১০ বছরে জাতীয় ক্যানসার নিয়ন্ত্রণ কাউন্সিলের কাজ কী?

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৬:০৬ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৭২ বার।

ক্যানসার নিয়ন্ত্রণে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে এক ছাতার নিচে এনে কাজ করার লক্ষ্যে গঠিত হয়েছিল জাতীয় ক্যানসার কাউন্সিল। তবে, ২০০৯ সালে এই‌ কাউন্সিল গঠিত হলেও গত ১০ বছরে দৃশ্যমান কোনও কাজে দেখা যায়নি প্রতিষ্ঠানটিকে।  খবর বাংলা ট্রিবিউন অনলাইন

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০০৫ সালে দেশে প্রথম হাসপাতালভিত্তিক ক্যানসার নিবন্ধন চালু হয়। তবে, এই রোগ সম্পর্কিত সব তথ্যের জন্য কেবল হাসপাতালভিত্তিক নিবন্ধনই যথেষ্ট নয়। তাদের মতে, জাতীয় ক্যানসার নিয়ন্ত্রণ কাউন্সিলকে পুনর্গঠন করা জরুরি।

এদিকে, আজ (৪ ফেব্রুয়ারি) বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক ক্যানসার দিবস। ২০১৯ থেকে ২০২১ পর্যন্ত দিবসটিতে প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘আমি আছি, আমি থাকবো, ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে।’

আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যানসার (আইএআরসি)-র অনুমিত হিসাব থেকে জানা যায়, প্রতি বছর বাংলাদেশে নতুন করে এক লাখ ৫০ হাজার মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হন। আর মারা যান এক লাখ আট হাজার মানুষ।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০০৯ সালে পাঁচ বছর মেয়াদি জাতীয় ক্যানসার নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি প্রণীত হলেও এর অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন কার্যক্রমের সামান্যই বাস্তবায়িত হয়েছে। তারা বলছেন, ক্যানসার নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন তদারকির জন্য গঠিত উচ্চপর্যায়ের ‘জাতীয় ক্যানসার নিয়ন্ত্রণ কাউন্সিল’ প্রায় অকার্যকর। দীর্ঘদিন এই পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। স্বাস্থ্যমন্ত্রী এই পরিষদের সভাপতি আর জাতীয় ক্যানসার ইনস্টিটিউটের পরিচালক এর সম্পাদক। অথচ এর কোনও কার্যক্রমই এখন আর নেই। তারা আরও বলছেন, আমাদের দেশে ক্যানসারের জন্য বরাদ্দ অর্থের সিংহভাগ ব্যয় হয় অবকাঠামো ও অত্যাধুনিক চিকিৎসার সরঞ্জামের পেছনে। ক্যানসার নির্ণয় ও স্ক্রিনিং খাতে বরাদ্দ প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক চিকিৎসক বলেন, ‘দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে রোগনির্ণয় ও চিকিৎসার জন্য এসে রোগী হাসপাতালে ভর্তির সুযোগ না পেলে স্বজনসহ অবর্ণনীয় পরিস্থিতির শিকার হন। আর ক্রমবর্ধমানভাবে যে হারে ক্যানসার রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, তাতে করে একটি মাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে কোনোভাবেই সেটা সামলানো সম্ভব নয়।’
এই চিকিৎসকরা আরও বলেন, আবার ১৯টি সরকারি মেডিক্যাল কলেজের রেডিও থেরাপি বিভাগ চালু থাকলেও এর মধ্যে নয়টিতে বিকিরণ চিকিৎসার যন্ত্র রয়েছে। কিন্তু সব কয়টি মেশিন চালু থাকে খুব কম সময়েই। একইসঙ্গে অপারেশনের জন্য গড়ে একমাস, কেমোথেরাপির জন্য দুই থেকে তিন সপ্তাহ, বিকিরণ চিকিৎসার জন্য চার মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় রোগীদের। যে কারণে ক্যানসার ধরা পড়ার পর এক বছরের মধ্যে শতকরা প্রায় ৭৫ ভাগ হয় মারা যাচ্ছে। নয়তো অর্থনৈতিক বিপর্য়ের শিকার হচ্ছে ।

জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন বলেন, ‘এই সময়ে এসে জাতীয় ক্যানসার নিয়ন্ত্রণ কাউন্সিল পুনর্গঠন ও কার্যকর করা অত্যন্ত জরুরি। একইসঙ্গে জাতীয় ক্যানসার নিয়ন্ত্রণ কৌশলপত্র প্রণয়ন ও হালনাগাদ ও এর আলোকে কর্ম পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।’

এই কাউন্সিল কেন দরকার—জানতে চাইলে ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন বলেন, ‘‘ক্যানসার রোগীর সংখ্যা যেমন অনেক বেশি, চিকিৎসাব্যয় অনেক ব্যয়বহুল, চিকিৎসার যন্ত্রপাতিও অনেক দামি। ফলে ক্যানসার প্রতিরোধে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে একছাতার নিচে এনে কাজ করার জন্যই উচ্চপর্যায়ের এই কাউন্সিল করা হয়েছিল অনেক আগে। কিন্তু যেকোনও কারণেই হোক, গত  ১০ বছর ধরে এই কাউন্সিলের কার্যক্রমে গ্যাপ তৈরি হয়েছে।’

এসব বিষয়ে জানতে চেয়ে জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক ও জাতীয় ক্যানসার নিয়ন্ত্রণ কাউন্সিলের মেম্বার সেক্রেটারি কাজী মোস্তাক হোসেনকে একাধিকবার মোবাইল ফোনে চেষ্টা করেও তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি।