করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন

বগুড়া প্রেসক্লাবের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মোজাম্মেল হকের ইন্তেকাল

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ০৪ জুন ২০২০ ০৮:২৬ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৪৪৩ বার।

প্রবীণ সাংবাদিক, বগুড়া প্রেসক্লাবের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক মোজাম্মেল হক করোনায় আক্রান্ত হয়ে বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকার একটি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। ৭৫ বছর বয়সী মোজাম্মেল হক বগুড়া থেকে প্রকাশিত ‘দৈনিক উত্তরকোণ’ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী ও এক কন্যা রেখে গেছেন। শুক্রবার বগুড়ার ভাইপাগলা মাজার গোরস্থানে তাঁকে দাফনের কথা রয়েছে।
‘দৈনিক উত্তরকোণ’-এর চিত্র সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম জানান, মোজাম্মেল হক ক্যান্সারে ভূগছিলেন। প্রায় এক বছর আগে চিকিৎসার জন্য তাঁকে ঢাকায় নেওয়া হয়। এক সপ্তাহ আগে নুমনা পরীক্ষায় তার করোনা পজিটিভ আসলে তাকে ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
১৯৪৫ সালের ১ জানুয়ারি বগুড়ায় জন্ম নেওয়া মোজাম্মেল হক ষাটের দশকে সাংবাদিকতা দিয়ে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। পাশাপাশি তিনি শিক্ষকতাও করেছেন। তার বাবা মরহুম সিরাজুল হক তালুকদার ১৯৭৯ সালে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
ছোট ভাই বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হেলালুজ্জামান তালুকদার লালুও ওই একই দলের মনোনয়নে একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। 

স্ত্রী ফজিলাতুন্নেছা জানান, মোজাম্মেল হক ১৯৬৭ সালে তৎকালীন বগুড়ার নাইট কলেজে প্রথম শিক্ষকতা শুরু করেন। এরপর শাহ্ সুলতান কলেজে যোগ দেন। সেখানে কর্মরত থাকা অবস্থায় ১৯৮৪ সালে কলেজটি সরকারি হয়। সরকারি শাহ্ সুলতান কলেজে দীর্ঘদিন শিক্ষকতার পর তাকে পদোন্নাতি দিয়ে সরকারি সান্তাহার কলেজে বদলী করা হয়। এরপর ২০০১ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন।
সাংবাদিকতায় মোজাম্মেল হকের সহকর্মী 
‘দৈনিক করতোয়া‘র উপদেষ্টা সম্পাদক ওয়াসিকুর রহমান বেচান জানান, মোজাম্মেল হক বগুড়া প্রেসক্লাবের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। ১৯৭০ সালে তিনি সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৮১ সালে সভাপতি নির্বাচিত হন। মোজাম্মেল হক ঢাকা থেকে প্রকাশিত ‘দৈনিক আজাদ’, ‘পূর্বদেশ’, রাজশাহী থেকে প্রকাশিত ‘দৈনিক বার্তা’য় বগুড়া সংবাদদাতা হিসেবে কাজ করেছেন। এছাড়া বগুড়া থেকে প্রকাশিত ‘দৈনিক করতোয়া’,‘দৈনিক উত্তরাঞ্চল’ ও ‘ দৈনিক মুক্তবার্তা’ পত্রিকায় তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পদে কর্মরত ছিলেন। পাশাপাশি তিনি ‘বাংলাদেশ বেতার’-এ দীর্ঘদিন বগুড়া সংবাদদাতা হিসেবে যুক্ত ছিলেন। এরপর ২০০২ সালের ১৬ আগস্ট মোজাম্মেল হকের সম্পাদনায় ‘উত্তরকোণ’ নামে একটি দৈনিকের আত্মপ্রকাশ ঘটে। শারীরিক অসুস্থতার কারণে সম্প্রতি তিনি ওই পত্রিকার উপদেষ্টা সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।‘

দৈনিক উত্তরকোণ-এর প্রতিষ্ঠাতাকালীন বার্তা সম্পাদক মতিউল ইসলাম সাদী জানান, মোজাম্মেল হক তালুদার স্কুল জীবনেই লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত হন। সাংবাদিকতা ও শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি সমাজসেবামূলক নানা কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন। তিনি বগুড়া ডায়াবেটিক সমিতি, পরিবার পকিল্পনা সমিতি (এফপিএবি) ও রোটারি ক্লাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
অধ্যাপক মোজাম্মেল হকের মৃত্যুতে বগুড়া প্রেসক্লাবের সভাপতি মাহমুদুল আলম নয়ন ও সাধারণ সম্পাদক আরিফ রেহমান শোক প্রকাশ করেছেন। মাহমুদুল আলম নয়ন তাঁর শোক বার্তায় বলেন, ১৯৬০ সালে যাদের উদ্যোগে বগুড়া প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তাদের মধ্যে একমাত্র অধ্যাপক মোজাম্মেল হকই জীবিত ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে বগুড়া প্রেসক্লাব ও সাংবাদিক সমাজ একজন অভিভাবক হারালেন। আমরা তাঁর আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। প্রবীণ সাংবাদিক অধ্যাপক মোজাম্মেল হকের মৃত্যুতে পুণ্ড্রকথা পরিবারের পক্ষ থেকেও শোক জানানো হয়েছে।