দুই যুবকের সাফল্য

বগুড়ায় ফলেছে গোল্ডেন ক্রাউন ও ব্লাক বস ভ্যারাইটির তরমুজ

শাজাহানপুর(বগুড়া) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২০ ০৬:১৬ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৫৩০ বার।

‘চাকুরি জীবনের পরাধীনতা নয়, চাই স্বাধীন কর্মসংস্থান’ এমন ব্রত নিয়ে পথ চলা শুরু করেছেন রুহুল আমিন (৪০) এবং সালেহ্ আহমেদ (২৭) নামের দুই যুবক। তাদের মতে কৃষি প্রধান বাংলাদেশে কৃষি ভিত্তিক কর্মকান্ডই তাদেরকে পৌঁছে দিবে সফলতা, সুখ্যাতি ও সমৃদ্ধির শীর্ষে। 


তাই বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার পালাহার দক্ষিণপাড়া গ্রামে দু’খন্ড উর্ববর জমি পত্তন নিয়ে তাতে ফল-ফলাদির খামার স্থাপনের উদ্যোগ নেন তারা। জমি প্রস্তুতের সময় সাথী ফসল হিসেবে ৫ বিঘা জমিতে তাইওয়ানের গোল্ডেন ক্রাউন ও ব্লাক বস ভ্যারাইটির তরমুজ চাষ করেন। বীজ বপনের পর মাত্র ৭৫ দিনের মাথায় খামরে ঝুলছে সোনালী রংঙের গোল্ডেন ক্রাউন তরমুজ। ধরেছে ব্লাক বস তরমুজও। সোনালী রঙয়ের তরমুজে পালাহার গ্রামে ফসলের মাঠে দেকা দিয়েছে অপরূপ সৌন্দর্য। বিদেশী জাতের তরমুজ চাষের সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে প্রতিদিন সেখানে ভিড় করছেন কৌতুহলী মানুষ। সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি খামারের মালি নওশের আলীর কাছে শুনছেন তরমুজ চাষের কলা-কৌশল। কেউ কেউ শখ করে তরমুজ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন বাড়িতে।     

 
পালাহার দক্ষিণপাড়া গ্রামের মৃত ইব্রাহিম আলীর পুত্র রুহুল আমিন উচ্চ মাধ্যমিক পাশের পর সিঙ্গাপুরে ৭ বছর প্রবাস জীবন কাটান। এরপর দেশে ফিলে পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ফসলি জমি পত্তন দিয়েই চলছিল তার সংসার। অপরদিকে বগুড়া শহরের কলোনী এলাকার বাসিন্দা গোলাম আযম হেলালীর পুত্র সালেহ্ আহমেদ বর্তমানে একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে বি.এস-সি ইঞ্জিনিয়ারিং (টেক্সটাইল) শেষ সেমিষ্টারে অধ্যায়নরত। এই দু’জন বর্তমানে কলোনী এলাকায় বসবাস করছেন। লেখাপড়া শেষে চাকুরি মিলবে এমন নিশ্চয়তা না থাকা এবং চাকুরি মিললেও তা হবে পরাধীনতার শিকলে বাঁধা জীবন। তাই লেখাপড়া শেষে স্বাধীন কর্মপথ নিয়ে ভাবছিলেন সালেহ্ আহমেদ। এজন্য তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, বিভিন্ন ওয়েব সাইট এবং বিভিন্ন ফার্মে গিয়ে উপলক্ষ আত্নকর্মসংস্থান মূলক কর্মপথের সন্ধান করছিলেন তিনি। একপর্যায়ে কৃষি ভিত্তিক খামার স্থাপনের মাধ্যমে স্বাধীন কর্মজীবন শুরুর সিদ্ধান্ত নেন। বিষয়টি রুহুল আমিনের সাথে শেয়ার করেন এবং দু’জনের মতের মিল হওয়ায় তারা ফল-ফলাদির খামার স্থাপনের পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা মতে ২ খন্ডে ৫ বিঘা জমি পত্তন নিয়ে তাতে আম, কমলা, মাল্টা, শরীফা, পেয়ারা, লেবু চাষের জন্য মাদা তৈরি করেন। কিন্তু মাদা প্রস্তুত হতে যে সময় লাগবে তাতে স্বল্প সময়ের কোন ফসল ফলানো যায় কিনা এটা নিয়ে ভাবতে গিয়ে তারা তাইওয়ানের গোল্ডেন ক্রাউন ও ব্লক বস ভ্যারাইটির তরমুজ চাষ করেন। সাথী ফসল হিসেব লাগানো এই তরমুজের বাম্পার ফলনে ইতোমধ্যেই জেলা ব্যাপি ব্যাপক সাড়া পড়েছে। তরমুজের খামার দেখতে প্রতিদিন কৌতুহলী মানুষ ভিড় করছেন। 


শাজাহানপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুরে আলম জানিয়েছেন, গোল্ডেন ক্রাউন এবং ব্লাক বস ভ্যারাইটির তরমুজ অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সম্পন্ন একটি সুস্বাদু ফল। সাধারণত উঁচু জমি এবং দো-আঁশ মাটি এই তরমুজ চাষের জন্য উপযুক্ত। আমাদের দেশে দক্ষিণাঞ্চলে এই তরমুজের চাষ শুরু হয়েছে। কিন্তু অন্য জেলা থেকে আমাদানী হওয়ায় পরিবহণ খরচের কারণে দাম বেশি পড়ে যায়। বগুড়াতে চাষ হলে এ অঞ্চলের মানুষ সাশ্রয়ী মূল্যে এই তরমুজ কিনতে পারবেন। একই সাথে বাজারে চাহিদা থাকায় এই তরমুজ চাষ করে চাষীরাও লাভবান হবেন।