টেন্ডার আহবান করেও বাতিল: এবার আইপি ক্যামেরা কেনার সিদ্ধান্ত

বগুড়া শহরকে সিসিটিভি’র আওতায়  আনার উদ্যোগ শুরুতেই হোঁচট খেল

পুণ্ড্রকথা রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৩ জানুয়ারী ২০২০ ০৬:৩৪ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৭১১ বার।

বগুড়া শহরকে ক্লোজ সার্কিট টেলিভিশনের (সিসিটিভি) ক্যামেরার আওতায় আনতে পৌরসভার নেওয়া পরিকল্পনা শুরুতেই হোঁচট খেয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, কি ধরনের ক্যামেরা ব্যবহার করা হবে তা নিয়ে এক ধরনের সিদ্ধান্তহীনতার কারণে টেন্ডার আহবান করেও তা বাতিল করা হয়েছে। যে কারণে ২০২০ সালের জানুয়ারির মধ্যে শহরকে সিসিটিভির আওতায় আনার যে ঘোষণা ইতিপূর্বে পৌর কর্তৃপক্ষ দিয়ে রেখেছিল সেটি আর সম্ভব হচ্ছে না।
তবে কর্মকর্তারা বলছেন, কি ধরনের ক্যামেরা ব্যবহার করা হবে সে বিষয়ে এখন সংশ্লিষ্ট সকলে ঐক্যমত্যে পৌঁছেছেন। কিন্তু টেন্ডার নাকি কোটেশন-এই দুই পদ্ধতির কোনটিতে ক্রয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে তা এখনও চুড়ান্ত হয়নি। সে কারণে সিসিটিভি সংযোজন প্রক্রিয়া আরও বিলম্বিত হতে পারে। তবে ২০১৫ সালে ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচিত বর্তমান পরিষদের মেয়াদের মধ্যেই সবকিছু যাতে সম্পন্ন হয় সে জন্য চেষ্টা চলছে।
১৮৭৬ সালে গঠিত বগুড়া পৌরসভার আয়তন দেড় দশক আগেও মাত্র ১৪ বর্গকিলোমিটার ছিল। ওয়ার্ডের সংখ্যা ছিল ১২টি। তবে ২০০৬ সালে পৌরসভাকে সম্প্রসারিত করতে গিয়ে শহরতলীর কয়েকটি ইউনিয়নের অনেক মহল্লাকে অন্তর্ভূক্ত করা হয়। এতে পৌরসভার আয়তন চারগুণ বেড়ে হয় ৭০ বর্গকিলোমিটার এবং ওয়ার্ডের সংখ্যা আরও ৭টি বেড়ে হয় ২১টি। তবে আয়তন বাড়লেও মূল শহরটি উত্তরে ১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে দক্ষিণে ১২নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
বগুড়া শহরকে সিসিটিভির আওতায় আনার প্রয়োজনীয়তা প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা এর আগে বলেছিলেন, এই শহরে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের পরিধি দিন দিন বাড়ছে। বাণিজ্যিক, ব্যবসায়িক এবং একই সঙ্গে আবাসিক এলাকাগুলোতে ছিনতাইকারী এবং চোরেরা যাতে কোন অপকর্ম করার সাহস দেখাতে না পারে সেজন্য সিসিটিভির প্রয়োজন রয়েছে। তার মতে সিসিটিভি স্থাপন করা গেলে শহরে অপরাধমূলক কর্মকান্ড অনেকাংশে হ্রাস পাবে। সে কারণেই পৌরকর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
পৌরসভার কর্মকর্তারা জানান, মূলত পুলিশ সুপারের অনুরোধেই পুরাতন ১২টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত মূল শহরকে সিসিটিভির আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এজন্য ২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর পৌরসভার সাধারণ সভায় এ সংক্রান্ত প্রস্তাবনার অনুমোদন দেওয়া হয়। তার ১৯ দিনের মাথায় গত ৭ অক্টোবর পৌর পরিষদের রেজুলেশনে সিসিটিভি ক্যামের কেনা এবং সেগুলো স্থাপনের ব্যয়ভার পৌরসভার তহবিল থেকেই মেটানোর কথা বলা হয়। এজন্য প্রতিটি ওয়ার্ডের জন্য ৩ লাখ টাকা করে বরাদ্দও দেওয়া হয়। এরপর ক্যামেরাসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জামগুলো কেনার জন্য গেল বছরের ২১ অক্টোবর টেন্ডার আহবান করা হয়। সেগুলো স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশও করা হয়। কিন্তু টেন্ডার আহবানের ১৪ দিনের মাথায় তা আবার বাতিল করা হয়।
বগুড়া পৌরসভার সহকারি প্রকৌশলী আবু জাফর মোহাম্মদ রেজা জানান, শুরুতে ম্যানুয়েল ক্যামেরা কেনার সিদ্ধান্ত হয়েছিল এবং তার আলোকেই টেন্ডার আহবান করা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে পৌরসভার বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর ম্যানুয়েল ক্যামেরা কেনার বিরোধিতা করেন। তারা ওয়্যারলেস অর্থাৎ তারবিহীন ইন্টারনেট প্রটোকল (আইপি) সুবিধাসম্পন্ন অত্যাধুনিক ক্যামেরা কেনার পরামর্শ দেন। পরে পৌরসভার মেয়র সম্মতি জানালে নতুন প্রযুক্তির ওই ক্যামেরা কেনার সিদ্ধান্ত হয়। যে  কারণে টেন্ডার বাতিল করা হয়েছে। তিনি জানান, প্রতিটি ওয়ার্ডে ৩০টি করে ১২টি ওয়ার্ডে ৩৬০ আইপি ক্যামেরা কেনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর ৩০টি ক্যামেরার জন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে গড়ে ২ লাখ ৯০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এরই মধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নমুনা চাওয়া হয়েছে। তবে ক্যামেরাগুলো টেন্ডার নাকি কোটেশনের মাধ্যমে কেনা হবে সে বিষয়ে এখনও কোন সিদ্ধান্ত হয়নি।
বগুড়া পৌরসভার ১০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আরিফুর রহমান আরিফ জানান, ম্যানুয়েল ক্যামেরার সংযোগ তার কেটে গেলে ক্যামেরাগুলো অকেজো হয়ে পড়বে। সে কারণেই অত্যাধুনিক আইপি ক্যামেরা কেনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘ক্যামেরাগুলোর ফুটেজগুলো সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলের অফিস, পৌরসভা কার্যালয় ও পুলিশ ফাঁড়ি কিংবা থানায়-এই তিনটি স্থান থেকে মনিটর করা হবে।’
জানতে চাইলে বগুড়া পৌরসভার মেয়র অ্যাডভাকেট একেএম মাহবুবর রহমান, যত দ্রুত সম্ভব সিসিটিভি সংযোজনের চেষ্টা তাদের রয়েছে। তিনি বলেন, ‘ বিষয়টি নিয়ে প্রকৌশল বিভাগ কাজ করছে, আশাকরি খুব শিগগির প্রয়োজনীয় সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে শহরজুড়ে সিসি ক্যামেরাগুলো দৃশ্যমান হবে।’