শুক্রবার থেকে বেচা-কেনা শুরু হবে

করোনার আক্রমণে বন্ধ বগুড়ার চাষী বাজারঃ চারমাথায় স্থানান্তর হচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ২৮ মে ২০২০ ১০:১১ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৮৩৩ বার।

একে একে ২৫ শ্রমিক করোনায় আক্রান্ত হয়ে যাওয়ার কারণে বগুড়ার মাছের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার ‘চাষী বাজার’ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ঈদের আগের দিন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মাছের আমদানি কমে যাওয়ায় বিকল্প হিসেবে ‘চাষী বাজার’-এর আড়ৎগুলোকে শহরের চারমাথা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল সংলগ্ন এলাকায় স্থানান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ২৯ মে শুক্রবার থেকে সেখানে মাছের পাইকারি কেনা-বেচা শুরু হওয়ার কথা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, চাষী বাজারের ইজারাদারের পক্ষে বগুড়া মোটর মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহাম্মদের কাছে বিকল্প মাছের বাজার বসানোর প্রস্তাব করলে জনস্বার্থে তাতে তিনি সম্মতি দেন। চাষী বাজারের ইজারাদারের ব্যবস্থাপক কানাইলাল জয় সোয়াল ময়না জানান, বাস টার্মিনালের পূর্ব দিকে জোৎস্না ফিলিং স্টেশনের উত্তর দিকে সড়ক ও জনপথের (সওজ) জায়গায় বাজারটি বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘কাল (শুক্রবার) থেকে সেখানে মাছের পাশাপাশি সেখানে কলারও পাইকারি কেনা- বেচার সুযোগ দেওয়া হবে।’
ওয়ান ইলেভনের তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সময় বগুড়ায় ‘চাষী বাজার’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। ফসল এবং মাছ চাষে সম্পৃক্ত চাষীরা যাতে ন্যায্যমূল্যে সরাসরি বিক্রেতাদের কাছে তাদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে পরেন সেজন্য শহরের চেলোপাড়া এলাকায় রেলওয়ের জমিতে ওই বাজার লাগানো হয়। তৎকালীন সেনা প্রধান মঈন ইউ আহম্মেদ বাজারটি উদ্বোধন করছিলেন। শুরুতে সেখানে সব ধরনের শাক-সবজি ও মাছ বেচা-কেনা হতো। তবে পরবর্তীতে সবজির দোকানিরা সেখানে বসতে অনীহা দেখান। ফলে সেখানে শুধু মাছই কেনা-বেচা চলতে থাকে। এক পর্যায়ে মাছের আড়ৎ হিসেবে প্রতিষ্ঠাও পায়। 
তবে আঙ্গিক পরিবর্তিত হলেও নামটি ‘চাষী বাজার’ই রয়ে যায়। পৌরসভার নিয়ন্ত্রণাধীন ওই বাজার ২০১৫ সালে ইজারা নেতা সাবেক যুবলীগ নেতা বর্তমানে ট্রাক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন সরকার। তবে তার পক্ষ থেকে ইজারা ব্যবস্থাপনার দায়িত্বটি ‘ময়না’ হোটেলের অন্যতম মালিক কানাইলাল জয় সোয়াল ময়নাকে দেওয়া হয়। ‘চাষী বাজার’-এ নওগাঁ ও রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলা এবং বগুড়ার মৎস চাষীরা তাদের পুকুরের চাষ করা মাছ পাইকারি বিক্রি করে থাকেন। ওই বাজারে ভোর ৫টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত পাইকারি কেনা-বেচা চলে। প্রতিদিন ২০টি আড়তে গড়ে অন্তত ৩০ ট্রাক মাছ কেনা-বেচা হয়। আড়ৎগুলোতে শতাধিক শ্রমিক কর্মরত। 
গত ২১ মে ওই বাজারে কর্মরত এক ব্যক্তি প্রথম করোনায় আক্রান্ত হন। তার দু’দিন পর ২৩ মে আরও ১২জন আক্রান্ত হন। এতে জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ফলে ওইদিন অর্থাৎ ঈদের আগের দিনই প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাজারটি লকডাউন বা বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু তার পরেও গত ২৭ মে নতুন করে চাষী বাজারে কর্মরত ছিলেন এমন আরও ১২জনের শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি মেলে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাষী বাজারের আড়ৎগুলো বন্ধ থাকায় শহরের বাজারগুলোতে মাছ বিশেষত ছোট মাছের আদমদানি কমেছে। তাছাড়া দামও বেড়েছে। বগুড়া শহরের ফতেহ্ আলী বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, পার্শ্ববর্তী চাষী বাজারের আড়ৎগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে তাদেরকে এখন জেলার মহাস্থান, মোকামতলা ও মাঝিড়া থেকে মাছ আনতে হচ্ছে। এতে পরিবহন ব্যয় বেশি হচ্ছে। যে কারণে দামও বাড়িয়ে দিতে হয়েছে।
বগুড়া মোটর মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম জানান, চাষী বাজার বন্ধ হয়ে যাওযায় অন্যান্য বাজারের মত তার নিজ এলাকা গোদাড়পাড়া বাজারে মাছের আমদানি অস্বাভাবিকভাবে কমেছে। তিনি বলেন, ‘ওই বাজারের মাছ ব্যবসায়ী এবং ক্রেতারা বাস টার্মিনাল এলাকায় অস্থায়ীভাবে মাছের আড়ৎ দেওয়া যায় কি’না সে ব্যাপারে আমাকে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলার অনুরোধ জানান। যেহেতু এলাকাটি বগুড়া-ঢাকা মহাসড়ক সংলগ্ন সেজন্য আমি তাদের ওই প্রস্তাবের কথাটি জেলা প্রশাসককে অবহিত করি। যতদিন চাষী বাজার বন্ধ থাকবে ততদিনই এটা চালানো যেতে পারে।’
বগুড়ায় কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় মাছের বিকল্প আড়ৎ খোলার পরিকল্পনার কথা জানতে চাইলে বগুড়ার জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহাম্মদ বলেন, ‘হ্যা আমাকে বলা হয়েছে। আমি বলেছি যদি জায়গা থাকে তাহলে করা যেতে পারে।’