‘হবু’ অভিভাবকদের হাতেই দূষিত নগরী!

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ২০ জানুয়ারী ২০২০ ০৬:৫৮ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৯৩ বার।

পরিচ্ছন্ন ও পরিবেশবান্ধব নগরী গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে শহর চষে বেড়াচ্ছেন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। বলছেন,নির্বাচিত হলে বাসযোগ্য ঢাকা গড়ে তুলবেন। কিন্তু তাদের প্রচারণার পোস্টারে ঝুলছে পরিবেশের ক্ষতিকর উপাদান নিষিদ্ধ পলিথিন। যার কারণে নগরীর পরিবেশের ক্ষতির পাশাপাশি আসন্ন বর্ষায় তীব্র জলাবদ্ধতাও হওয়ার আশঙ্কা করছে সিটি করপোরেশন। খবর বাংলা ট্রিবিউন অনলাইন

পরিবেশবাদীরা বলছেন,‘হবু’ দায়িত্বশীলদের থেকে এমন আচরণ মেনে নেওয়ার মতো নয়। তবে প্রার্থীরা বলছেন,বৃষ্টি ও কুয়াশা থেকে নিজেদের পোস্টারগুলোকে রক্ষা করতেই পলিথিন দিয়ে নিজ নিজ পোস্টার লেমেনেটিং করে নিয়েছেন তারা। প্রত্যেকেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন নির্বাচিত হলে এসব অপসারণ করবেন।

সরেজমিন নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডের অলিগলি থেকে শুরু করে প্রধান প্রধান সড়কগুলোতেও দেখা গেছে,দড়ি দিয়ে প্রার্থীদের লাগানো পোস্টারের ওপরে পাতলা পলিথিন মোড়ানো রয়েছে। এরমধ্যে সরকারদলীয় ও বিরোধী উভয়পক্ষের প্রার্থীদেরই পোস্টার দেখা গেছে।

পরিবেশ আইন অনুযায়ী পলিথিন উৎপাদন,বাজারজাতকরণ ও ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি। পৃথিবীর কোনও দেশে নির্বাচনি প্রচারণায় পলিথিনের এমন ব্যবহার দেখা যায় না। আবার আইনে নিষিদ্ধ হলেও প্রার্থীর পোস্টার থেকে পলিথিন অপসারণের কোনও নোটিশও দিচ্ছেন না নির্বাচনে দায়িত্বরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা। কোনও ভূমিকা দেখা যায়নি ভ্রাম্যমাণ আদালত বা পরিবেশ অধিদফতরেরও।

পোস্টারকে সাময়িক সুরক্ষা দিলেও পলিথিনের ভয়াবহতা টের পাওয়া যায় প্রধানত বর্ষা মৌসুমে। এর যথেচ্ছ ব্যবহারের কারণে বর্ষায় ড্রেন ও নালা ভরাট হয়ে জলাবদ্ধতা বাড়ে। অতীতের নির্বাচনগুলোতেও কোনও কোনও প্রার্থী পলিথিন মোড়ানো লেমিনেটেড পোস্টার লাগালেও তা সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ তেমন একটা দেখা যায়নি। ফলে রোদে বৃষ্টিতে ভিজে একসময় পোস্টারগুলো ছিঁড়ে পড়ে গেলে সবার অলক্ষে পোস্টারটি নষ্ট হলেও পলিথিনটি উড়ে গলি-মহল্লার এ প্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত ঘুরে বেড়ায়। কিছু অংশ টোকাইরা কুড়িয়ে নিলেও বাকিগুলোর স্থান হয় রাস্তা থেকে নর্দমা বা ড্রেনে। আর সেগুলোই নগরীতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টির অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

বাসাবোর বাসিন্দা ও পরিবেশকর্মী নাসরিন আক্তার পুতুল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমাদের ‘হবু’ নগর পিতারা পরিবেশবান্ধব নগর গড়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। কিন্তু তাদের পলিথিনে মোড়ানো পোস্টারগুলো কী পরিবেশবান্ধব? যদি তা না হয় তাহলে কেন তারা ব্যবহার করছেন? আমাদের উচিত হবে ভোট চাইতে এলে তাদের কাছে এর জবাব নেওয়া। যে প্রার্থীরা ঢাকাকে ‘বাসযোগ্য ঢাকা’, ‘ক্লিন ঢাকা’, ‘গ্রিন ঢাকা’সহ বিভিন্ন ভাবে সাজাতে চাচ্ছেন তারাই বা কীভাবে এটি করছেন? এছাড়া নির্বাচনের পরে পলিথিনে মোড়ানো পোস্টারগুলো নিজ দায়িত্বে কতজন অপসারণ করবেন? কতজন এ বিষয়ে সত্যিকারের অঙ্গীকার করেছেন?

জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থী ও সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টির কারণে পোস্টার নষ্ট হয়ে যায়। এর পরেও আমরা বলে দিয়েছি পোস্টারে যাতে কোনও পলিথিনের ব্যবহার করা না হয়। এরপরেও অনেক প্রার্থী লাগিয়ে ফেলেছেন। আমরা বলবো, যাতে নির্বাচনের পর প্রার্থীরা নিজ দায়িত্বে এগুলো সরিয়ে নেন। তাছাড়া সিটি করপোরেশনও তখন কাজ করবে।

তবে পলিথিনে মোড়ানো পোস্টারকে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আচরণবিধি মালার লঙ্ঘন নয় বলে মনে করেন অনেক প্রার্থী এবং নির্বাচন কমিশনও। ২০১০ সালে প্রণীত আচরণবিধিতে এ সম্পর্কে কিছুই বলা নেই।

জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের যুগ্মসচিব ফরহাদ আহাম্মদ খান বলেন,আচরণবিধিতে সাদাকালো পোস্টারের কথা বলা হয়েছে। পোস্টার লেমেনেটিংয়ের বিষয়টি আচরণবিধি লঙ্ঘনের আওতায় পড়ে না। তবে এটা পরিবেশের ক্ষতিকর। প্রার্থীদের ব্যয়ের সঙ্গে এই হিসাবটি যুক্ত হবে।

তবে পরিবেশবাদীরা বলছেন,নির্বাচনি প্রচারে প্রার্থীদের আরও বেশি সচেতন থাকতে হবে। পরিবেশকে হুমকির সম্মুখীন করতে পারে এমন ধরনের কাজ তাদের না করাই ভালো।

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) সাধারণ সম্পাদক এবং পরিবেশ অধিদফতরের সাবেক সচিব প্রকৌশলী আব্দুস সোবহান বলেন,নিষিদ্ধ পলিথিন যারা ব্যবহার করেছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনের কঠোর ব্যবহার হওয়া উচিত। দু’দিন পরেই যারা এই নগরের দায়িত্ব নেবেন তাদের দ্বারা নগরের পরিবেশের এমন ক্ষতি কোনোভাবেই কাম্য নয়। এজন্য আচরণবিধি পরিবর্তনের প্রয়োজন হবে না। কারণ, আইনেই পলিথিন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এখন সেই আইন প্রয়োগ করলেই যথেষ্ট।

তিনি আরও বলেন,প্রার্থীদের মুখে অনেক কথা শুনেছি। নির্বাচিত হলে এই করবেন,সেই করবেন। কিন্তু, নির্বাচিত হওয়ার আগেই ঢাকাকে পলিথিন দিয়ে মুড়িয়ে ফেলেছেন। যারা এধরনের কাজ করেছেন তাদের থেকে নগর সেবা কীভাবে আশা করবো। এই পলিথিনগুলো আগামী বর্ষায় ড্রেনের জন্য বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়াবে। পরিবেশ ধ্বংসের পাশাপাশি নগরীতে জলাবদ্ধতাও বাড়বে।

জানতে চাইলে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম বলেন, প্রার্থীরা যেভাবে পোস্টারে পলিথিন ব্যবহার করছেন এটা আমাদের জন্য একটা বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। কারণ কেউ নির্বাচনের পর এসব সরিয়ে নেন না। এই পলিথিনগুলো ছিঁড়ে ড্রেন ও নালায় গিয়ে পড়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে পানির প্রবাহ বন্ধ কর দেয়। ফলে বর্ষায় জলাবদ্ধতা হয়। অনেক সময় শুষ্কমৌসুমেও ড্রেন ভর্তি হয়ে পানি রাস্তায় উঠে যায়। প্রার্থীরা তাদের পোস্টার না সরালেও নাগরিকদের সুবিধার্থে আমরা নির্বাচনের পরের দিন থেকে পলিথিন অপসারণে মাঠে নামবো।

উল্লেখ্য, ২০০২ সাল থেকে সরকার পলিথিন শপিং ব্যাগের উৎপাদন, আমদানি, বাজারজাতকরণ, বিক্রি, বিক্রির জন্য প্রদর্শন, মজুত, বিতরণ, বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পরিবহন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। এই আইনের অধীনে প্রতিবছর মাঝেমধ্যেই বাজারের বিভিন্ন ছোট দোকানে অভিযান চালিয়ে জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। তবে নির্বাচনে পলিথিন রুখতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের উপস্থিতি কখনোই দেখা যায়নি