেন।

থিংকট্যাংক ডিফেন্স প্রাইওরিটিজের সিনিয়র ফেলো গিল বার্নডোলার বলেন, গত এক দশক ধরে সোলাইমানিকে হত্যা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। শত্রুদের ওপর গোপন হামলা চালাতে অভ্যস্ত ইসরাইলও বড় যুদ্ধের আশঙ্কায় যেটা করতে সাহস করেননি, ট্রাম্প সেটাই করে দেখিয়েছেন।

২০০৭ সালে বুশের বিশেষ অভিযান প্রধান জেনারেল স্ট্যানলি ম্যাকক্রিস্টালের চোখের সামনে দিয়েই সোলাইমানি ইরান থেকে ইরাকে উড়ে গেছেন।

গত বছর বার্নডোলার বলেছিলেন, তাকে শেষ করে দেয়ার একটি ভালো যুক্তি ছিল। কিন্তু বন্দুকযুদ্ধ ও বিতর্কিত রাজনীতির কারণে তিনি সেটা করেননি।

সোলাইমানিকে সত্যিকার শত্রু হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন ২০০৮ সালে মধ্যপ্রাচ্যের মার্কিন বাহিনীর কমান্ডার জেনারেল ডেভিড পেট্রাউস। কিন্তু ইরাকের ভেতরকার কিছু সমস্যার সমাধান করতে দুই জেনারেল পরোক্ষভাবে যোগাযোগ করেছেন।

কারণ ইরাকে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করছে ইরানিরা। হোয়াইট হাউসে বারাক ওবামার জাতীয় নিরাপত্তা বিশ্লেষক নেড প্রাইস বলেন, তার ভূমিকা কখনোই গুরুত্বহীনভাবে দেখা হয়নি। তার পায়ের ছাপ পশ্চিমা দেশগুলোতেও প্রভাব ফেলেছে। আল কুদস ফোর্স ইউরোপ, দক্ষিণ আমেরিকা এমনকি যুক্তরাষ্ট্রেও অভিযান চালাতে পারে।

২০১১ সালে সৌদি রাষ্ট্রদূতের বিরুদ্ধে গুপ্তহত্যার ষড়যন্ত্রে তারা সহায়তা করেছিল।

তেহরানের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের নীতি থেকে ওবামার আমলে করা ইরানের সঙ্গে বহুপক্ষীয় পরমাণু চুক্তি থেকে একতরফাভাবে সরে আসার ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

এত ধীর গতিতে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। গত কয়েক বছর ধরে উপসাগরীয় তেল ট্যাংকারে হামলার অভিযোগ আনা হচ্ছে ইরানের বিরুদ্ধে। এছাড়া একটি মার্কিন ড্রোনও গুলি করে ভূপাতিত করেছেন ইরানিরা।

গবেষক গিল বার্নডোলার বলেন, ট্রাম্পের নীতি থেকে সোলাইমানির মতো ইরানের কট্টরপন্থীরা সুবিধা পাবেন। কিন্তু এতে কেবল ঘরোয়া প্রভাব বাড়বে।

কিন্তু সোলাইমানির প্রভাব ছিল পুরো অঞ্চলজুড়ে। গত কয়েক বছরে সিরিয়া, ইরাক ও ইয়েমেনের রাজনৈতিক এবং সামরিক অ্যাজেন্ডা নির্ধারণ করে দিয়েছেন সোলাইমানি।

কিন্তু ইরান বিষয়ক গবেষক উইল ফুলটন বলেন, সোলাইমানি শেষ দিকে আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠেছিলেন। তার প্রভাব বাড়ছিল। সম্ভবত ট্রাম্প প্রশাসনও সেটি টের পেয়েছেন। সোলাইমানির প্রভাব ও সক্ষমতা আঞ্চলিক বিভিন্ন ঘটনাবলীর গড়ন তৈরি করে দিচ্ছে টের পেয়েই তাকে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে ছেড়ে না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় যুক্তরাষ্ট্র।

চলতি বছরে পুনর্নির্বাচনে লড়ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চলতি মাসেই ক্ষমতার অপব্যবহারের জন্য সিনেটে বিচারের মুখোমুখি হতে হচ্ছে তাকে। এই হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে তিনি ভোটারদের নিজের কঠোরতা দেখাতে চেয়েছেন।

চলতি সপ্তাহের শুরুতে মধ্যপ্রাচ্যে ওবামার অধীন পররাষ্ট্র নীতির ব্যর্থতার কথা বলে একটি রিটুইট করেছেন। তখন লিবিয়ার বেনগাজিতে মার্কিন মিশনে হামলায় চার মার্কিন নাগরিক নিহত হয়েছিলেন।

ডটরডেম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাইকেল ডিশ বলেন, সোলাইমানি হত্যাকাণ্ডের পেছনে মার্কিন ঘরোয়া রাজনীতিও ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলেছে বলে আমি মনে করি।